Originally posted in বণিকবার্তা on 17 November 2022
সরকারের বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে পাল্লা দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণও। বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে গত দুই বছরে (সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২) অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বিল-বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে জনগণের কাছ থেকে এ ঋণ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশিতে। সে হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ পরিক্রমায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণের মোট স্থিতির ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশেরও বেশি নেয়া হয়েছে গত দুই বছরে।
বাজেটের আকার সম্প্রসারিত হচ্ছে প্রতি অর্থবছরেই। এর সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে না রাজস্ব আহরণ। ফলে প্রতি অর্থবছরেই ঘাটতি বাজেটের অংকও আরো ভারি হয়ে উঠছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে ঘাটতি বাজেট ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশই ঘাটতি বাজেট। এ ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য বিদেশী উৎসের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও ঋণ নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে জনগণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ নেয়া হয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে। আর পরোক্ষ ঋণ নেয়া হয় ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল-বন্ড বিক্রির মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সরকারি ঋণ ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কভিডকালীন আর্থিক দুর্বিপাককে দায়ী করছেন নীতিনির্ধারকরা। যদিও তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত তিন অর্থবছরে দেশে বিপুলসংখ্যক নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও। এ ঘাটতি পূরণ করতে গিয়েই অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ নানা উৎসের ওপর সরকারের ঋণনির্ভরশীলতাও বেড়েছে।
কভিডের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার ঠিক আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ২১ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকায়। দুই বছরের মাথায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায়। সে হিসেবে গত দুই বছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া মোট ঋণের স্থিতি ২ লাখ ৮১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।
প্রতি অর্থবছরে সরকারের ঘাটতি বাজেটের আকার বাড়ার পেছনে প্রধানত রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘাটতি বাজেটের আকার যত বড় হবে সরকারের ঋণও তত বাড়বে। এ মুহূর্তে বাজেটের অন্যতম বড় ব্যয়ের খাত হয়ে উঠেছে ঋণের সুদ পরিশোধ। বিদ্যমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। দিন শেষে জনগণকেই সরকারের এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড-পরবর্তী সময়ে বাজেট ঘাটতি আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশী অর্থায়নও বেড়েছিল। কিন্তু যে পরিমাণে ঘাটতি বেড়েছে, সে পরিমাণে বিদেশী অর্থায়ন বাড়েনি। সেজন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার দিকে ঝুঁকেছে। ফলে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব কেমন হবে, সেটি দেখার বিষয়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র বা ট্রেজারি বিলগুলোয় সুদের হার অনেক বেশি। এর কারণে বাজেটে সুদ বাবদ মোট ব্যয়ের সিংহভাগই ধরা হয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে। এখন মোট পরিচালন ব্যয়ের প্রতি ৫ টাকার ১ টাকা সুদ। আর মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ বা ১১ শতাংশের মতো। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বাড়ার কারণে সুদের ব্যয় অনেক বেড়েছে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণ যদি যথেষ্ট পরিমাণে না বাড়ে, তাহলে সুদ বাবদ ব্যয় মেটাতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো তো যায়ই না; বরং যা আছে তা ধরে রাখাও কঠিন হয়ে যায়।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক অর্থবছরে এ বাবদ সরকারের সুদ ব্যয়ও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য ঘোষিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধের জন্য, যা মোট রাজস্ব বাজেটের ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা চলে যাবে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকি ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের বৃদ্ধিটা খুব স্বাভাবিক নয়। এর মূল কারণ হলো গত কয়েক বছরে হাতে নেয়া মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন। অর্থায়নের জন্য আমাদের রাজস্ব উৎস নেই বললেই চলে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়াও সহজ। খুব দ্রুত খরচও করা যায়। সব মিলিয়ে খুব স্বাস্থ্যকর কোনো পরিস্থিতি এটা নয়। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এর প্রভাব থাকে। সরকার কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোসহ অন্য বিষয়গুলোয় নজর দিচ্ছে না। আবার সরকারের প্রকল্পগুলোর ব্যয়ও ঠিকভাবে করা প্রয়োজন। কারণ অপব্যয় হচ্ছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বোঝা বেড়ে যাবে। ঠিকভাবে পরিশোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার বিষয়টি যেকোনো ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
