চতুর্মাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ: মোস্তাফিজুর রহমান

Published in সমকাল on Friday 5 June 2020

স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে

জনসাধারণ ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে কিছুদিনের জন্য পুরো দেশে কঠোর লকডাউন কার্যকর করার পরামর্শ এসেছে বেসরকারি খাতের এক সংলাপ থেকে। সেখানে বক্তারা বলেছেন, এতে সাময়িক ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে বড় ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। তারা স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির মধ্যে সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বের হওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার পরামর্শক সংস্থা রিসারজেন্ট বাংলাদেশ ভার্চুয়াল এ সংলাপের আয়োজন করে। বাণিজ্য সংগঠন এমসিসিআই, ডিসিসিআই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিল্ড এবং অর্থনৈতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম।

এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, এখন দরকার স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপত্তা দেওয়া, দ্রুত অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি করা। পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সমন্বয় ঠিকমতো না হলে ভুল হতে থাকবে। সমাজ ও অর্থনীতির আগামী দিনের জন্য স্বল্প মেয়াদে কিছু ক্ষতি মানতে হবে। নতুবা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা যেমন কঠিন হবে, তেমনি সম্ভাবনাও কাজে লাগানো যাবে না। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চতুর্মাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এখন বৈষম্য না বাড়ে, সামাজিক অস্থিরতা তৈরি না হয় এমন উদ্যোগ দরকার। এছাড়া বৈশ্বিকভাবে যেসব উদ্যোগ আসছে সেগুলোর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট হতে হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত হবে। দারিদ্র্য ও বৈষম্য বাড়বে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ফলে এই প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় করে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। তিনি স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, আইসিটিসহ সব খাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না। আবার স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, সমন্বয় দরকার। যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে হবে।

শ্রীলংকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদউল্লাহ বলেন, শ্রীলংকা শুরুতে কঠোর হয়েছে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতির মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছে। যে কারণে বর্তমানে দেশটিতে প্রাদুর্ভাব কমে এসেছে। সাবেক আইন সচিব মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, সরকারের ভেতরে এবং সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় দরকার। সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম বলেন, জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় রেখেই উদ্যোগ নিতে হবে। আইসিটির ব্যবহার করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ রেখে নীতি তৈরি করতে হবে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া বলেন, এখন পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জরুরি। কর্মসংস্থান ঠিক থাকলে চাহিদা হবে। আর চাহিদা থাকলে অর্থনীতি গতিশীল হবে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসাদ ইসলাম বলেন, টেস্টিং বাড়ানোর জন্য গ্রুপ টেস্টিং করা যেতে পারে। এছাড়া বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ করিম, ঢাবির সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।