Renovated environment of our RMG industry needs more publicity: Dr Moazzem

Published in কালের কন্ঠ on Sunday, 13 March 2016

সস্তা পোশাক বানানো থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বাংলাদেশ

সক্ষমতা থাকবে আরো এক যুগ

রাজীব আহমেদ, জার্মানি থেকে ফিরে  bangladesh-garmentsতৈরি পোশাকের নতুন উত্স দেশ হতে যাচ্ছে ইথিওপিয়া। আফ্রিকার ওই দেশটিতে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করেছে বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে পোশাক কেনা শুরু করেছে। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তার কিছু নেই।

বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সুইডেনের এইচ অ্যান্ড এম (হেন্স অ্যান্ড মরিটজ) মনে করে, বাংলাদেশ ১০ থেকে ১৫ বছর পোশাক খাতে প্রতিযোগিতায় সক্ষম থাকবে। এরপরে সস্তা পোশাক কিনতে অন্য উত্স দেখতে হবে। এ জন্যই পরবর্তী দেশ হিসেবে ইথিওপিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে ক্রেতারা।

এইচ অ্যান্ড এমের জার্মান কার্যালয়ের সাসটেইনিবিলিটি ম্যানেজার হেনরিক হোয়ারমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের কারখানাগুলো পোশাক তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেছে। তারা এখন আর সাধারণ পোশাক তৈরিতে আগ্রহী নয়। এখন জ্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে তারা, যার দাম তুলনামূলক বেশি। কিন্তু বড় কম্পানিগুলোকে সাধারণ পোশাকও বিক্রি করতে হয়। আর সেই পোশাকের জন্য ইথিওপিয়ার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন হেনরিক হোয়ারমেন। জার্মান সরকারের সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেডের আমন্ত্রণে দেশটির রাজধানী বার্লিন ও বন্দরনগরী হামবুর্গে এক সপ্তাহের শিক্ষাসফর শেষ করে গত ৬ মার্চ বাংলাদেশে ফেরে ওই প্রতিনিধিদল। ‘বাণিজ্য সাংবাদিকতায় নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতা’ শীর্ষক ওই শিক্ষাসফরে সাংবাদিকতা ও পোশাক খাত নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সংবাদকর্মীদের। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও, জার্মান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্র্যান্ড, শ্রমিক সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় হয় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের।

সফরে দেখা গেছে, জার্মানির ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড), ব্যবসায়ী সংগঠন কনফেডারেশন অব দ্য জার্মান টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এম বাংলাদেশের পোশাক খাতের সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে কমবেশি অবগত। কিন্তু সে দেশের গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মনে এখনো রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনাই গেঁথে আছে। এমনকি যেসব জার্মান সাংবাদিক রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের দুরবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন তারাও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত নন।

সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের নেতা ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, “জার্মানি বাংলাদেশের পোশাকের বড় বাজার। সেখানকার মানুষের মধ্যে এখনো রানা প্লাজার ছাপ রয়ে গেছে। ওই বাজারে রপ্তানি আরো বাড়াতে বাংলাদেশের উচিত সেখানকার সাধারণ ক্রেতা ও নীতিনির্ধারকদের ‘মাইন্ড সেট’ পরিবর্তনের জন্য কাজ করা।”

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। এর পরের অবস্থানেই জার্মানি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জার্মানিতে বাংলাদেশ প্রায় ৪৩৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে প্রায় ৪৩৪ কোটি ডলারে নেমে যায়। অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি ১.১৮ শতাংশ বেড়েছে।

৬১টি দেশে তিন হাজার ৯০০টি স্টোরের মালিক এইচ অ্যান্ড এমের সাসটেইনিবিলিটি ম্যানেজার হেনরিক বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এর জবাব হিসেবে তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশ ছেড়ে গেলে সেটা পরিস্থিতি উন্নতিতে কোনো ভূমিকা রাখবে না। বরং এ থেকেই উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব। পোশাক খাতে বাংলাদেশ উন্নতি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর বৈশ্বিক ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড অন বাংলাদেশ ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ও অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি এবং ইউরোপের সঙ্গে সাসটেইনিবিলিটি কমপ্যাক্টের আওতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানায় নিরীক্ষা সম্পাদন করেছে। এর মধ্যে ২ শতাংশ কারখানা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে গণ্য করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিদেশি তৃতীয় পক্ষের প্রকৌশলীদের দিয়ে এসব কারখানা নিরীক্ষার তথ্যও জানেন না জার্মান পত্রিকার সাংবাদিকরা। বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে শুনে তাঁরা এসব তথ্য বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ব্যবসাভিত্তিক ‘ব্র্যান্ড এইনস’ নামে ম্যাগাজিনের সংবাদকর্মীরা তো উল্লেখই করেন যে যাচাই ছাড়া তাঁরা এগুলো বিশ্বাস করবেন না। বাংলাদেশ সম্পর্কে এই না জানা দেখা গেছে সেখানকার আরো কিছু গণমাধ্যমে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সমস্যা অনেক প্রচার পেয়েছে। কিন্তু এরপর যে সংস্কার হয়েছে তা প্রচার পায়নি। ফলে সংস্কারের বিষয়গুলো হয়তো অংশীজনরা অবগত আছেন, কিন্তু পোশাক পরিধানকারীদের কাছে তা পৌঁছায়নি। এ জন্য বাংলাদেশের বাড়তি কিছু উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল।’ তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের সময়ে পোশাক খাত কী অবস্থায় ছিল, এখন কী অবস্থায় আছে—এসব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানানো প্রয়োজন। প্রয়োজনে তাদের বাংলাদেশে আনার উদ্যোগও নেওয়া যায়।

পোশাক ক্রেতাদের ইথিওপিয়া বা মিয়ানমারের দিকে নজর দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশের বড় চিন্তার কিছু নেই বলেও মনে করেন গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘পোশাক খাতের প্রবণতাই হলো খরচ বাড়লে ক্রেতাদের অন্য দেশে চলে যাওয়া। বাংলাদেশের মানুষের আয় বাড়ছে। এ ছাড়া কারখানার সার্বিক মান (কমপ্লায়েন্স) এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন আর নিম্ন দরের পোশাক তৈরি করে মুনাফা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এ জন্য নিম্ন মধ্যম ও মধ্যম দামের পোশাক তৈরির দিকে ঝুঁকতে হবে আমাদের।’