Originally posted in প্রথম আলো on 25 March 2022
গোলটেবিল
শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা
জার্মানিভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে এবং লাউডেস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৫ মার্চ ২০২২। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
বাংলাদেশের শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এখন একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। এ ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগও শুরু হয়েছে। শ্রমিকের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য কী করণীয়, সে বিষয় আলোচনার চেষ্টা করব। আয় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য একটা সমাজের ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়। একজন মানুষ বয়স্ক হয়ে যাওয়া, চাকরি না থাকা, অসুস্থ হওয়া, নারীদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। এত দিন এ বিষয়গুলো তেমনভাবে চিন্তায় ছিল না। কিন্তু আমাদের উচ্চ আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে এগুলো লাগবেই।
সরকারকে ধন্যবাদ এ জন্য যে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগগুলো সব জায়গায় সমপর্যায়ে পৌঁছায়নি। মোট বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৯ শতাংশ, শিশুদের ২৯ শতাংশ, গর্ভবতী নারীদের ২১ শতাংশ ও আহতদের ১৮ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পান। কিন্তু সেই তুলনায় শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা একেবারেই কম। কেবল আহত শ্রমিকের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এ ভাতা পান। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কম।
আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। ২০২৬ সালে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে ঢুকব। এ সময়ের মধ্যে অনেক সামাজিক সূচকে উন্নতি করতে হবে। এর মধ্যে অবশ্যই শ্রমিকের সামাজিক সূচকেও উন্নতি করতে হবে। ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয় ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হব। তখন আমাদের মাথাপিছু আয় হবে যথাক্রমে ৪ হাজার ও ১২ হাজার ৫০০ ডলার। এই স্তরে অন্যান্য দেশের সামাজিক সুরক্ষার তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ২০৪১ সালে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বাড়বে। তাঁদের জন্য বড় ধরনের সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে। এ জন্য কি আমাদের কোনো প্রস্তুতি আছে?
শ্রমজীবী গর্ভবতী নারী, অসুস্থ শ্রমিক, আহত শ্রমিক, বেকার শ্রমিক—এঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই সময় তাঁদের আয় থাকে না। তাঁরা ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নেই। তবে আশার কথা হলো, সরকারের দিক থেকে ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের কথা বলা হচ্ছে। এটা কার্যকর হওয়া উচিত। সরকার জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করছে। কোভিডকালে এটা আরও বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্টাইপেন্ড, নগদ হস্তান্তর, ক্রেডিট সাপোর্ট ইত্যাদির মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি, বয়স্ক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ অনেকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা আছে। কিন্তু শ্রমিক আহত ও বেকার হলে তাঁর জন্য তেমন কোনো নিরাপত্তা নেই। কিন্তু করোনার সময় ইউরোপিয়ান তহবিলের সহযোগিতায় বেকার শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।