Published in সমকাল on Wednesday 20 May 2020
টিকে থাকার বাজেট প্রণয়ন করতে হবে
অন্যান্য বছরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেট কোনোভাবেই গতানুগতিক হওয়া চলবে না। স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন বাজেট করতে হবে। এর পর সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি ও শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের লক্ষ্যে নয় বরং টিকে থাকার উদ্দেশ্যে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চিত যাত্রা আরও বেশি সমস্যাসংকুল হবে।
দেশবরেণ্য শিক্ষক ও গবেষকরা গতকাল মঙ্গলবার ‘প্রি-বাজেট ভার্চুয়াল ডায়ালগ ২০২০’ শীর্ষক ওয়েবেনিয়ারে এমন মতামত দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. কামাল উদ্দিন।
উপাচার্য বলেন, মহামারির এ সংকট শুধু বেঁচে থাকাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেনি, মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা ও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে অন্য অনেক খাত থেকে কমাতে হবে। এক্ষেত্রে সক্ষমতা, সুশাসন ও জবাবদিহির বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে। বাজেট প্রণয়নে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের বাইরে গিয়ে গবেষকদের মতামত নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, এখন এমনও অনেক পরিবার আছে, যাদের সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ পরিবার কী করে চলবে, সে বিষয়েও বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন বলে তিনি উলেল্গখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, মহামারির কারণে খুব অনিশ্চিত যাত্রায় রয়েছি। এ সময়ে টিকে থাকার প্রচেষ্টা নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সরকারকে এ বিষয় মাথায় রেখে বাজেট করতে হবে। এ বাজেট হতে হবে ‘আউট অব বক্স’। তিনি আরও বলেন, অনেক খারাপের মধ্যে ভরসা হলো খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনেক খাবার হয়তো থাকবে, কিন্তু কেনার মতো অর্থ সবার কাছে থাকবে না। সবাইকে ত্রাণ দিয়েও বাঁচানো যাবে না। তাই নগদ সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা-মহামারি পরিবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে পরিকল্পনা খুবই জরুরি। দেশের বিনিয়োগের এখনও ৮০ শতাংশ আসে ব্যক্তি খাত থেকে। এটা যাতে না কমে, তা নিশ্চিতে বাজেটে ব্যবস্থা থাকা উচিত। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে কৃষিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কৃষিতে শ্রমঘন প্রকল্প চালু করে কাজ হারানো মানুষের কাজের সুযোগ করতে হবে সরকারকে।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, মহামারি দুর্যোগের মধ্যে আম্পান নামের সুপার সাইক্লোন আঘাত করতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঝড়টি এ অঞ্চলে আঘাত করলে মানুষের বেঁচে থাকাটা বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। এদের জন্য বাজেটে যেন বিশেষ বরাদ্দ থাকে, সে বিষয়ে জোর দেন তিনি।
মূল বক্তব্যে ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ বলেন, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের কাছে যে ধরনের তথ্য থাকা দরকার, বর্তমান পরিস্থিতিতে ততটা নেই। সবার প্রত্যাশা স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও কৃষিতে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট করতে হবে। ডব্লিউএইচও সনদে স্বাক্ষরকারী হিসেবে জিডিপির ৪ শতাংশের পরিমাণ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করার কথা। বর্তমানে তা ১ শতাংশেরও কম। মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। মহামারির কারণে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামা মানুষের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, এবারের বাজেট কোনোভাবেই গতানুগতিক হওয়া চলবে না। স্বাস্থ্যসহ বিশেষ খাতগুলোতে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানো না হলে দুর্নীতি বাড়বে। রাজস্ব আয় কমার কারণে জাতীয় কৃচ্ছ্রতা সাধন নীতি নিতে হবে। জরুরি সহায়তা বিতরণে জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় নজরদারি করতে হবে।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক তৈয়াবুর রহমান বলেন, অনেক দেশে বাজেট আগাম প্রকাশ করে সবার মতামত চাওয়া হয়। এসব পরামর্শ মেনে বাজেটের রূপরেখাতেও পরিবর্তন আসে। আমাদের এখানে এ চর্চা শুরু হওয়া দরকার।