ফলাফলশূন্য খেলায় নেমেছেন রাজনীতিকরা – রেহমান সোবহান

Published in Manabzamin on Tuesday, 24 February 2015.

ফলাফলশূন্য খেলায় নেমেছেন রাজনীতিকরা – রেহমান সোবহান

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা সাম্প্রতিক অবরোধ আর হরতাল চলাকালে অগ্নিসংযোগ, হামলার শিকার ব্যক্তিরা যেভাবে ভয়াবহ জখম হয়েছেন আর মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে তা ন্যায়সঙ্গতভাবেই উদ্বেগ ও ক্ষোভের উদ্রেক করেছে। ক্ষোভ আর উদ্বেগ শুধু ক্ষমতাসীন দলের মধ্য থেকে নয় বরং তা এসেছে পুরো দেশ থেকে।

হতাহতের শিকার বেশির ভাগই নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ। বাস্তবতার কারণে তাদের বাধ্য হয়েই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে হয়েছে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী ও শিশুরা, কেননা জ্বলন্ত গাড়ি থেকে দ্রুত বের হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পেছনে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিরাজমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কোন সম্পৃক্ততা নেই এমন বেসামরিক মানুষকে ব্যাপক হারে টার্গেট করার যে কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল অমানবিক, অনৈতিক, এবং রাজনৈতিকভাবে অফলপ্রসূ।

এমন কৌশল একটি দলের প্রতি জন-অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, যারা কিনা জনগণের কিছুটা সহানুভূতি পেতে পারতো। কেননা এখন পর্যন্ত সরকারি দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে তারাই। রাজনৈতিক একটি দল যখন এমন কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল, যাতে তাদের ওপর দমন পীড়নকারী নানা এজেন্ট প্রধানত আক্রান্ত হওয়ার বাইরে থেকে যায় আর অসহায় বেসামরিক মানুষদের টার্গেট হতে হয়, তাতে রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতা প্রতিফলিত হয়। একইভাবে প্রতিফলিত হয় সাংগঠনিক দুর্বলতা।

বিরাজমান সহিংস পরিস্থিতি আর স্থিতিহীনতার মধ্যে দোষারোপ করার খেলার যথার্থতা সামান্যই। আমাদের গভীরভাবে বিভক্ত রাজনৈতিক সমাজে উভয় পক্ষে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর কর্মকাণ্ড আর উদ্দেশ্যকে সম্ভাব্য সব থেকে মন্দ রূপ দেয়।

তাদের নানা মন্তব্য আর কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলকে বিরোধী হিসেবে সক্রিয় থাকতে কোন প্রকার রাজনৈতিক সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে এবং এমনকি বলপ্রয়োগ করে গুঁড়িয়ে দিতে চায়। একই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা পোষণ করেন তা নয় বরং তাদের বুদ্ধিজীবী সহযাত্রীরাও অধিকরতর বল প্রয়োগের অনড় দাবিতে রাজনীতিবিদদের তুলনায় আগ্রাসী প্রতিভাত হন।

পক্ষান্তরে, প্রতিপক্ষকে উৎখাত করা তো দূরে থাক মোকাবিলার করতে সমর্থ এমনটা সামান্যই প্রদর্শন করতে পেরেছে বিরোধী দল। অসর্মথতার এ বোধ বিরোধীদেরকে বিক্ষিপ্ত এবং বাছবিচারহীন সহিংস কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করতে প্ররোচিত করেছে; যা সরকারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করা বা বিরোধীদের রাজনৈতিক লক্ষ্যের কাছাকাছি আনার তুলনায় নিরপরাধ প্রাণের বলিতে পর্যবসিত হচ্ছে।

অগণতান্ত্রিক শক্তির হস্তক্ষেপে বাধ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি ব্যতীত এমন চর্চা থেকে বিএনপি কি অর্জনের আশা করছে তা স্পষ্ট নয়। যেমনটা হয়েছিল ১/১১ এ। যেহেতু এমন একটি উদ্যোগ অফলপ্রসূ বলে প্রতীয়মান হয়েছে ২০১৪’র জানুয়ারি নির্বাচনের সময় পর্যন্ত; এটা পরিষ্কার নয়, কেন আজ এতে অপেক্ষাকৃত ইতিবাচক ফল আসতে পারে। এমন সম্ভাবনাবিহীন পরিবেশের মধ্যে কেউ কি গঠনমূলক সুপারিশের প্রস্তাব করার প্রত্যাশা করতে পারেন, যাতে কোন পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেবে? এমন সম্ভাবনা অতীতে একবার এসেছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে। সেবার অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইস্যুতে একই রকম মুখোমুখি অবস্থান জাতীয় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। ১৯৯৫ সালে এখন বিস্মৃত ৫ জনের একটি দলে’র একজন সদস্য হিসেবে দুই নেত্রীর মধ্যে রাজনৈতিক মধ্যস্থতা করার উদ্যোগে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। এফবিসিসিআই ও এমসিসিআইসহ নাগরিক সমাজের বড় একটি জোটের উদ্যোগে ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। প্রকৃত জি-৫ এর চার জন- ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ, প্রধান বিচারপতি কামালুদ্দিন হুসেইন, রাষ্ট্রদূত ফখরুদ্দিন আহমেদ ও সিনিয়র সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। হতাশার ওই উদ্যোগের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি আমি।

জি-৫ এর উদ্যোগে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল তার পেছনে যে বিষয়টি কাজ করেছিল তাহলো উভয় নেত্রী তখন কোন প্রকার সমঝোতার বিষয়ে বিরূপ ছিলেন না। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের সম্পূর্ণ বিপরীত, তখন জি-৫কে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তারা দুজনই আমাদেরকে কয়েক দফা ধৈর্যের সহিত লম্বা শুনানি দিয়েছিলেন। আমাদের উদ্যোগ সফলতার কাছাকাছি এসেছিল কিন্তু একটি মাত্র ইস্যুতে তা থমকে যায়। বেগম খালেদা জিয়ার জোর দাবি ছিল যে, উভয় দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে হবে তিনি ব্যতীত বিএনপি’র কোন এমপিকে। সে সময় যেটা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। শেখ হাসিনা তার দাবিতে অনড় ছিলেন যে, সরকারপ্রধানকে হতে হবে নির্দলীয় কোন ব্যক্তি যাকে এ উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে সংসদে নির্বাচিত করা যেতে পারে। খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন, তার অবস্থানের ভিত্তি ছিল সংবিধান রক্ষার প্রয়োজনীয়তা। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা যুক্তি প্রদর্শন করেছিলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দ্বারা নির্বাচন পরিচালিত হওয়ার স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে এবং করা উচিত। আজ, দুই নেত্রী তাদের আসন এবং যুক্তি উভয়ই অদল-বদল করেছেন। জি-৫ এর মতো বা উন্নততর উদ্যোগ গ্রহণে নাগরিক সমাজের প্রচেষ্টাগুলো সাংঘাতিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনার মুখ্য চরিত্রদের মধ্যকার ব্যবধান যে প্রায় সেতুবন্ধনের অযোগ্য গহ্বরে বিস্তৃত হয়েছে সেই বোধের দ্বারা। দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপে উৎসাহিত করতে কতিপয় বিশিষ্ট নাগরিকদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। বরং, নাগরিকদের উদ্যোগ বিদ্যমান বিষাক্ত পরিবেশের মধ্য থেকে সাহসিকতাপূর্ণ এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপের প্রতীক। এটা এখন পর্যন্ত চরম লজ্জাজনক ও অরুচিকর কটূক্তিমূলক মন্তব্য উসকে দিয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন জোটের মাথা-মোটা উপাদানদের কাছ থেকে সেগুলো এসেছে তা নয়। এমনকি সরকারের কতিপয় অধিকতর পরিপক্ব সদস্যদের কাছ থেকেও এমন মন্তব্য এসেছে, যারা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ভাল’ আর ‘মন্দের’ মধ্যে সংলাপের কোন সুযোগ নেই।

সম্ভবত তাদের কাছে ১৯৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধু আর ইয়াহিয়ার মধ্যকার সংলাপের কথা বিস্মৃত হয়েছে। অথবা, ইয়াসির আরাফাত আর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার সংলাপ বা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কিসিঞ্জার এবং লি যাক থো’র সংলাপ। অথবা, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান তালেবানদের মধ্যকার সংলাপ যা সংযুক্ত আরব আমিরাতে গোপনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিএনপির সামনে যেসব পথ

বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলা আর অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান ক্ষতির আলোকে গভীরতর সঙ্কটের ঘূর্ণাবর্তে নিম্নমুখী অধঃপতন প্রতিহত করতে কি করা যেতে পারে? দুই মুখ্য চরিত্রের কাছে কিসব পথ খোলা আছে সেগুলো পর্যালোচনা করা যাক।

