অসাধু ব্যক্তিরা দরিদ্র গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য নকল পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করবে: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Published in UNB on 2 October 2020

করোনাকালে অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অর্থনীতিবিদদের আহ্বান

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেশে ক্রমবর্ধমান অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে এ বিপর্যয় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, বৈশ্বিক অপরাধমূলক সিন্ডিকেটগুলো তাদের ‘অবৈধ পদচিহ্ন’ সম্প্রসারণের জন্য দেশের অকার্যকর রেগুলেটরি কাঠামো, সরবরাহ ঘাটতি, ভোক্তাদের পছন্দ পরিবর্তন এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে দামের ব্যবধানের সুযোগ গ্রহণ করছে।

মহামারিতে অনেকে চাকরি হারানোর ফলে অবৈধ বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। ব্যয় করার জন্য টাকার ঘাটতি থাকায় মানুষ আরও সস্তা এবং অবৈধ পণ্য সন্ধান করবে। সুতরাং এ বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োগ করা এখন সময়ের প্রয়োজন, বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, এ ক্রমবর্ধমান অবৈধ বাণিজ্যের কারণে বিশ্বজুড়ে সরকার এবং ব্যবসায়ীরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারাবে, যা শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনকে বিপদে ফেলবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ বাণিজ্যের কারণে ২০২০ সালে ২.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বা বৈশ্বিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) তিন শতাংশ হ্রাস পাবে।

বিশ্বব্যাপী এ অবৈধ বাণিজ্যের কারণে ইতোমধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস, তামাক, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, পিপিই কিটস, স্যানিটাইজার এবং বিলাসবহুল পণ্যসহ বিভিন্ন শিল্প প্রভাবিত হয়েছে। মানবপাচার এবং অবৈধ মাদকের প্রবাহও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মহামারি শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালের তুলনায় অনলাইনে নকল বা জাল পণ্য বিক্রয় প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

ইউএনবির সাথে আলাপকালে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অসাধু লোকেরা সব সময় এ ধরনের সুযোগের সন্ধান করবে।

তিনি বলেন, ‘মহামারি চলাকালীন অবৈধ বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সব স্তরে অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে দুর্নীতির উৎসগুলো অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। অন্যথায় এটি কখনও থামবে না।’

চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অনেকে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন উল্লেখ করে বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দুর্নীতির উৎস নির্মূল না করা হলে অর্থপাচার আরও বাড়বে।’

বেকারত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে মানবপাচারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ড. আহসান মনসুর।

একই কথা জানান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, ‘মহামারি চলাকালীন সব খাতে অবৈধ বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়েছে সেটি আমরা বলতে পারি না। তবে সরকার, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো।’

‘অসাধু ব্যক্তিরা দরিদ্র গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য নকল পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করবে কারণ মহামারিকালে সাধারণ মানুষের আয় কমেছে। সুতরাং গ্রাহকরা নিম্নমানের পণ্য কেনার চেষ্টা করবেন,’ বলেন এ অর্থনীতিবিদ।

এ বিষয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে আমরা নকল প্রসাধনীর একটি বড় চালান জব্দ করেছি। আমাদের গোয়েন্দারা খুবই সক্রিয়।’

কর্মসংস্থানের আশ্বাস প্রদানকারী ব্যক্তি বা সংস্থাগুলোর সাথে কথা বলার সময় চাকরি প্রত্যাশীদের ‘খুব সাবধান’ হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।