Published in সমকাল on 10 November 2020
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল
রপ্তানি বাণিজ্যে মিলবে বাড়তি সুবিধা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। যদিও বাণিজ্য বিশ্নেষকরা বলছেন, সরাসরি রপ্তানিতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে চাহিদা বাড়বে। রপ্তানিও বাড়বে। এ ছাড়া জলবায়ুসহ অন্যান্য চুক্তি থেকেও লাভবান হওয়ার মতো সুযোগ তৈরি হতে পারে।
বিশ্নেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রিপাবলিকান দলের সংরক্ষণ নীতির পরিবর্তে ডেমোক্র্যাটদের উদার নীতিতে ফেরার ঘোষণায় বিশ্ববাণিজ্যে গতি ফিরবে। ফলে পরোক্ষভাবেও রপ্তানি বাণিজ্যে উপকৃত হবে বাংলাদেশ।
জো বাইডেনের নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই এসব পরিবর্তন শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ২০ জানুয়ারি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের কম-বেশি ২২ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। সমজাতীয় অন্যান্য পণ্যসহ মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ শতাংশ আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বছরে কম-বেশি ৬০০ কোটি ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকার পণ্য যায় দেশটিতে। কভিডের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বর্তমানে নাজুক। প্রতিষ্ঠিত বেশ কিছু কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে। অন্তত ১৫টি ব্র্যান্ড দেউলিয়া হওয়ার প্রক্রিয়ায় ফাইল খুলেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের পোশাকের বড় ক্রেতা ব্র্যান্ড জেসিপেনি এবং গ্যাপের মতো ব্র্যান্ডও রয়েছে। অনেক মার্কিনি বেকার হয়েছেন। বাইডেন প্রশাসন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যেই কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কভিড থেকে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলোকে যৌক্তিকভাবে পাত্তা দেননি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের অধীনে রপ্তানিতে কী ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হলো জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল সমকালকে বলেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কভিডের কারণে চাপে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বেকার মার্কিনিরা কাজ পাবেন। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। স্থানীয়দের ক্রয় ও ভোগের ক্ষমতা বাড়বে। ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ ছাড়া উদার বিশ্বব্যবস্থার কথা বলেছেন বাইডেন। এতে ইউরোপসহ সারাবিশ্বের বাণিজ্যে নতুন আশাবাদ তৈরি হয়েছে। এতদিন ট্রাম্প প্রশাসনের সংরক্ষণ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যও কিছুটা সংকুচিত ছিল। সেটা কেটে গেলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে। চাহিদা বাড়বে। বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগ বাড়বে। তবে স্থগিত থাকা শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) ফেরত পাওয়ার বিষয়টি সহজ হবে না। বরং কঠিনও হয়ে যেতে পারে। কারণ, রিপাবলিকানরা বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, পরিবেশ, গণতন্ত্র- এ রকম বিষয়গুলোতে আপসহীন। সে বিবেচনায় এসব দিক থেকে দুর্বল অবস্থানে থাকা বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
কভিড আক্রান্ত গেল অর্থবছরেও যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৮৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের গেল চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রপ্তানি হয়েছে ২২৭ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে পোশাকের অংশ ১৯৭ কোটি ডলারেরও বেশি। এই প্রবণতা বিশ্নেষণে দেখা যায়, কভিডের মধ্যেও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাকের সার্বিক রপ্তানির হারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির হার বেশি। এ সময় সার্বিক অর্থাৎ সারাবিশ্বের পোশাক রপ্তানি বেশি হয়েছে ১ শতাংশের মতো। অন্যান্য সব পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১ শতাংশেরও কম।
পোশাক খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে মাইসিস গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন সমকালকে বলেন, অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের উত্থান বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সুখবর। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের সংরক্ষণ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের চাহিদা কমেছে।
উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফও প্রায় একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য ৮ দেশের সঙ্গে ট্রান্স প্যাসেফিক (টিপিপি) চুক্তিতে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। ওবামা প্রশাসনের সময় ওই চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার শেষ পর্যায়ে ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তা বাতিল করে দেন। অনেকের মধ্যে শঙ্কা ছিল, ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় ফিরলে আবারও চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। সেই শঙ্কাও কাটল।