গত নয় বছর ধরে, সরকারি দমন-পীড়নের মুখে ছিল বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির জন্য রাজনৈতিক সুযোগ এতটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে, যেখানে তারা বাংলাদেশের রাজধানীতে জনসমাবেশও করতে পারছে না। দলটির নেতাদের চলাচলের স্বাধীনতা নিয়মিত বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আর তাদের সিনিয়ার নেতাদের নিয়মিত কারারুদ্ধ করা হয়েছে।

এমন একটি পরিস্থিতি বিরোধীদের রাজনৈতিক সুযোগকে মারাত্মকভাবে সীমাবদ্ধ করে দেয় এবং এটা গণতন্ত্রের সার্বিক মূল্যবোধের পরিপন্থি। আইন প্রয়োগকারী সংখ্যাগুলোর ম্যাজিক্যাল ক্ষমতার আপাত প্রয়োগ তাদেরকে অসুবিধাজনক বিরোধী নেতাদের অদৃশ্য করে ফেলার সুযোগ করে দেয়; জীবন থেকে না হলেও অন্তত জনগণের দৃষ্টি থেকে। আমরা যে আইনের শাসনের মধ্যে বাস করি এটা তার সামান্যই প্রমাণ বহন করে।

এমন বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে বিরোধীদল কোনভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। যখন তাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল, তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভাগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জিততে সক্ষম হয়।

তাদের রাজনৈতিক সক্ষমতার এই বোধ প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে প্রদর্শিত হয়। এটা অধিকতর মানবকল্যাণ ভিত্তিক রাজনৈতিক কৌশল পরিকল্পনা প্রণয়নে বিএনপিকে উৎসাহিত করা উচিত ছিল। যৌক্তিকভাবে তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে সম্ভাব্য সকল পর্যায়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয়া।

এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশজুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ তাদেরকে করে দিতো। একইসঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগও আকর্ষণ করতে পারতো। যার দ্বারা নিজেদের রাজনৈতিক সামর্থ্য ও বার্তা প্রদর্শন করতে পারতো।

জানুয়ারি নির্বাচনের আগ দিয়ে বিরোধীদের কাছে প্রস্তাবিত সকল সুযোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল। এর মধ্যে ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হতো এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। তবুও, জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির নিজেদের সাংগঠনিক সীমবদ্ধতার আলোকে, এটা নেয়ার মতো একটা ঝুঁকি ছিল।

এমন একটি সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যর্থতা থেকে বিএনপির রাজনৈতিক ভুল প্রতিফলিত হয়। আর বিশেষ করে ঢাকা ও লন্ডনে ছড়িয়ে পড়া দলটির দ্বৈত নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

বিএনপির এ ভুল হিসাব যে বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে এসেছে তাহলো- তাদের সাংগঠনিক ও রাজপথে লড়াইয়ের ক্ষমতার অতিমূল্যায়ন এবং রাজপথের যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সদিচ্ছা ও সামর্থ্যকে খাটো করে দেখা।

খালেদা জিয়ার সন্তান আরাফাতের করুণ ও অকাল মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। ওই ঘটনা দ্বৈত নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা বিএনপির রাজনৈতিক শূন্যতার সাম্প্রতিক প্রকাশ চরম ব্যর্থতা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বন্ধ দরজার সামনে অপেক্ষমাণ রাখাটা শুধু সাংস্কৃতিক চৈতন্যহীনতার নয় একইসঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিফলন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতৃত্বের বিশৃঙ্খলা উঠে এসেছে যারা বন্ধ দরজার পেছনে দ্বিধান্বিত ছিলেন। এদিকে জনগণের উপহাসের শিকার হয়েছে দল।

