Professor Mustafizur Rahman on central bank’s role in investment

Published in The Daily Manobkantha on Friday, 29 May 2015.

হরতাল অবরোধের ক্ষতি : বাজেটে প্রণোদনা পেতে ব্যবসায়ীদের দৌড়ঝাঁপ

মাহফুজুল ইসলাম

আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার বাকি আর মাত্র ৭ দিন। এ বাজেটে হরতাল-অবরোধের ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে সরকার পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা পেতে চলছে ব্যবসায়ীদের দৌড়ঝাঁপ। রাজনৈতিক পরিচয়সহ বিভিন্ন কৌশলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আসছে বাজেটে কোনো কর সুবিধা থাকছে না। তবে অনেকে নগদ সহায়তা প্রণোদনা পাবেন বলে সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে আশা করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রণোদনায় নগদ সহায়তা, বিভিন্ন মেয়াদে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব সম্মিলিত চিঠি এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ), তৈরি পোশাক শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বীমা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশেন (বিআই), বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং পর্যটন খাতসহ বিভিন্ন খাতের সংগঠনগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, বাজেটে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তার কারণ যেসব সংগঠন প্রণোদনা চেয়েছে তাদের প্রণোদনা দিলে প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তার ক্ষতিপূরণ পাবেন না। বরং আগামীতে যাতে হরতাল-অবরোধ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া। এরপরও সরকার যদি প্রণোদনা দিতে চায় তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণ সমন্বয় সুবিধা দিতে পারে।

সেন্টার ফর ফলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এখনো ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ তেজি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গতি আনতে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, হরতাল অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ সুদ মওকুফ, কালো টাকার উৎস বন্ধ, করদাতাদের ট্যাক্সকার্ড প্রদান, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে মূসক ৫০ শতাংশ ছাড়, করদাতার সংখ্যা বাড়ানোসহ এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে একটি প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ মজুদ আছে কিন্তু তার পরেও আস্থার অভাবে নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকারের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনাসহ বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতারুজ্জামান বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে হরতাল-অবরোধের ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনার অংশ হিসাবে সরকারের কাছে কিছু নগদ সহায়তা চেয়েছি। বিশেষ করে ফার্নিচার রফতানি উন্নয়নে আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত ফার্নিচার রফতানির বিপরীতে ডিউটি ড্র-ব্যাক সুবিধার পরিবর্তে বিকল্প সহায়তা হিসেবে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি।

পোশাক খাতের প্রধান সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএ আর্থিক ও ব্যাংকিং, বন্দর, বীমা এবং স্বল্পমেয়াদে রফতানি খাতের জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা চেয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক ও ব্যাংকিং সংক্রান্তের মধ্যে রয়েছে হরতাল-অবরোধে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ৩ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস পর ঋণ শ্রেণীবিন্যাস করা এবং ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে পরিশোধের সুযোগ দেয়া, বর্তমানে গৃহীত ৫ বছরের প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর বৃদ্ধি করে ৮ বছরের কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়া এবং রফতানি খাতের জন্য নগদ সহায়তার সুযোগ দেয়া হয়েছে তার জন্য মন্ত্রণালয় হতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়করণের উদ্যোগ নেয়া প্রমুখ। এমসিসিআই সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, ব্যাংক, বীমা কোম্পানি ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার পুনর্বিন্যাস ও তা কমিয়ে আনাসহ ৭৫টি বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন হরতাল-অবরোধে ব্যাংক ঋণ ৫০০ কোটি ও তদূর্ধ্ব ঋণ তফসিলিকরণ করার জন্য সে সময়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে তা পাট শিল্পের ক্ষেত্রে কার্যকর করার জন্য অনূর্ধ্ব ৫০০ কোটি টাকা করা, পরিবেশবান্ধব পাট শিল্পের জন্য ইডিএফ ফান্ডের সহযোগিতা দেয়া, ব্যাংকের ত্রৈমাসিক সুদ কর্তন পরবর্র্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা এবং পাট শিল্প খাতে নতুন করে কোনো ঋণ শ্রেণীবিন্যাসিত না করার প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটরের নির্বাহী পরিচালক ফরিদুল হাসান।

গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল ও অবরোধের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়নি। বেসরকারি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নিজেদের মতো করে এক ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর দাবি হরতাল ও অবরোধে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ডিসিসিআইয়ের হিসাব অনুসারে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রায় ১০০ দিনে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা অনুসারে ৮১ দিনের হরতাল-অবরোধে ১১টি সেক্টরে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ।