Originally posted in কালের কন্ঠ on 18 July 2022
সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে এবং সময়মতো শেষ করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের ব্যয় কমাতে বাতিল করা হয়েছে বিদেশভ্রমণ। এ ছাড়া নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয় ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর জন্য ১৫টি অনুশাসন জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চলতি অর্থবছরের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোয় পাঠানো হয়েছে এসব অনুশাসনের চিঠি।
১৫ অনুশাসনের অন্যতম নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য মতে, প্রতি অর্থবছর গড়ে সরকারের অনুমোদনের তালিকায় থাকে এক হাজারের বেশি উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগ বাস্তবায়িত হয় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে, কিছু বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অর্থায়নে, আর কিছু সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে।
চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেখা গেছে, এ বছর সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় পাস হওয়ার তালিকায় রয়েছে এক হাজার ৩৪৫টি প্রকল্প। তবে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাস হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো অনুশাসনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প যাচাই কমিটি কর্তৃক সঠিকভাবে প্রকল্প প্রস্তাব পরীক্ষা করতে হবে। ’
প্রকল্পের বরাদ্দের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রায় শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, বিশেষ প্রকল্প, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প, ফাস্ট ট্র্যাক ও মেগাপ্রকল্পসংশ্লিষ্ট সহায়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ’
খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদনশীলতা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো অপরিহার্য প্রকল্পগুলোয় বিষয়ে বলা হয়েছে, এসব প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্প যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই কাজে ফার্ম নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পরীক্ষা করতে হবে। এর বাইরে নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি নিরুৎসাহ করতে হবে। অবকাঠামোসংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত ডিজাইন অনুসরণ করতে হবে।
অর্থের প্রবাহ স্বাভাবিক থাকার পরও ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ শেষে ক্রটিজনিত দায় প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বহন করতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি বা ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্য অনুশাসনগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোকে নিবিড় তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) ছাড়াও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সভা যথাসময়ে আয়োজন করে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের ব্যয়, মেয়াদ ও সময় বাড়ানোর প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে।
ঠিক সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও গাড়ির বিষয়ে অর্থ বিভাগ ও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। আর প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুলে জমা দিতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় জলাধার, খাল ও নদী নষ্ট না করা বিষয়েও অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে অনুশাসনে বলা হয়েছে—এক কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া প্রকল্প পরিচালক বদলি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প সংশোধনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসব অনুশাসনের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের প্রতিটি নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেকে) প্রধানমন্ত্রী একাধিক অনুশাসন দিয়ে থাকেন।
তবে চলতি বছরের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার আরো কঠোর হয়েছে। ফলে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নীতির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর বড় সমস্যা হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ কথাটি বলে আসছিলাম। প্রত্যাশা থাকবে সামনের দিনগুলোয় সুশাসনের সঙ্গে প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে শেষ হবে। ’