বর্তমান রাজপথের সহিংসতা ৬ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে আওয়ামী লীগের স্থিতিশীলতা ঝুঁকিতে ফেলবে তেমন কোন ইঙ্গিত নেই বললেই চলে। সহিংসতা ও অগ্নিকাণ্ডের কারণে দেশজুড়ে নিরপরাধ মানুষ হুমকিতে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগকারীদের পুরোপুরি ছত্রভঙ্গ বা দমন করতে পারছে কি না সে বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্যপ্রমাণ নেই। এর ফলে দিনের পর দিন সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে আছে সাধারণ মানুষ। নিরুপায় হয়ে এসব মানুষ শান্তি প্রত্যাশা করছে। রাজনৈতিক এই চলমান লড়াইকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের জন্য আরও ভয়ানক শত্রুদের উৎসাহিত করতে পারে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট। এর মাধ্যমে তারা তাদের অশুভ লক্ষ্য অর্জনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। রাজনীতিতে এমন কোন ঘটনা ঘটলে তা শুধু সঙ্কটকে স্থায়ী রূপই দেবে না, একই সঙ্গে তা আরও চরম আকার ধারণ করলে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার চিন্তা করতে পারে। আমাদের শাসকগোষ্ঠী বা বিরোধী দল- কেউই নিশ্চিত নন যে, এমন হস্তক্ষেপ কোথায় গিয়ে শেষ হবে। রাজপথের সহিংসতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কমই সফল করছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখার জন্য পরামর্শ দেয়াই ভাল হবে। যাতে সঙ্কট সমাধানের জন্য একটি সংলাপের পথ তৈরি হয়। তার পরও শাসকরা যদি কোন সাড়া না দেয়, তখন বিএনপি তাদের আন্দোলন আবার শুরু করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের সেই আন্দোলন হওয়া উচিত আরও শান্তিপূর্ণ উপায়ে, যা থেকে তারা জনগণের সমর্থন না পেলেও যাতে সহানুভূতি পেতে পারেন।

আওয়ামী লীগের সামনে যেসব পথ

বিরোধীদের পক্ষ থেকে শান্তি খোঁজার জন্য যে আহ্বান তাতে সরকার কতটুকু পুনর্জাগরণে সাড়া দেবে অথবা এতে তাদের রাজপথের চ্যালেঞ্জকে ম্লান হয়ে যাওয়া হিসেবে দেখা হবে কি না তা পরিষ্কার নয়। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন জোট তাদের কথা বলে দিয়েছে যে, তারা আইনশৃঙ্খলা সমস্যা চমৎকারভাবে মোকাবিলা করছে, যেখানে সহিংসতা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং বিরোধীদের নিশ্চল করে দেয়া যাবে। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারিতে। সেই রাজনৈতিক সমস্যার উৎস থেকে শাসকগোষ্ঠী দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে বলেই মনে হয়। গত এক বছর ধরে শাসকরা নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখেছে। ওই নির্বাচনের আগে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, জানুয়ারির ওই নির্বাচন ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠার জন্য তারা অধিক অংশগ্রহণমূলক মধ্যবর্তী একটি নির্বাচন দেবে। ১০ম জাতীয় সংসদের ওই নির্বাচন ছিল ত্রুটিপূর্ণ, এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সবাই পূর্ণাঙ্গভাবে ওয়াকিবহাল। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ফলে, বর্তমান ১০ম সংসদের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদের বেশির ভাগের পক্ষে একটি ভোটও পড়েনি। বাস্তবে যদি আমরা ধরে নিই নির্বাচন কমিশন বাকি ১৪৭টি আসনে ভোটের যে হিসাব দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে ভোট পড়েছে শতকরা ৪০ ভাগ। কার্যত বর্তমান সংসদ মোট ভোটের শতকরা ১৮ ভাগ ভোটারের সমর্থন আদায় করেছে। কিন্তু ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তাতে ভোট পড়েছিল শতকরা ৮৪ ভাগ। আওয়ামী লীগ ৬৫ বছর বয়সী একটি ঐতিহাসিক দল। প্রথমে পাকিস্তান পরে ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারাই বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক ম্যান্ডেট ছাড়া এক বছরের বেশি রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতা ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগের জন্য এটি একটি অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উৎসাহমূলক নেতৃত্বের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই চলছিল তা দৃশ্যত দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। তা থেকে রক্তপাতের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে তুঙ্গে তুলে দেয়। এসব আন্দোলনের সময়, বিভিন্ন রকমের কর্মকর্তা- নাশকতাকারী, দুর্বৃত্ত চক্র, সন্ত্রাসী ও বিশ্বাসঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিন্দা জানিয়েছিল। ৬ দফা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে মুখের ভাষাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিলেন আইয়ুব খান। বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর জন্য অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইয়াহিয়া খান। জিয়া ও এরশাদ, এমনকি খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তারাও ওই একই রকম আগ্রাসী ভাষা ব্যবহার করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের বিরুদ্ধে এসব ভাষা ও রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন ব্যবহার করা হয়েছিল। যে সঙ্কটের মূলে রয়েছে রাজনীতি তা সমাধানের জন্য আওয়ামী লীগ যদি সেই ব্যর্থ অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে তাদের উচিত তাদের নিজস্ব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া। ক্ষমতাসীন জোট এখন নির্বাচনে তাদের ম্যান্ডেটের বৈধতার কাছে আশ্রয় নিতে পারে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিএনপির নির্বুদ্ধিতার বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। বিএনপি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা যে ব্যর্থ হয়েছে তা এরই মধ্যে আমরা বুঝতে পেরেছি। পছন্দ-অপছন্দের বাইরে এসে এতে এখনও দেখা যায় কার্যত ২০১৪ সালের নির্বাচনে শতকরা ৮২ ভাগ মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে নেতৃত্ব দানকারী একটি দল। তাদের ঐতিহাসিক রীতির সঙ্গে এ ঘটনা মিলানো যায় না। পরিষ্কার নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছাড়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার তাদের যে প্রবণতা তা তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য তাদের যে অসংখ্য নেতাকর্মী ও তাদের মহান নেতা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের প্রতি অবমাননা করা হয়। দিন শেষে বলা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের অবাধ ম্যান্ডেট ছাড়া কোন শাসকগোষ্ঠীর সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আসে তা তারা রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে, বিভিন্ন সময়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত দমিয়ে রাখা যায় না। কোন শাসকগোষ্ঠী তার ক্ষমতার মেয়াদে এমন দমনপীড়নমূলক শাসন চালালে তা শুধু ওই শাসকগোষ্ঠীর চরিত্রের পরিবর্তনই করে না, পাশাপাশি তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে বাধ্য হয়।

