Worker’s right to form trade unions will help to increase their safety: Mustafizur Rahman

Published in কালের কন্ঠ on Sunday, 1 May 2016

এক যুগে কর্মস্থলে জীবন গেছে ৮ হাজার শ্রমিকের

নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ

এম সায়েম টিপু

বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করতে হয়। সেই কাজ যেভাবে শ্রমজীবীদের বাঁচিয়ে রাখে তেমনি অনেক সময় জীবননাশেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন আর অবহেলা অনেক সময় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় কর্মীদের। এসব ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বা নায্য বিচারও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেলে না।

২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত হয় এক হাজার ১৩৬ শ্রমিক। এর আগের বছর ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ায় তাজরীন কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটানায় পুড়ে মারা যায় ১২৪ জন শ্রমিক। কিন্তু এখনো বিচার পায়নি শ্রমিকদের স্বজনরা। হাজারের বেশি শ্রমিক মারা গেলেও রানা প্লাজার মালিক রানার যেমন সাজা হয়নি এখনো, ঠিক তেমনি তাজরীনের মালিকেরও বিচার হয়নি।

শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০১৫ সাল—এই দশ বছরে কর্মস্থলে জীবন প্রদীপ নিভেছে আট হাজার ১৮৩ জন শ্রমিকের। আর কর্মস্থলে আহত হয়েছে ১৯ হাজার ৬২০ জন শ্রমিক। এ ছাড়া কর্মস্থলে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানাভাবে নাজেহাল হতে হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ শ্রমিককে।

শ্রমিক নেতারা বলেন, “মহান মে দিবসে আমাদের একটিই শপথবাক্য হোক—শ্রমিকের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল।” এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা রায় রমেশ চন্দ্র বলেন, “এমনিতেই আমাদের দেশে পদে পদে শ্রমিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। ঠিকমতো মজুরি দেওয়া হয় না, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই অনেক খাতের শ্রমিকদের। এ জন্য মহান মে দিবসের প্রাককালে আমাদের একটিই চাওয়া ‘নিরাপদ কর্মস্থল’। একই সঙ্গে শ্রমিকদের জানমাল ক্ষয়ের জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।”

বিলসের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে আরো জানা যায়, ২০০২ সালে কর্মস্থলে প্রাণ গেছে ১৬৮ শ্রমিকের, ২০০৩ সালে ২৫১ জন, ২০০৪ সালে ১৮৮ জন, ২০০৫ সালে ৪৮০ জন, ২০০৬ সালে ৯৭৪ জন, ২০০৭ সালে ৪৩৬, ২০০৮ সালে ৫৪৭ জন, ২০০৯ সালে ৩৭৮ জন, ২০১০ সালে ৭০৩ জন, ২০১১ সালে ৮৭৯ জন, ২০১২ সালে ৯০৬ জন, ২০১৩ সালে ১৭০৬, ২০১৪ সালে ৬০৩ জন এবং ২০১৫ সালে ৩৬৩ জনের।

একইভাবে এই এক যুগে আহত শ্রমিকের সংখ্যা নিহত শ্রমিকের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০০২ সালে কর্মস্থলে শ্রমিক আহত হয়, ৩৮৯ জন, ২০০৩ সালে ৪৭৫ জন, ২০০৪ সালে ২৫৯ জন, ২০০৫ সালে ৯৫০ জন, ২০০৬ সালে তিন হাজার ৬৫০ জন, ২০০৭ সালে এক হাজার ১৭৬ জন, ২০০৮ সালে ৭১৩ জন, ২০০৯ সালে এক হাজার ৯০০ জন, ২০১০ সালে দুই হাজার ৫৭৬ জন, ২০১১ সালে এক হাজার ২৩৫ জন, ২০১২ সালে এক হাজার ১০৮ জন, ২০১৩ সালে চার হাজার ৮২৫ জন, ২০১৪ সালে ৬৮৫ জন এবং ২০১৫ সালে ৩৮২ জন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কর্মস্থলে এসব দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকিপূণ স্থানে শিশুদের কাজে নিয়োগ না দেওয়ার আইন মানতে বাধ্য করতে হবে এবং কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় প্রকৃত দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করতে হবে। কারণ বিলম্ব বিচারের ঘটনায় সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া তিনি দুর্ঘটনা হ্রাসে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার অধিকার নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।