Dr Debapriya Bhattacharya on the upcoming budget

CPD Distinguished Fellow Dr Debapriya Bhattacharya speaks to the Prothom Alo on how the Finance Minister is in the most agreeable position this year for formulating the National Budget for FY2016,

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সুবিধা নিয়ে এবার বাজেট প্রণয়ন করতে পারছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল, সুদের হার নিম্নগামী, বাজেট ঘাটতি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এবং সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ইতিবাচক। এর ওপরে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় সার ও অন্যান্য ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগও তৈরি হয়েছে।

সমস্যা হলো এতগুলো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ এখনো চাঙা হলো না। সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক দিকগুলো কেন কার্যকরভাবে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ।

In addition, he also said,

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করছেন, এবারের বাজেটের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হবে সম্পদ আহরণ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক—দুই ক্ষেত্রেই তাল মেলাতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী। তাই কিছুটা হলেও এবার বাজেট ঘাটতি বাড়তে পারে।

সবশেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার বাজেটীয় পদক্ষেপ নিয়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির স্থিতিচক্রকে ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। মূল কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দুই-আড়াই বছরে সংস্কারের যে উদ্যোগ ছিল সেটি মাঝপথে হারিয়ে গেছে। যেমন, বিরাষ্ট্রীয়করণ, জনপ্রশাসন, অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সম্পদ ব্যয়, বৈদেশিক সম্পর্কের নতুন নিয়মনীতি পরিপালন ইত্যাদি। এসব সংস্কারের উদ্যোগ যদি বাজেটের মাধ্যমে না আসে এবং তা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়িত না হয় তাহলে কাজের কাজটি হবে না। এর ওপরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তো রয়েই গেছে।

 

Read the full report:

Published in Prothom Alo on Friday, 29 May 2015.

বাজেট ২০১৫–১৬
বাজেট বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি কমছে

শওকত হোসেন

দেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন অনেকটা মান্না দের সেই গানটির মতো। ‘দীপ ছিল শিখা ছিল, শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বললো না।’ অর্থনীতির এই ‘তুমি’টা হচ্ছে বিনিয়োগ। অনুকূল একটা সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়েও ‘৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফাঁদ’ থেকে দেশ বের হতে পারল না কেবল বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণেই।

অর্থনীতিতে এখন আসলেই ভালো অনেক কিছু আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, প্রবাসী-আয়ও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত এখন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। বিনিময় হার ঠিকঠাক। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সামান্য হলেও আমদানি বাড়ছে। লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে।

আবার আন্তর্জাতিক অর্থনীতিও ভালো অবস্থায়। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। খাদ্যপণ্যের দাম কম। কমে গেছে জ্বালানি তেলের দামও। এতে সরকারের সাশ্রয় বাড়ছে, জ্বালানি তেল বেচে মুনাফা করছে সরকার।

এতগুলো ভালো সূচক থাকা সত্ত্বেও দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি থেকে গেছে সেই ৬ শতাংশের ঘরেই। অর্থনীতি এখন মূলত ৬ শতাংশের ফাঁদে আটকে গেছে। আরও খারাপ দিক হচ্ছে, গত তিন অর্থবছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগতভাবে কমছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় বাজেটের আয়তন যতই বাড়াচ্ছেন, প্রবৃদ্ধি ততই কমেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে এ এম এ মুহিতের প্রথম বাজেটটি ছিল ২০০৯-১০ অর্থবছরের। ওই অর্থবছরের বাজেট ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা আর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এরপরের দুই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর থেকেই মূলত বাজেটের আকারের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করেছে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি।

২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে কমে হয় ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেট ২ লাখ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ওই অর্থবছরের ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটির বাজেটে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন হচ্ছে, এবারের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও সরকার বলছে প্রবৃদ্ধি হবে আরও বেশি, ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর প্রাক্কলন ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, প্রতিবারই অর্থমন্ত্রী বিশাল প্রাক্কলন করেন, কিন্তু অর্জন করতে পারেন না একবারও। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটেই অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, এখন প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ।

