নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে উৎসাহিত করতে সরকারকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে: ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in কালের কন্ঠ on 7 February 2021

৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে

মহামারিতে ফেসবুকের মাধ্যমে নারীদের পণ্য বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে লকডাউনে ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীই এ সময় অনলাইনে পণ্য কেনেন, যা ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত নারীদের জন্য ছিল আশীর্বাদের মতো। নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, করোনায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রায় ৬০ শতাংশ নারী অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে এসেছেন।

করোনাকালীন সংকটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেক নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে আগ্রহী হয়েছেন। বিশেষভাবে শিক্ষিত নারীরা এই পথে বেশি এসেছেন। নারী উদ্যোক্তারা ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইভারে পণ্যের প্রচার-প্রসার করেছেন। অনেকে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট খুলেও ব্যবসা করেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনে সহজে পণ্যের প্রচার ও প্রসার করা সম্ভব। অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা করতে পারলে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় কমে আসে। অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়লে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তখন ঘরের বাইরে বের না হতে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়। আমদানি-রপ্তানি প্রায় বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দোকান, শপিং মল বন্ধ ছিল। এমনকি এলাকার খুচরা বাজার পর্যন্ত নিয়মিত খোলা হতো না। ফলে নারী উদ্যোক্তারা পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হিমশিম খেয়েছেন।

রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় নোলক ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানের মালিক রাহেমা আক্তার জলি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে প্রায় ছয় মাস দোকান বন্ধ থাকায় আমার ব্যবসা লোকসানে পড়ে শেষ হতে চলেছিল। এমন সময় আমি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমার ব্র্যান্ডের নিজস্ব ফেসবুক পেজে পণ্যের প্রচার শুরু করি। আমি অনেক ক্রেতা পেয়েছি।’

ওয়েবের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, চাকরির বাজার ভালো না। তাই উপার্জন করতে অনেক শিক্ষিত নারী এখন ব্যবসায় আসছেন। তাঁদের আধুনিক পদ্ধতিতে ব্যবসা করার আগ্রহ বেশি। আধুনিক পদ্ধতির অংশ হিসেবে তাঁরা অনলাইনে পণ্য বিক্রি করছেন। তবে এ সংখ্যা এখনো আশানুরূপ নয়। করোনায় দোকানে বিক্রি প্রায় বন্ধ ছিল। এতে নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েই অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেছেন।

একই মত জানিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন দেওয়া হয়। এ সময় দোকানপাট স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা ছিল না। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গণপরিবহনসহ সব ধরনের চলাচল বন্ধ ছিল। এমন পরিবেশে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেকে অনলাইনে পণ্য বিক্রি শুরু করেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনলাইনই পণ্য বিক্রির সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম। শহরের নারী উদ্যোক্তারা অনলাইন সম্পর্কে ভালো জানলেও শহরের বাইরের নারী উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে কম জানেন। এ জন্য তাঁরা অনলাইনের সুযোগও কম নেন। নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে উৎসাহিত করতে সরকারকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতেরও দায় আছে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা পৃথিবীর ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিদিনই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। দেশের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে পণ্য উৎপাদন করে বিক্রির জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ায়ও অনেক সমস্যা রয়েছে। বিশেষভাবে নারীদের নিরাপত্তা জড়িত, যদিও আগের চেয়ে এসব বিষয়ে অবস্থা অনেক ভালো। তার পরও এসব সমস্যা এড়াতে ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব হলে এ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে চলা অনেক সহজ হবে।