যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার ও জিএসপি, দুটি বিষয়ে কণ্ঠ জোরালো করতে হবে: মোস্তাফিজুর রহমান

Published in প্রথম আলো on Friday 5 May 2017

ঢাকায় টিকফার তৃতীয় বৈঠক ১৭ মে

জিএসপি ও শুল্কমুক্ত রপ্তানির দাবি উঠবে টিকফা বৈঠকে

gsp_53418

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) তৃতীয় বৈঠক ১৭ মে ঢাকায় হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগসম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের চাওয়া থাকবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে স্থগিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা (জিএসপি) ফেরত পাওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অপরদিকে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় (ইউএসটিআর)। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমান পদমর্যাদার দপ্তর হচ্ছে ইউএসটিআর।

ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু বিদেশে থাকায় বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. মুনীর চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রধান চাওয়াগুলো ফোরামের বৈঠকে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।’ প্রধান চাওয়াগুলো কী—জানতে চাইলে কোনো জবাব দিতে চাননি তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো অবশ্য জানায়, আগের দুটির মতো এবারের বৈঠকেও বাংলাদেশের প্রধান চাওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্তভাবে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশাধিকার এবং স্থগিত জিএসপি ফেরত পাওয়া।

টিকফার তৃতীয় বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল গত ১৩ ডিসেম্বর। তার আগে গত ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে নতুন তারিখের প্রশ্ন ওঠে। গত ২৭ নভেম্বর সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এক বৈঠক করে আগের তারিখটি বাতিল করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টিকফার আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকেই বাংলাদেশকে একটি চুক্তি সইয়ের তাগিদ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে কিছু বিষয় পরিবর্তন করে টিফা থেকে করা হয় টিকফা।

শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই মাস পর ১৭ জুন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয় টিকফার খসড়া। এর ঠিক ১০ দিন পর ২৭ জুন বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং পরের মাসেই কারখানা পরিবেশের উন্নয়নসহ বেঁধে দেয় ১৬ দফা শর্ত।

এরপর টিকফা সইয়ের তাগিদ দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়, ‘টিকফা সই হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য স্বার্থসম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশের আলোচনার জায়গা তৈরি হবে এবং সুযোগ তৈরি হবে স্থগিত জিএসপি ফিরে পাওয়ারও।’

শেষ পর্যন্ত টিকফা সই হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। চুক্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খোলামেলা ও দৃষ্টিগ্রাহ্য ভালো পরিবেশ তৈরি করা হবে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা ও রক্ষণশীল উপাদানগুলো কমিয়ে আনা হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে গঠিত হয় একটি ফোরাম। এ ফোরামের বছরে কমপক্ষে একবার বৈঠক করার কথা।

সেই অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় বসে ফোরামের প্রথম বৈঠক। আর দ্বিতীয় বৈঠক হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। দুই বৈঠকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং স্থগিত জিএসপি ফেরত চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়, কিন্তু আমাদের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক ৩ শতাংশের মধ্যে। আবার স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবেও আমরা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাই। টিকফার বৈঠকে এ অন্যায্যতাগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত নভেম্বরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জিএসপি স্থগিত করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং জিএসপি না পেলে টিকফা অর্থহীন হবে।’ মন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়টি ঠিক নয়। আর জিএসপি ফেরতের সিদ্ধান্ত টিকফা বৈঠক থেকে হওয়ার নয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেন।’

টিকফা সইয়ের পর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার জায়গাটি তৈরি হলেও বাংলাদেশ এ থেকে কার্যকর কোনো ফল পায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার ও জিএসপি—একটিরও সিদ্ধান্তের জায়গা টিকফার বৈঠক নয়। শুল্কের সিদ্ধান্ত হয় কংগ্রেসে আর জিএসপির সিদ্ধান্ত হয় ইউএসটিআরের শুনানিতে। তার পরও দুটি বিষয়ে কণ্ঠ জোরালো করতে হবে এই কারণে যে তারা যাতে দেশে ফিরে বাংলাদেশের চাওয়ার কথাগুলো জানাতে পারে।’