স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরোলেও বাংলাদেশের নিরন্তর মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছেঃ রেহমান সোবহান

Published in প্রথম আলো on Tuesday, 31 January 2017

জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক স্মারক বক্তৃতায় রেহমান সোবহান

বাংলাদেশের নিরন্তর মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে

Prof Rehman Sobhan
‘জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক গুণীজন বক্তৃতামালা’ কর্মসূচির প্রথম আয়োজনে গতকাল বক্তৃতার আগে আলাপরত (বাঁ থেকে) অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তাঁদের পেছনে গওহর রিজভী ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের অনেক অর্জন থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় সবার জন্য সমতাভিত্তিক যে সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, সেটি আজও বাস্তবায়িত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরোলেও বাংলাদেশের নিরন্তর মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে। ভবিষ্যদের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অয়োজিত প্রথম জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন গুণীজন বক্তৃতামালায় রেহমান সোবহান এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

রেহমান সোবহানের বক্তৃতার শিরোনাম ‘বাংলাদেশের নিরন্তর মুক্তির সংগ্রাম একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের সন্ধানে’। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতিরাষ্ট্র গঠন, সবার জন্য খাদ্য, উদ্যোক্তা গড়ে ওঠা, নারী উদ্যোক্তা, অভিবাসী শ্রমিক, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নতুন প্রজন্মসহ নানা দিক তুলে ধরেন।

অধ্যাপক রেহমান সোবহানের দীর্ঘ এই বক্তব্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উঠে আসে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে দেশে সত্যিকার অর্থেই একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা দরকার, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এ ছাড়া সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থাও করা দরকার। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হলে স্বচ্ছতা তৈরি হয় না।

রেহমান সোবহান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল পুরোপুরি স্বচ্ছ থাকা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলো যখন প্রার্থী ঠিক করবে, সেখানে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারে যেন অন্তত ৫০ শতাংশ নারী থাকেন। কৃষক, শ্রমিকসহ সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত।

দেশে সুশাসন তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইনসহ নানা সুপারিশ তুলে ধরেন রেহমান সোবহান। তিনি তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা দরকার। সেটা হলে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন হবে এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা জঙ্গিবাদও মোকাবিলা করা যবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ব্র্যাকের শুরু থেকেই আবদুর রাজ্জাক ছিলেন। সুফিয়া কামাল ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদে আছেন শুনে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। সুফিয়া কামাল টানা ১০ বছর ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। এ সময় পাঁচ বছর ছিলেন আবদুর রাজ্জাক।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নাসরিন আক্তার। এরপর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি আবুল খায়ের বলেন, ‘আমরা জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন থেকে গবেষণা, প্রকাশনাসহ নানা কাজ করব। তরুণ প্রজন্মকে আমরা আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে জানাতে চাই। সবার কাছে অনুরোধ, রাজ্জাক স্যারের কাছ থেকে আপানার যাঁরা শিখেছেন, যাঁরা তাঁর ভাবনাগুলো জানেন, তাঁরা সেগুলো লিখুন।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমার স্যার রেহমান সোবহান তাঁর স্যার আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলেছেন এবং আরেক স্যার ফজলে হাসান আবেদ সভাপতিত্ব করছেন। জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে প্রথম বক্তৃতায় রেহমান সোবহানই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।’

জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পাণ্ডিত্যে ও জ্ঞান অন্বেষণে সারা জীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, তাঁর সঙ্গে মিশে এ দেশের বহু বিদ্যার্থী নিজেদের মানসভুবনকে করেছেন সমৃদ্ধ। আর সে কারণেই তিনি হয়েছিলেন শিক্ষকদেরও শিক্ষক। সারা জীবন তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁকে স্মরণ করতেই জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ইমেরিটাস অধ্যাপক আহরার আহমদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তাঁর প্রাণ, তাঁর ভালোবাসা, তাঁর আস্থা। তিনি আমাদের চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন। ক্ষমতার লোভ, স্বীকৃতির লোভ—সবকিছু থেকে তিনি নির্মোহ ছিলেন। কোনো ভানভণিতা বা মুখোশ তাঁর ছিল না।’