গত কয়েক বছরে দেশে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে। গড়ে উঠেছে নানা ছোট-বড় ও মেগা অবকাঠামো। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অধীনে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শুধু ওই অর্থবছরেই এডিপির অধীন উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা এক ধাক্কায় ২৩৬টি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ হাজার ৯৭৬টিতে। ব্যয়ও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকায়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপির অধীনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। ২০২০-২১-এ এ ব্যয়ের পরিমাণ আরো বেড়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকায়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরেও উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ঠেকেছে ২ লাখ ১২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পর্যাপ্ত রাজস্ব আয় না বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির এ প্রবণতা দেশের বাজেটে ঘাটতির আকার বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতিতেই বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী উৎস থেকে গৃহীত ঋণের ওপরও।
গত অর্থবছরেও ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বিপরীতে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অর্থসংস্থানে বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। বাকি ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার।
প্রতি বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ বাড়ার পেছনে রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতাকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরও। বণিক বার্তাকে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ এখন স্বাধীনতা-পরবর্তী যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। শুধু ব্যাংক খাত থেকেই গত দুই বছরে সরকারের ঋণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ১৯৭১-পরবর্তী ৪৮ বছরে ব্যাংক থেকে যে ঋণ করা হয়েছে, গত দুই বছরে তার প্রায় সমান ঋণ করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক। এর মূল কারণ আমাদের রাজস্ব ঘাটতি। শুধু অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, বিদেশী ঋণও বেড়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে আর্থিক পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল, তাতে আর্থিক নীতির জায়গাটাও ভালো অবস্থানে ছিল। সেটা গত কয়েক বছরে অতিরিক্ত ঋণ করে বড়-ছোট প্রকল্পে ব্যয় করেছি। আমাদের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা এমনি এমনি হয়নি, এসব কারণেই হয়েছে। কারণ সবকিছু মিলিয়েই বর্তমান পরিস্থিতি। এখন শাক আনতে পান্তা ফুরায়, পান্তা আনতে শাক ফুরায়। এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয় না। রাজস্ব ছাড়া আর্থিক ব্যবস্থাপনা করা যা-তা কথা না। আর্থিক সংকট বাড়ছে, কারণ ঋণগুলো শোধ করতে হবে। সুদ পরিশোধে প্রতি বছরই বাজেটের বড় একটা অংশ খেয়ে ফেলছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি এবং বাকি ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা নেয়া হবে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে। এ ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ আরো বড় হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বণিক বার্তাকে বলেন, ঋণের ব্যবহার যথাযথ না হলে সেটি জনগণের দায় বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না। কাজেই কীভাবে ঋণ ব্যবহার হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। সরকারের ঋণ বাড়ছে, এর দুটো ব্যাখ্যা। একটি হলো সরকার হয় ব্যাংক থেকে নেয় অথবা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদহার অনেক বেশি, এটা সরকারের জন্য একটা বোঝা। সেজন্য সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো হয়েছে, সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো হয়েছে। এখন সরকার ব্যাংকের ওপর নির্ভর করছে। সরকারের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা কমে গিয়েছে, সেটাই দৃশ্যমান হচ্ছে। কর-জিডিপি অনুপাত কভিড-পূর্ববর্তী সময়ে ৯ শতাংশ ছিল, এখন সেটা কম-বেশি সাড়ে ৭ শতাংশ। এত কম রাজস্ব দিয়ে সরকার ব্যয় কীভাবে মেটাবে। অর্থাৎ ফিসকাল স্পেসে টানাটানি পড়েছে। এ কারণেই ব্যাংকঋণটা বাড়ছে। ফিসকল ম্যানেজমেন্টে ভারসাম্যে চাপ পড়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থনীতি উন্নয়নশীল ধারায় পড়ে গিয়েছে। একটি বড় সময় ধরে টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল। একটি বছরে প্রবৃদ্ধি হঠাৎ করে ৮ শতাংশ হয়ে পরে আবার নেমে গেল, তেমনটি হয়নি। এ ধরনের অর্থনীতিতে কেতাবি অর্থনীতিবিদরাও ঘাটতি অর্থায়ন করার কথা বলেন, বাস্তবধর্মী অর্থনীতিবিদরাও তাই বলেন। প্রবৃদ্ধি যখন ৭-এর ঘরে ছিল, আমাদের প্রয়োজন বেশি ছিল। এ প্রেক্ষাপটে আমরা ঋণ করেছি, এক্ষেত্রে দোষের কিছু দেখছি না। প্রবৃদ্ধি যখন টেকসই থাকে, তখন ঝুঁকি নিয়ে ঋণ করা যায়। বর্তমান সংকট বিবেচনায় ঋণ করার বিষয়ে ভাবা যাবে না। এখন দেশীয় টাকা দিয়েও প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো এসব ঋণ পরিশোধ করতেই হবে। এ অবস্থা চলমান থাকলে ভয়ের কারণ রয়েছে।