আওয়ামী লীগ যদি তার নিজেকে পিছলে পড়ে যেতে পারে এমন একটি পাহাড়ের ঢালে নিয়ে যায়, যা তাদের উত্তরাধিকারের রাজনীতি থেকে দূরে, তখন গণতন্ত্র নিজে বিপন্ন হবে। তাতে শাসকগোষ্ঠীর টিকে থাকা ক্রমবর্ধমান হারে নির্ভর করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দমনমূলক শক্তির ওপর। এমন নির্ভরতা প্রচলিত ধারায় ওইসব শক্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে। যে রাজনৈতিক শক্তিগুলো তাদের ইতিহাসজুড়ে গণতন্ত্রের বাইরের ক্ষয়িষ্ণু শক্তিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছে, তারাই ওইসব শক্তির কাছে শেষতক জিম্মি হয়ে পড়ে। এ প্রক্রিয়ার ফল হিসেবে ফিরতে পারে অগণতান্ত্রিক শাসন। এর ফলে অগণতান্ত্রিক শাসনে প্রত্যাবর্তন করতে পারে দেশ। এ ধরনের শাসনের মূল চ্যালেঞ্জ হলো- অন্য অগণতান্তিক শক্তির রয়েছে সহিংসতা প্রতিরোধ ও ছড়িয়ে দেয়া, দু’ধরনের ক্ষমতাই।

জাতির জনকের কন্যা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে শুধু বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা করতে হবে তা-ই নয়, একই সঙ্গে যেখানে তিনি বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে দেখতে চান সেখান নিয়ে যাওয়ার এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দিন বদল নিয়ে তার যে এজেন্ডা তা বেশ অনুধাবনযোগ্য । এতে কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতা দিয়েছে; তা কঠোর শ্রমজীবী, গতিশীল উদ্যোক্তা শ্রেণী, বিদেশে অভিবাসী পাঠানোর আমাদের যে রোমাঞ্চ রয়েছে, অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকা বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে দেশে দারিদ্র্য হ্রাস ও মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোতে উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানে এরই মধ্যে অগ্রগতি হয়েছে। গত ছয় বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দা মোকাবিলা করছে তখন আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ও বৈদেশিক আয়ের পরিমাণ উৎসাহব্যঞ্জক। প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের গণহত্যায় সহায়তাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ উদ্যোগে তিনি পেয়েছেন জনগণের সমর্থন। এ অবস্থায়, তার পরিবর্তনের এজেন্ডা বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্জিত রাজনৈতিক পুঁজি ব্যবহার ও অধিক ফলপ্রসূ মানসম্মত নেতৃত্ব প্রদর্শন করা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন অধিক শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও প্রত্যাশিত রাজনৈতিক পরিবেশ, যা জাতিকে সহিংসতার অন্ধকার সুড়ঙ্গ, যেখানে তারা আটকরা পড়েছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে। আরও একবার উত্তেজনা (টেনশন) ছাড়া ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। রাজপথের সহিংসতা অথবা রাষ্ট্রীয় ক্ষয়িষ্ণু শক্তির ওপর নির্ভর করার চেয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত জীবনমানের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এতে শেষ পর্যন্ত যে ফল হবে, তা অবশ্যই হবে একটি রাজনৈতিক সমাধান। এতে অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে সুষ্ঠুভাবে গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট অর্জনের মাধ্যমে তা করতে হবে।

