Originally posted in প্রথম আলো on 19 July 2022
সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় স্বস্তিদায়ক অবস্থান থেকে বের হয়ে গেছে বাংলাদেশ। সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা হলেও ঝুঁকিতে পড়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন, সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন, আমদানি নিরুৎসাহিত করা—এসব উদ্যোগ অর্থনীতির ঝুঁকির বার্তা দেয়। সাধারণত একটি অর্থনীতির সক্ষমতার সূচকগুলো দুর্বল হলে ধীরে ধীরে ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
শুধু বাংলাদেশ নয়; বৈশ্বিক বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে আছে। তবে এটা সাময়িক। সঠিকভাবে সামাল দিতে হবে যেন এই ঝুঁকি গভীর না হয়। গভীর হলে অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হবে, যা সার্বিকভাবে উন্নয়ন ব্যাহত করবে।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার পাশাপাশি মধ্যমেয়াদি সংস্কার পদক্ষেপও নিতে হবে। এসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা যেন ভুলে না যাই। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার বাড়ছে। কিন্তু কর-জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশ খুবই নিচের দিকের একটি দেশ। আবার এ দেশে প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করা যায় না। এতে খরচ বাড়ে। ফলে প্রকল্পের সুবিধা নেওয়া যাচ্ছে না, যা সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই উন্নয়ন প্রকল্প সাশ্রয়ীভাবে সুশাসনের সঙ্গে বাস্তবায়ন করার তাগিদ থাকতে হবে। অন্যদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কিন্তু সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান আরও বাড়ছে। এতে অভ্যন্তরীণ চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এই মুহূর্তে সরকারের উচিত, অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প (যা এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন না করলে তেমন ক্ষতি হবে না) বাস্তবায়ন শ্লথ করা। তবে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন মাঝামাঝি বা শেষের দিকে আছে, তা অব্যাহত রেখে দ্রুত শেষ করা উচিত। কারণ, ওই সব প্রকল্প পিছিয়ে পরবর্তীকালে আবার বাস্তবায়ন করতে গেলে খরচ আরও বাড়বে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত।
সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে অর্থনীতি বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি শ্লথও হয়, তা উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে মেনে নেওয়া উচিত।
মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি।