Originally posted in NewsBangla24 on 2 January 2022
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সারা দেশে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই রয়েছে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকার আমানত। সারা দেশের মানুষ ঢাকায় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করতে চায়।
ঢাকায় যে পরিমাণ টাকা আছে, সারা দেশ মিলিয়েও তা নেই। ক্ষুদ্র সঞ্চয় এবং মেয়াদি আমানত মিলিয়ে সারা দেশের মধ্যে ঢাকার ধারেকাছেও নেই দেশের কোনো অংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই রয়েছে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকার আমানত।
শুধু আমানত নয়, ঋণেও এগিয়ে রয়েছে ঢাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই গেছে ৭ লাখ ৮৬ কোটি টাকার ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন ঢাকার বাইরেও অনেক উৎপাদন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু সবাই বিনিয়োগ ও সঞ্চয় দুটিই ঢাকায় করতে চায়। বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করলেও অনেকে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে স্থায়ী হচ্ছেন। ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করছেন।
‘ঢাকাকেন্দ্রীক উন্নয়ন অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো নয়। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন উন্নত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন করতে পারলে সঞ্চয়ের প্রতিফলন সেখানেও পাওয়া যাবে। এখন গ্রামে উপার্জন করে শহরে সঞ্চয় করে। বিকেন্দ্রীভূত উন্নয়ন দরকার।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট থেকে আরও প্রকটতর হচ্ছে। সঞ্চয়, আয় বৈষম্য, দারিদ্র্য সীমার নিচের জনগোষ্ঠী – সব কিছুতে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোক অনেক বঞ্চিত।
ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় কলকারখানা ও ব্যবসা করলেও ঋণ নিচ্ছেন রাজধানীর ব্যাংকের শাখাগুলো থেকেই। কারণ, ঢাকায় সহজে ঋণ পাওয়া যায় এবং সমস্যা হলে সমাধানও সহজে হয়। বেশির ভাগ চাকরিজীবী ঢাকায় অবস্থান করায় আমানতও এখানেই বেশি জমা পড়ছে। আর এলাকার চেয়ে ঢাকায় যে কোনো বিষয়ে মিলছে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা।’
বিভাগ হিসেবে ঢাকা বিভাগের ব্যাংকের শাখাগুলোতে মোট আমানত এসেছে ৮ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট আমানতের প্রায় ৬৩ শতাংশ। এই আমানত শুধু ঢাকা জেলায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ২৮ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকার এবং গাজীপুরে ২৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
এর পরে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে আমানতের পরিমাণ ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকার আমানত। এরপরে নোয়াখালীতে ১৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, ফেনীতে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা ও চাঁদপুরে ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
আমানতের দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানে খুলনা। ওই বিভাগে আমানতের পরিমাণ ৬১ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া রাজশাহীতে ৫৮ হাজার কোটি টাকা, সিলেটে ৫৭ হাজার কোটি টাকা, রংপুরে ২৮ হাজার ৮০১ কোটি টাকা, বরিশালে ২৮ হাজার১৪০ কোটি টাকা ও ময়মনসিংহে ২১ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
ঋণে পিছিয়ে বরিশাল
ঋণ বিতরণের দিক দিয়েও ঢাকা স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে। এই বিভাগে দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থার মোট ঋণের ৪৭ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। পরিমাণের দিক থেকে তা ৭ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলাতেই ৭ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ। এরপরে নারায়ণগঞ্জে ১৭ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, গাজীপুরে ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা, নরসিংদীতে ৬ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ও টাঙ্গাইলে ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও ঋণ সেভাবে বাড়েনি। চট্টগ্রামে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলাতেই দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ।
ঋণ বিতরণে এর পরে রয়েছে খুলনা, যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহীতে প্রায় ৪২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা, রংপুরে ২৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, ময়মনসিংহে ১৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা, সিলেটে ১৩ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ও বরিশালে ১৩ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।