কিভাবে এমন যথাযথ রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছা যায় তা অনুধাবন করা যায় শুধু সমঝোতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেটা হবে বোঝাপড়ার প্রতিজ্ঞা। এক পক্ষ সেরা শক্তিগুলো মোতায়েন করার মাধ্যমে তার সব উদ্দেশ্য সফল করার চেয়ে সবাইকে নিয়ে সমঝোতা করার ওপর ভিত্তি করেই গণতান্ত্রিক রাজনীতি গড়ে উঠেছে।

সুশীল সমাজের ভূমিকা?

দুই দলই স্বীকার করবে যে, দেশের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষিত হতে পারে- এই বিশ্বাসে উপরের এই আলোচনা। দুঃখজনক হলো রাজনীতিকরা যে খেলার ফল শূন্য (জিরো সাম) এমন এক খেলায় মেতেছেন। তারা সমঝোতার মাধ্যমে এই সংঘাতের সমাধান চান বলে মোটেও মনে হচ্ছে না। যেহেতু রাজপথে চলমান সহিংসতা জনগণের মনে সবচেয়ে বেশি ভীতি সৃষ্টি করেছে তাই বিএনপিকে অস্থিরতা স্থগিত করে ও অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত থেকে প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে এগুতে হবে। ক্ষমতাসীন জোটের শীর্ষ নেতারা যেহেতু অধিক আগ্রাসী ভঙ্গিতে বিএনপি নেতাদের দিকে বাক্য ছুড়ে মারছেন তাতে বিএনপি নেতারা এই প্রথম পদক্ষেপ নেবে বলে ইঙ্গিত মিলছে না। ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে নকআউট করে দিতে চায় বলেই দৃশ্যত মনে হচ্ছে। চলমান এই রাজনৈতিক সহিংসতায় চূড়ান্ত বিজয় আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। শেষ প্রান্তেও আলোর দেখা নেই এমন এক সুড়ঙ্গে আটকা পড়েছে জাতি।

এই যখন অচলাবস্থা তখন সুশীল সমাজের কি কোন ভূমিকা আছে, তারা তো দলীয় পক্ষপাতিত্বে বিভক্ত? যারা তাদেরকে পক্ষপাতহীন বলে বিশ্বাস করেন তারা তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। ৯/১১ এর সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ অভিযোগ করেছিলেন ‘যারা আমার সঙ্গে নেই তারা অবশ্যই আমার বিরোধী’। সুশীল সমাজের ওই অংশের বিরুদ্ধে মেরুকরণের এই অভিযোগ করা হয়। ১৯৯৫ সালে জি-৫ বৈঠকে দুই নেতাকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তার কোন সাড়া পাওয়া যায় নি। তাই সুশীল সমাজ সম্প্রতি যে উদ্যোগ নিয়েছে তার ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে। তাই বলে জনগণ যখন তাদের ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগের জন্য একজন অবতার খুঁজবে তখন কিছুই করার থাকবে না- এমনটা ইঙ্গিত দেয় না। ঢাকাভিত্তিক সুশীল সমাজের উদ্যোগ যদি কোন কাজে আসে তাতে দেশের অন্যান্য নাগরিক গ্রুপ, যারা রাজনৈতিক উদ্বেগ ও সমাধানের জন্য প্রকাশ্যে কণ্ঠ সোচ্চার করবেন, তাদের পক্ষ থেকে একই রকম সাড়া পাওয়া প্রয়োজন হবে। যদি এ উদ্যোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে তাহলে তা রাজনৈতিক জোটগুলোকে অধিক শান্তিপূর্ণ একটি সমঝোতায় আসার জন্য অনুঘটকের কাজ করবে। এই রকম সম্ভাবনা এখনও অনুমানমূলক।

রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অধিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে সুশীল সমাজের গ্রুপগুলোর থাকতে হবে সমালোচনা সহ্য করার জন্য মোটা চামড়ার চেয়েও বেশি কিছু। এতে দীর্ঘ সময় ও শক্তি প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। আজ যাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ তার মধ্যে আছেন সব সময় রাজনীতিতে সক্রিয় নন (পার্ট টাইম), নিম্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাদের জন্য এটা হতে পারে অধিক চ্যালেঞ্জিং কাজ।

নোট: প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত। লেখাটি ২০শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়