Mustafizur Rahman expresses doubt on government’s estimation of 7.05 pc GDP growth in FY16

Published in যুগান্তর on Thursday, 7 April 2016

 

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ পূর্বাভাসে অর্থনীতিবিদদের সংশয়

দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জন হওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এ দাবি প্রশ্নবিদ্ধ এবং এ প্রবৃদ্ধি বের করতে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও পদ্ধতি এ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিরতা ও রফতানিতে গতি ফেরা ছাড়া অন্য সব সূচক এখনও স্থবির বা নেতিবাচক। তারপরও বিদ্যমান অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের অংকে পৌঁছতে জিডিপির ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু দেশে বর্তমানে জাতীয় বিনিয়োগ জিডিপির ২৮ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে। এসব কারণে এই পূর্বাভাস বাস্তবসম্মত নয়।

চলতি অর্থবছরে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে যুগান্তরের কাছে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। মঙ্গলবার এনইসি বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ পূর্বাভাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এ বছর প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নামবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে সরকারি পূর্বাভাস প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ যেসব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই পরোক্ষ সূচক। তিনি আরও বলেন, বর্তমান রফতানি খাতের অবস্থা মোটামুটি ভালো। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া জিডিপি অন্তর্ভুক্তিকরণের অন্য সব সূচকই নেতিবাচক অথবা স্থবির। এছাড়া প্রবৃদ্ধিকে ৭ শতাংশের ঘরে উন্নীত করতে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সেই বিনিয়োগ স্তরে এখনও পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। উল্টো বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে ৮ শতাংশ। তার মতে, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি খাত সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু এ খাতে বিনিয়োগ আসছে না। এছাড়া নতুন শিল্প স্থাপন ও পুরনো শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি আনুপাতিক হারে কম। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি কমেছে। রেমিটেন্সের অংশীদারিত্বেও খুব একটা পরিতৃপ্তি নেই এ বছর। এসব অবস্থাদৃষ্টে মনে হেেচ্ছ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রাক্কলিত হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। চূড়ান্ত হিসাবেও সেটি অর্জন কঠিন হবে।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ মন্দা, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে রফতানিতে নেতিবাচকসহ বিভিন্ন কারণে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি একটি সূচক মাত্র। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেই সেটি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমোন্নতি নির্দেশ করে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের জিডিপির হিসাবকে আমি সঠিক বলে মনে করি না। কারণ এ পূর্বাভাস প্রাক্কলনের আগে সারা বছরের প্রকৃত উৎপাদন তথ্য এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিভিন্ন খাত থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত ধরা হয়েছে, সেটি আংশিক মাত্র। তথ্য-উপাত্ত কোনো ক্ষেত্রে ৮ মাসের, আবার ৬ মাসেরও নেয়া হয়। এমন পরিস্থিতি এই পূর্বাভাস বছর শেষের চূড়ান্ত হিসাবে বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন হবে। সাবেক এই গভর্নর বলেন, সরকার জিডিপির যে হিসাব দিচ্ছে এর মধ্যে বড় ভূমিকা সেবা খাতের। বিশেষ করে সরকারি সেবা খাতে ব্যয় বেড়েছে। এ ধরনের ব্যয় ভোগ-বিলাসে ব্যয় হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায়। এতে সাময়িক প্রবৃদ্ধি ঘটে। তবে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা থাকলেও এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তা সেভাবে ব্যয় করা যাচ্ছে না। ব্যয় বাড়ছে না বেসরকারি বিনিয়োগ পর্যায়েও। আগের বছরের প্রবণতা ধরে যে হিসাব দেয়া হয়েছে শেষ পর্যন্ত তার অর্জন নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদিও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়াই জিডিপি বাড়ার একটা কারণ। দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশীদারিত্ব এবং কঠোর শ্রমের ফলেই এ আয় বাড়ছে। ব্যক্তি আয় বাড়তে থাকলে সার্বিকভাবে মাথাপিছু আয়ও বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক। সেটাই হচ্ছে। তবে আয়ের হিসাবে ব্যক্তিভেদে সমাজে চরম বৈষম্যও তৈরি হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সুফল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জিডিপিতে। এর সঙ্গে রফতানি আয়ে সুবাতাসও জিডিপিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। মূলত অর্থনীতির এ ধরনের ইতিবাচক সূচকের ওপর ভর করেই এই প্রাক্কলন করেছে সরকার। যে কারণে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের কোটা অতিক্রম করেছে। যুগান্তরের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রাক্কলন মাত্র। এ পূর্বাভাস শেষ কথা নয়। অর্থনীতির প্রকৃত চেহারা বোঝা যাবে, বছর শেষে কতটা অর্জিত হল সেটার ওপর। আমি মনে করি ৭ অংকের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর। আমরা এতে আশান্বিত হতে পারি। এই মাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কিছুটা সংশয় ও ঝুঁকি তো রয়েছে। কেননা এখানে অনেক তথ্য অনুমাননির্ভর নেয়া হয়েছে। বছর শেষে এ অনুমান ফল নাও দিতে পারে। এটি হচ্ছে বড় সংশয়।

অপর অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, দেশের অপর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ বছর বাংলাদেশের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিংবা এর কাছাকাছি অর্জনের বিষয়ে মোটামুটি দেশী-বিদেশী সব সংস্থারই একটি আগাম পূর্বাভাস ছিল। এখন সরকার যেসব ফ্যাক্টরগুলোর ওপর ভিত্তি করে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য জিডিপির সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলছে- সেটি যুক্তিযুক্ত বলেই মনে হচ্ছে। এই ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্জন সম্ভব। তবে এটি ঠিক, সামনের দিনগুলোতে এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বড় ঝুঁকি হচ্ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নে বিরাট লক্ষ্যমাত্রায় হতাশাজনক চিত্র। শুনেছি, এখন পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র ৪১ ভাগ। ইতিমধ্যে বছরের ৯ মাস গত হতে চলেছে। অর্থবছরের বাকি সময়ে লক্ষ্যমাত্রার পুরো অর্থ ব্যয় হবে না বলে ইতিমধ্যেই এডিপি সংশোধন করতে হয়েছে। এখন সংশোধিত এডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জের।