Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Tuesday 24 March 2020
করোনার প্রভাবে সাময়িক বন্ধ হতে পারে পোশাক কারখানা
কারখানা বন্ধ হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ অগ্রাধিকার পাবে
করোনার প্রভাবে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের অনুরোধ আসছে সেখানকার ক্রেতাদের কাছ থেকে। দিনে দিনে এখানেও অনেক কারখানার কাজ কমে আসছে। আবার দেশেও করোনা ভাইরাসের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নেওয়ার পরিস্থিতিতে। পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় পোশাক কারখানা সাময়িক বন্ধ করার বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর বড়ো অংশই কারখানা সবেতনে ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে মালিকপক্ষের মধ্যে ছুটি দেওয়া বা সাময়িক বন্ধ করা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকি এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
এদিকে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও কারখানা সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়ে চিন্তা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তারা তাকিয়ে আছেন এ ভাষণের দিকে। এছাড়া কারখানা সাময়িক বন্ধ করা হলেও শ্রমিকদের বেতনভাতা নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে। সব মিলিয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের বড়ো অংশই কারখানা সাময়িক বন্ধ করার বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শিল্পকারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, কারখানা বন্ধ করা হলে শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাবে। সেখানে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আরো বেশি আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে কারখানা চালু বা ছুটি দেওয়া ইস্যুতে গতকাল বৈঠক করেছে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগ পর্যন্ত কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা শেষে সংগঠনের পরিচালক ফজলে শামীম এহসান ইত্তেফাককে বলেন, কারখানা চালু রাখা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত যাই হোক, সময়মতো শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে তাদের সদস্যভুক্ত প্রায় ১ হাজার ১০০ কারখানার প্রায় দুইশ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, তাদের সদস্যভুক্ত কারখানারও প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে আপত্কালীন বিশেষ তহবিলের দাবি জানিয়েছেন। এসব ইস্যুতে তারা আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পারেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, করোনার বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে সব ধরনের শিল্পই এক মাসের জন্য ছুটি দেওয়া উচিত। তবে যাদের হাতে কাজ রয়েছে, তাদের ছুটি দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া যায়। এ সময়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা এবং মালিকপক্ষকে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের এগিয়ে আসা দরকার। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী ও বিদেশি ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলোর সহায়তা নেওয়া দরকার।