Sluggishness of the reform process under DIFE hazardous for RMG sector: Dr Moazzem

Published in প্রথম আলো on Saturday, 30 April 2016

পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন

৫৬% কারখানা পরিদর্শন ও সংস্কারকাজের বাইরে

শুভংকর কর্মকার

কর্মপরিবেশ উন্নয়নে দেড় হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানার প্রাথমিক পরিদর্শন গত বছর শেষ হলেও সংস্কারকাজ শুরু হয়নি। ১ হাজার ১৬৯টি কারখানা পরিদর্শনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেই। ফলে দেশের মোট কারখানার সাড়ে ৫৬ শতাংশ এখনো পরিদর্শন ও সংস্কারকাজের বাইরে। পরিদর্শন শেষে সংস্কারকাজ শুরু করা কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ধীরগতির অভিযোগ আছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংস্কারকাজ করতে কিছু মালিকের আগ্রহ এখনো কম। অর্থ-সংকটের সমস্যা আছে। স্বল্প সুদে সংস্কারকাজের জন্য ঋণ মিলছে না। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) প্রকৌশলগত সক্ষমতা কম।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিদপ্তরের অধীনে থাকা কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এটি বিপজ্জনক। সরকারের উচিত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেওয়া। পরিদর্শনের বাইরে থাকা কারখানাগুলোকে দ্রুত প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, যত দিন সব কাজ শেষ হবে না, তত দিন পোশাকশিল্প পুরোপুরি নিরাপদ বলা যাবে না।

কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট যথাক্রমে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কাজ করছে। সর্বশেষ তথ্য, অ্যাকর্ড ১ হাজার ৫৫২ ও অ্যালায়েন্স ৮৭৮টি কারখানার (বর্তমানে সক্রিয় ৬৭৭) ভবন, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক মূল্যায়ন বা প্রাথমিক পরিদর্শন শেষ করেছে। এর মধ্যে জোট দুটি যৌথভাবে পরিদর্শন করছে ৩৪০টি কারখানা। এ ছাড়া জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহায়তায় ডিআইএফই ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানার পরিদর্শন শেষ। তিন পক্ষের পরিদর্শনের পর ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি কারখানা বন্ধ হয়।

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৮০৮টি। তার মধ্যে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য ৩ হাজার ৮৯৯। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও এনটিএপির অধীনে পরিদর্শন শেষ হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৯ কারখানার। বাকি থাকা ১ হাজার ১৬৯ কারখানার মধ্যে ৯৭টি পরিদর্শন করবে অ্যাকর্ড। তারপরও ১ হাজার ৭২ কারখানার পরিদর্শন বাকি থাকবে। এর মধ্যে ৯০৯ কারখানা সাব-কন্ট্রাক্টিং বা ঠিকায় কাজ করে। মূলত বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য না হওয়ায় কারখানাগুলোর দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। বিজিএমইএ বলছে, কারখানা অধিদপ্তরের নিবন্ধনে চলছে, তাই দায়িত্ব অধিদপ্তরের। আর ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে পারছে না, এমনটাই বলছে অধিদপ্তর।

পরিদর্শনের বাইরে থাকা কারখানার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানাগুলো নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ এসব কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সবার আঙুলই পুড়বে। সে জন্য সরকারকে আমরা বারবার উদ্যোগ নিতে বলছি।’

অধিদপ্তর গত বছর ১ হাজার ৫৪৯ কারখানার পরিদর্শন শেষ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ‘রেড’ ক্যাটাগরিতে ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং খানিকটা কম ঝুঁকিপূর্ণ ‘আম্বার’ ক্যাটাগরিতে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ কারখানা। তবে গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৫৪টি কারখানা সংশোধন কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) জমা দিয়েছে। পাঁচটি ক্যাপ অনুমোদন হয়েছে। ক্যাপ অনুমোদনের পরই মূলত কারখানা সংস্কারের কাজ শুরু করে। তার মানে, ১ শতাংশ কারখানাও সেটি করেনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহম্মদ বলেন, ‘৯৭৭ কারখানাকে আমরা প্রাথমিক ক্যাপ তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত করে মালিকেরা জমা দিচ্ছেন না। আসলে তাঁরা সংস্কারকাজের বিষয়ে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন।’

জানতে চাইলে মাহমুদ হাসান বলেন, ‘মালিকদের আগ্রহ নয়, সক্ষমতা কম। সংস্কারকাজে কোটি কোটি টাকা লাগবে, যা অনেক মালিকেরই নেই। সে জন্য আমরা স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া অনেক কারখানা স্থানান্তর করতে হবে, তাই সময়ের দরকার।’ দ্রুত ক্যাপ অনুমোদনে জন্য পর্যাপ্ত প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সৈয়দ আহম্মদ বলেন, ‘লোকবল কম আছে সত্য, তাই আমরা সংশোধন সমন্বয় কমিটি (আরসিসি) করতে যাচ্ছি। সে জন্য দাতাদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে।’

এদিকে সব ধরনের সংস্কার করে ইতিমধ্যে কমপ্লায়েন্ট কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সদস্যভুক্ত ৩০টি কারখানা। আর সংস্কারকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় অ্যাকর্ড ২৩ ও অ্যালায়েন্স ৮০টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এই ১০৩ কারখানা দুই জোটের ২১৮টি বিদেশি ব্র্যান্ডের কাজ আর পাবে না।

এ ছাড়া অ্যাকর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে বিজিএমইএকে ৫২২ কারখানার একটি তালিকা দিয়ে বলেছে যে তাদের সংস্কারকাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে প্রায় ১৮০ কারখানার অগ্রগতি শূন্য থেকে ১০ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ শতাংশ অগ্রগতি আছে ৯৮ কারখানার। বাকিগুলোর অগ্রগতি ২১ থেকে ৪০ শতাংশ। পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে কারখানার মালিকদের দুই দফায় ডাকেন বিজিএমইএর নেতারা। তবে অধিকাংশ মালিকই বৈঠকে আসেননি।

অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন বলেন, ‘সংস্কারকাজ ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তাই অগ্রগতি সন্তোষজনক বলা যায়। তবে ধীরগতিতে চলছে সত্য। অগ্নিনিরাপত্তার যন্ত্রপাতি আমদানিতে অনেক সময় লাগছে।’

অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ জানান, তিন বছরে পোশাক খাতের উন্নতি হয়েছে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো অনেক কাজ বাকি। অধিকাংশ কারখানার সংস্কারকাজ ধীরে চলছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের মধ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ শেষ হয়ে যাবে। কারও কারও একটু দেরি হতে পারে। তবে আমরা সঠিক পথেই আছি। তবে ছোট ও মাঝারি কারখানা নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে।’