Dr Khondaker Golam Moazzem on dealing Bangladesh’s challenges for growth

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ানো, বিদেশী বিনিয়োগ জোরদার করা, পণ্যের আমদানি-রফতানির ভারসাম্য রক্ষা, কর প্রদানের হার বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেন।

Published in Bonik Barta on Tuesday, 20 October 2015.

সাফা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা
আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে শক্তিশালী আর্থিক অবকাঠামো দরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সামনে বিরাট সুযোগ রয়েছে। এজন্য ব্যাংক, বীমা, পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাত সংস্কারের পাশাপাশি শক্তিশালী আর্থিক অবকাঠামো দরকার বলে মনে করছেন পেশাদার হিসাববিদ ও অর্থনীতিবিদরা।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সাফা) আন্তর্জাতিক সম্মেলন-২০১৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন তারা। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুনসহ আইসিএমএবির সভাপতিসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আফগানিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর পেশাদার হিসাববিদদের অংশগ্রহণে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজক দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। এ অঞ্চলের পাঁচ শতাধিক পেশাদার হিসাববিদ এ সম্মেলনে অংশ নেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে এ সম্মেলনে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনারে শিল্প ও সেবা খাতের উন্নয়নে আর্থিক সংস্কারে সাফার সুপারিশ তুলে ধরেন আইসিএমএবির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম মজুমদার। সাফার সুপারিশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন সাফার সদস্যরা। সম্মেলনে সাফার সদস্যরা নিজ নিজ দেশের আর্থিক খাতের অবস্থা উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. মসিউর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য মুক্তবাজার অর্থনীতি, অর্থনীতির বৈশ্বিক জ্ঞান, জবাবদিহিতা ও নৈতিক শাসন একান্ত প্রয়োজন। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে মুক্তবাণিজ্যের কারণে দেশীয় পণ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে পণ্যের সরবরাহ, গুণগত মান ও যৌক্তিক মূল্য ঠিক থাকলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। প্রযুক্তি উন্নয়ন ও আর্থিক সংস্কারের মাধ্যমে শিল্প এবং সেবা খাতের উন্নয়ন ঘটালে কোনো চ্যালেঞ্জই অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ানো, বিদেশী বিনিয়োগ জোরদার করা, পণ্যের আমদানি-রফতানির ভারসাম্য রক্ষা, কর প্রদানের হার বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সম্মেলনে অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য শিল্প ও সেবা খাতের আর্থিক সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ মোজাফ্ফর আহমেদ। তার প্রস্তাবে স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট-২০১৩, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন সম্পর্কিত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রুলস-২০১২, মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়ন আইন ২০০১ ও মেনুপুলেশন বন্ধে আন্তর্জাতিক মানের সার্ভিলেন্স সফটওয়্যার পুনর্গঠনের শুপারিশ করেন। এছাড়া তিনি বিমা খাতের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধনসহ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রাথমিক শিক্ষার বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন, নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় শিল্প ও সেবা খাতের আর্থিক সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সম্মেলনে শ্রীলংকার পক্ষে দেশটির অর্থনীতিবিদ আদ্রিয়ান পেরেরা ও পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ আনিস উর রহমানসহ ভারত, নেপাল ও ভুটানের অর্থনীতিবিদরা নিজ নিজ দেশের আর্থিক খাতের সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন বলেন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংকটসহ অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে থেকেও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উন্নয়নের যে সফলতা দেখিয়েছে তা প্রশংসনীয়। অর্থনৈতিক অগ্রগতির যুগে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো একই রকম হওয়া এবং পরস্পরের সহযোগিতায় তা সহজতর হবে।

আইসিএমএবি সভাপতি এএসএম শায়খুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইসিএমএবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম, আইসিএমএবি সেক্রেটারি আব্দুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।