একই অর্থমন্ত্রী আবারও বিশাল এক বাজেট নিয়ে আসছেন ৪ জুন। নতুন বাজেট হবে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা ৭ বা ৭ দশমিক ১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই হারে প্রবৃদ্ধি হলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হতে পারবে না। এ জন্য অবশ্যই গড়ে প্রতি বছর সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান হারে প্রবৃদ্ধি হলে বাংলাদেশ বড়জোর নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হতে পারবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সুবিধা নিয়ে এবার বাজেট প্রণয়ন করতে পারছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল, সুদের হার নিম্নগামী, বাজেট ঘাটতি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এবং সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ইতিবাচক। এর ওপরে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় সার ও অন্যান্য ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগও তৈরি হয়েছে।

সমস্যা হলো এতগুলো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ এখনো চাঙা হলো না। সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক দিকগুলো কেন কার্যকরভাবে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ।

ব্যর্থতা বিনিয়োগেই: দেশে এখন বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এপ্রিলে দেশের অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিনিয়োগের হার আরও ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর মূল বিনিয়োগ আসতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। অথচ ১০ বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ ২১ থেকে ২২ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, দুই বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ, এখন তা ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। দেশে এখন নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ফাঁদ থেকে বের হতে পারবে না।

দুই বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এর পাশাপাশি আছে উচ্চ সুদহার, অবকাঠামোর সমস্যা ও অনিশ্চয়তা। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে না পেরে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাড়িয়েছেন সরকারি বিনিয়োগ। বাজেটের আকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি। এর ফলে পাঁচ অর্থবছর আগেও সরকারি বিনিয়োগ ছিল ৪ শতাংশের সামান্য বেশি, সেটি এখন প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ যে এখনো গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, তার বড় কারণ হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে থাকলেও মোট বিনিয়োগ বেড়ে হয়েছে জিডিপির প্রায় ২৯ শতাংশ।

সব সূচকই ভালো নেই: অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুটি সূচকই ভালো নেই। এর মধ্যে কোনো রকমে প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে দেশের রপ্তানি। অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে তা ছিল সাড়ে ১১ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে আমদানি বেড়েছে অনেক বেশি। মার্চ পর্যন্ত সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশের বেশি, আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৯ শতাংশ। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে, বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে চলতি হিসাবে।

সরকারের বাজেট পরিকল্পনা অনেকখানিই নির্ভরশীল রাজস্ব আয়ের ওপর। সেই রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি থাকছে চলতি অর্থবছরে। অর্থবছর শেষ না হতেই এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত আদায় হবে এর চেয়েও কম। এনবিআর সূত্রগুলো বলছে, সব মিলিয়ে আদায় হতে পারে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে বাজেটের বিশাল আকার করলেও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে পিছিয়েই আছেন অর্থমন্ত্রী।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করছেন, এবারের বাজেটের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হবে সম্পদ আহরণ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক—দুই ক্ষেত্রেই তাল মেলাতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী। তাই কিছুটা হলেও এবার বাজেট ঘাটতি বাড়তে পারে।

সবশেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার বাজেটীয় পদক্ষেপ নিয়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির স্থিতিচক্রকে ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। মূল কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দুই-আড়াই বছরে সংস্কারের যে উদ্যোগ ছিল সেটি মাঝপথে হারিয়ে গেছে। যেমন, বিরাষ্ট্রীয়করণ, জনপ্রশাসন, অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সম্পদ ব্যয়, বৈদেশিক সম্পর্কের নতুন নিয়মনীতি পরিপালন ইত্যাদি। এসব সংস্কারের উদ্যোগ যদি বাজেটের মাধ্যমে না আসে এবং তা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়িত না হয় তাহলে কাজের কাজটি হবে না। এর ওপরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তো রয়েই গেছে।