Published in কালের কন্ঠ on Tuesday 14 April 2020
কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের অভিঘাত আমাদের অর্থনীতিতে যেভাবে প্রভাব পড়েছে সেটা মোকাবেলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। করোনায় হতদরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দৈনিক মজুরিতে যারা কাজ করে তারা কাজ হারিয়েছে। এ ছাড়া এর প্রভাবে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফলে দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকা মধ্যবিত্তরাও এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যাচ্ছে। তাদেরও সাহায্যের প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা যেন গরিব বা অসচ্ছলরা স্বচ্ছতার সঙ্গে পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আমি মনে করি, এক কোটি ৯০ লাখ ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর জন্য আগামী দুই মাস পর্যন্ত সাহায্য প্রয়োজন। তাদের মাসিক আট হাজার টাকা করে দেওয়া হোক। সরাসরি তাদের হিসাবে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে। সাপ্তাহিক দুই হাজার টাকা করে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকাটা চলে যাবে। এই টাকাটা হিসাব করলে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে। যেটা কিনা আমাদের জিডিপির ১ শতাংশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে যদি বড় শিল্পকে ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি, যেটা অনেকটা ঋণের মাধ্যমে আসবে। কিন্তু তারা হচ্ছে খুবই দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠী, তাদের আয়ের আর কোনো উপায় নেই। তাদের সাহায্য দিতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই অর্থটা কোথা থেকে আসবে। আমাদের রাজস্ব আয়ের অবস্থাটা খুব ভালো নেই। করোনাভাইরাস এমন সময় এসেছে যখন কিনা অর্থনীতি নাজুক অবস্থার মধ্যে ছিল।
ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহের হার কমে যাচ্ছিল, শুধু একটা আশার আলো ছিল রেমিট্যান্স। করোনাভাইরাস আসার পরে রেমিট্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে এক লাখ জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চলে এসেছে। তারা কবে, কখন যেতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তার পরও আরো এক লাখ মানুষ কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। তারাও এই ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর অংশ। তাদের আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই টাকাটা যেটা বিভিন্নভাবে পাব, একটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পলিসির হার কমানোর মাধ্যমে তারল্য সৃষ্টি এটা একটা।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যেসব প্রকল্প দেরি করা যায় সেগুলো এখন স্থগিত রাখা। বিশেষ করে যেগুলো নতুন করে শুরু হয়েছে সেগুলোর কাজ খুব একটা এখনো শুরু হয়নি। সেগুলোকে কিছুদিন স্থগিত রাখা। আবার প্রকল্প না থাকলে কিভাবে কর্মসংস্থান হবে, এখানে একটা যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় রয়েছে। ভারসাম্যের বিষয় রয়েছে যাতে কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব না পড়ে। সরকারের বিভিন্ন ব্যয় যেমন বিদেশে যাওয়া, সেগুলো যদি আমরা কমাতে পারি সেখান থেকে একটা আয় হবে। যদিও সেটা খুব কম। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের জোগাড় করতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অনেক ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। আমরা কিন্তু তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারি।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য অনেক কম হওয়াতে কিছুটা সাশ্রয় করতে পারব। সাশ্রয়ের টাকাটাও কিন্তু এখানে যোগ করতে পারি। স্বাস্থ্যঝুঁকি এখন অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দুটিকে পাশাপাশি একসঙ্গে চালাতে হবে। গুরুত্ব দিতে গিয়ে মানুষ না খেয়ে মরবে সেটাও যেন না হয়। সুচারুভাবে প্রণোদনা কর্মসূচিগুলো পরিচালনা করব। গরিব মানুষদের জন্য এখনই প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের টাকাটা যেন তারাই পায় স্বচ্ছতার সঙ্গে।