Professor Mustafizur Rahman on embezzled money

Published in Kaler Kantho on Tuesday, 25 February 2014.

ট্রান্সফার প্রাইসিং’ আইন কার্যকর হচ্ছে
পাচারকৃত অর্থ থেকে রাজস্ব আদায় করবে এনবিআর

ফারজানা লাবনী

পাচারকৃত অর্থ থেকে রাজস্ব আদায়ের আইনি ক্ষমতা পেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লেনদেন খতিয়ে দেখে অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায়ে উদ্যোগ নিতে পারবে এনবিআর। এ ছাড়া যাদের অর্থপাচারসংক্রান্ত অভিযোগ আদালতে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের পাচারকৃত অর্থ থেকেও রাজস্ব আদায় করবে এনবিআর। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘ট্রান্সফার প্রাইসিং’ আইন কার্যকরে এনবিআর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠন করা হয়েছে। তবে কর্মী নিয়োগের কাজ চলছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) কর্মকর্তারা এ আইন কার্যকরে কাজ করবেন। ইতিমধ্যে সিআইসির একাধিক কর্মকর্তাকে কানাডার তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞদল এবং আইএমএফের ট্রান্সফার প্রাইজিং বিশেষজ্ঞ টিমোথি ডেহান ও মাইকেল ডার্স্ট প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, প্রথম অবস্থায় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ডেসটিনি, হলমার্কসহ আরো একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিদেশে অর্থপাচারের বিষয় খতিয়ে দেখে রাজস্ব আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে এনবিআর।

জানা যায়, ট্রান্সফার প্রাইসিং আইনের আওতায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ব্যাংক হিসাব জব্দ, জেল ও জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসাব মতো রাজস্ব পরিশোধে বাধ্য থাকবে। এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং পাওনা রাজস্বের দ্বিগুণ জরিমানা দিতে হবে। ক্ষেত্রে বিশেষে বড় মাপের অর্থ পাচারকারী অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ট্রান্সফার প্রাইসিং বাবদ বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে ৬৩৩ মিলিয়ন ডলার। এ সময় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে অর্থনীতির আওতা বাড়ায় এ হিসাব কয়েকগুণ বেশি বলে এনবিআর থেকে হিসাব কষা হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ট্রান্সফার প্রাইসিং খাতে দেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপর পাচার হয়।

ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন অনুসারে, দেশের বাইরে যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন হবে, সে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে জড়িতদের জেরা বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রও জব্দ করে তদন্তের আইনগত অধিকার থাকছে রাজস্ব বোর্ডের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের।

ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের সমন্বয়কারী সাবি্বর আহমেদ বলেন, ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন প্রণয়ের বিষয়ে জাতীয় সংসদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর তা কার্যকরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে এনবিআর। আইনটি কারা, কিভাবে পরিচালনা করবে এবং অভিযুক্তদের শাস্তিসংক্রান্ত সব বিষয় চূড়ান্তে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় অর্থপাচার থেকে রাজস্ব আদায়ের আইনি অধিকার পেল রাজস্ব বোর্ড।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন বাস্তবায়ন হলে সরকারের বড় ধরনের আয় হবে। আইন বাস্তবায়নের প্রথম অবস্থায় দুই একটি বড় মাপের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থপাচার বাবদ রাজস্ব আদায় সম্ভব হলে অন্য দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার কমিয়ে দেবে। এতে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।