বেশি পণ্য আমদানি হলে, পণ্য মজুদ করে রাখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Published in আলোকিত বাংলাদেশ on 17 November 2020

রুপির বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে

ভারতীয় মুদ্রা রুপির বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। বছরের শুরু থেকেই ক্রমান্বয়ে পতন হচ্ছে রুপির মান। গেল বছরের জুলাইতে ভারতীয় ১ রুপির বিপরীতে বিনিময় হার ছিল ১ টাকা ২৩ পয়সা। তবে, সবশেষে টাকার মান বাড়ায় গেল ১৬ নভেম্বর ১ রুপির বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ১ টাকা ১৩ পয়সা। বছর শেষে রুপির বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ১০ পয়সা। করোনাভাইরাসের কারণে, বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে রুপির বিপরীতে ডলারের পাশাপাশি শক্তিশালী হয়েছে টাকার মান।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, এই সুযোগে ভারতীয় পণ্য অবাধে বাংলাদেশে ঢুকলে দেশীয় পণ্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। বিনিময় মূল্যের এই অবস্থা রপ্তানি খাতকে নতুন করে ঝুঁকিতে ফেলবে। ভারত থেকে দেশে বছরে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আসে। আর রপ্তানির বাজার মাত্র ১০০ কোটি ডলার। তিনি বলেন, বেশি পণ্য আমদানি হলে, পণ্য মজুদ করে রাখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। ফলে বাড়তি আমদানি প্রবণতা তৈরি হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদকের জন্য নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে দেশি ১ টাকার বিপরীতে রুপির বিনিময় হার ছিল ১ টাকা ২৩ পয়সা। নভেম্বরেই তা কমে হয় ১ টাকা ১৯ পয়সা। চলতি বছরের ১ মার্চে ১ টাকা ১৭ পয়সা গেলেও এপ্রিলে কমে হয় ১ টাকা ১১ পয়সা। গেল আগস্ট শেষে ১ রুপির বিপরীতে পাওয়া যায় ১ টাকা ১৬ পয়সা। সেপ্টেম্বরে ১ টাকা ১৫ পয়সা। অক্টোবরে মেলে ১ টাকা ১৫ পয়সা। আর নভেম্বরে সেটা কমে ১ টাকা ১৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। তথ্য বলছে, গেল এক বছরে প্রায় ১০ টাকা মূল্যপতন হয়েছে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ভারতের রুপির। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, একটা পর্যায়ে ১০০ রুপির দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১১২ টাকার সামান্য বেশি। অথচ এক বছর আগেও ১০০ রুপি পেতে ব্যয় হতো ১২৩ টাকারও বেশি। এর আগে ২০১৩ সালের আগস্টেও অনেকটা একইরকমভাবে রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার দাম বেড়ে গিয়েছিল।

প্রতিবছর ভারতে ভ্রমণ করে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক। টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায়, ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসার জন্য যারা ভারতে যাবেন তারা আগের চেয়ে লাভবান হবেন। কারণ রুপি কিনতে এখন টাকা কম লাগবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ভ্রমণ এবং চিকিৎসা ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করায় সেই সুযোগ পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণের কারণে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়েছে। বৈশ্বিকভাবে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করছে। ফলে ডলার ও টাকার বিপরীতে রুপির মান অবমূল্যায়ন হয়েছে।

করোনার কারণে ভারতে রপ্তানি রেমিট্যান্স কমে গেছে, অন্যদিকে চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে রুপির মান অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে রুপির বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে তেমন বড় প্রভাব পড়বে না। ভারতে ডলারের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা কিছুটা সমস্যায় পড়বেন। তাই বাংলাদেশেরও টাকার মান নির্ণয়ে চিন্তা করা উচিত। রুপির দাম কমায় রপ্তানিকারক হিসেবে ভারত লাভবান হতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ভারতে রুপির বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় দেশ থেকে যারা ভারতে পণ্য রপ্তানি করেন তারা কিছুটা সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আলোকিত বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ভারতীয় রুপির মান কমে যাওয়া মানে দেশের টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। ফলে আমদানিতে ব্যয় কম হবে। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ বিশ্বব্যাপী ভারতের পণ্যে সহজলভ্য হয়ে গেলে তাদের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন দেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ রপ্তানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, ফলে তাদের চাহিদা কমবে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা ও ভ্রমণে যারা যাবেন তাদের ব্যয় আগের তুলনায় কিছুটা কম হবে। কারণ রুপি কিনতে এখন আগের চেয়ে কম টাকা লাগবে। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে ভ্রমণ ভিসা বন্ধ তাই এ সুবিধাও কাজে লাগবে না। এজন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় টাকার মান অবমূল্যায়ন করার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় মুদ্রার মান কমেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন চিন্তা করা উচিত কিছুটা হলেও এটি কমানো। তা না হলে রপ্তানি চ্যালেঞ্জে পড়বে।