Dr Khondaker Golam Moazzem on RMG tender pricing

Published in Banik Barta on Tuesday, 28 January 2014.

তৈরি পোশাক খাত: ক্রয়াদেশ ধরতে মূল্য কমানোর প্রতিযোগিতা

বদরুল আলম

ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা ও বছরজুড়ে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ফিরতে শুরু করেছেন তৈরি পোশাকের বিদেশী ক্রেতারা। আর ক্রয়াদেশ পেতে পণ্যের মূল্য কমানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। অভ্যন্তরীণ এ প্রতিযোগিতায় টেকসই শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্রয়াদেশ ধরতে মালিকদের মধ্যে এ ধরনের প্রতিযোগিতা আগেও ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কেন্দ্র করে তিন মাসে সৃষ্ট ক্রয়াদেশ সংকট এ প্রতিযোগিতাকে উসকে দিয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে নিট খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, পণ্যের মূল্য নিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগিতা সব সময়ই ছিল। তবে ক্রয়াদেশ কম থাকলে প্রতিযোগিতাটি অসুস্থতার পর্যায়ে চলে যায়। এখন ঠিক সেটাই হয়েছে।

এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমরা টি-শার্ট, প্যান্ট, শার্ট, সোয়েটারের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ এতে সাড়া দেননি। তবে এখন এ ধরনের উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে টেকসই শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিট পোশাক তৈরির কারখানা এমবি নিট ফ্যাশন গত বছরের এ সময়ে প্রতিটি টি-শার্টের ক্রয়াদেশ পেয়েছিল ১ ডলার ৭৮ সেন্টে। এবার একই পণ্যে দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১ ডলার ৬২ সেন্ট।

এমবি নিট ফ্যাশনকে পাঠানো ক্রেতার এক বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশী অন্য এক কারখানা মালিক ১ ডলার ৬২ সেন্টে পণ্যটি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ মূল্যে রাজি না হলে এমবি নিট ফ্যাশন ক্রয়াদেশটি হাতছাড়া করবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের পিসপ্রতি মূল্য কমে যাওয়ার বিষয়টি ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে। ‘কনসোলিডেটিং অ্যান্ড অ্যাকসেলারেটিং এক্সপোর্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের দাম পিসপ্রতি গড়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কমছে। এ হিসাবে পাঁচ বছর আগে যে পোশাকের ফ্রেইট অন বোর্ড (এফওবি) মূল্য পাওয়া যেত ৫ ডলার, এখন তা নেমে এসেছে ৪ ডলার ৯১ সেন্টে।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ বিষয় সমাধানে গত কয়েক বছরে একাধিকবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ সভা করে সচেতনতা বাড়ানোরও চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এটা সম্ভব বলেও মনে হয় না।’

সূত্রমতে, মূল্য কমানোর এ প্রতিযোগিতা সব ধরনের কারখানার মধ্যেই হয়। বিশেষ করে কম্পোজিট কারখানাগুলো (নিটিং-ডায়িং-সুইং) যেকোনো একটিতে লাভ ধরে রেখে অন্যগুলো অস্বাভাবিক কম মূল্যে সরবরাহ করে। ব্যবসার কৌশল হিসেবেই বড় কারখানাগুলো এটা করছে।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কারখানা চালু রাখতেই অনেক সময় কম মূল্য প্রস্তাব করছেন। আর মূল্য নিয়ে ভারসাম্যহীন এ প্রতিযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো খাত।

এ প্রসঙ্গে গরিব অ্যান্ড গরিব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আহসান বলেন, মূল্য নিয়ে প্রতিযোগিতা হবেই। কারণ সব মালিকের আর্থিক অবস্থা এক নয়। যার অবস্থা ভালো, তিনি মূল্য না কমানোর ব্যাপারে কঠোর হতে পারছেন। আর যার দায়দেনা বেশি তিনি বাধ্য হয়েই কম মূল্যে ক্রয়াদেশ ধরে রাখতে চাইছেন।

শিল্প বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্য নিয়ে এ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মূল কারণ অপরিকল্পিত শিল্পায়ন। পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়েই অনেক ক্ষেত্রে কারখানার সামর্থ্য বাড়ানো হয়েছে। যারা অস্বাভাবিকভাবে উৎপাদন সামর্থ্য বাড়িয়েছেন সেটার পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্যই তারা পণ্যের মূল্য কমিয়ে দিচ্ছেন। আবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা শুধু কারখানা সক্রিয় রাখার দিকেই বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। এসব কারণেই মূল্য কমানোর এ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

তবে এ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট রেটের নিচে কাজ না করার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারেন। পাশাপাশি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রেও সিএম বাড়িয়ে দেয়ার মতো শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। তা না হলে টেকসই শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।