Budget FY17 is a test case for the govt to create investment friendly environment: Dr Moazzem

Published in কালের কন্ঠ on Sunday, 12 June 2016

এবারের বাজেট বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের জন্য একটি টেস্ট কেস

সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ করে জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন। তিনি ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন’-এর আজীবন সদস্য। তাঁর গবেষণা ও লেখালেখির মূল বিষয় ট্রেড পলিসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি, কারখানার শ্রম ও কর্ম পরিবেশ ইত্যাদি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট মূল্যায়ন নিয়ে তিনি কথা বলেন কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শারমিনুর নাহার

 

Dr-Khondaker-Golam-Moazzemকালের কণ্ঠ : ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট নিয়ে সিপিডির মূল্যায়ন কী?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হয়েছে একটি স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, যা সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক। ঘোষিত বাজেটে বর্তমান রাজস্ব ব্যয়ের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন সামাজিক ব্যয়ের প্রস্তাবনা ইত্যাদি রয়েছে। উন্নয়ন বাজেটে যোগাযোগ খাতের পাশাপাশি শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয় ঘোষণা রয়েছে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আলাদা বাজেট ঘোষণা উল্লেখযোগ্য দিক। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে বাজেট কাঠামো পরিবর্তনের ঘোষণা ইতিবাচক।

একই সঙ্গে বাজেট ঘোষিত হয়েছে বেশ কিছু অস্বস্তির মধ্যেও, যা আগামী দিনের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার পাশাপাশি যে পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া দরকার, সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে জাতীয় আয়ে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে; কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থানকে যথাযথভাবে উৎসাহিত করছে না। সাম্প্রতিককালের প্রবৃদ্ধির উৎস মূলত সেবা খাতকেন্দ্রিক, যেখানে তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগ ও কম কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়; হয়তো এ কারণে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ছে না।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে শ্লথ প্রবৃদ্ধি আরেকটি দুশ্চিন্তার কারণ। শ্রমবহুল ও মূলধনবহুল ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ বাড়লে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। এ বছরের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়গুলো রপ্তানিমুখী ও দেশীয় বাজারমুখী এ দুই ধরনের শিল্পের জন্য আলাদাভাবে বিবেচনা করা যায়। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন বৈশ্বিক দুর্বল চাহিদা বাংলাদেশের রপ্তানিতে আগামী অর্থবছরে প্রভাব ফেলতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া রপ্তানিমুখী শিল্পের বিনিয়োগেও পড়বে। অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। এ বছরের বাজেটে শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী মধ্যবর্তী পণ্য ও কাঁচামাল উত্পাদকদের কথা বিবেচনা করে ১৫ শতাংশের আলাদা শুল্কস্তর ঘোষিত হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক কাঠামোতে পরিবর্তন দেশীয় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষণ সুবিধা বা কম মূল্যে কাঁচামাল প্রাপ্তির সুবিধা দেবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এসএমই খাতে করবহির্ভূত লেনদেনের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ঘাটতি এ বছরও অব্যাহত থাকবে। এটা ঠিক যে বড় বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত না হলেও আগামী বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ অবকাঠামো প্রস্তুতির বছর হিসেবে চিহ্নিত হবে। সরকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প নিয়েছে, যার কয়েকটি এখন চলমান। প্রকল্পগুলো শেষ হলে অবশ্যই বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে। সে হিসেবে আগামী অর্থবছরকে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের প্রচেষ্টার একটি ‘টেস্ট বছর’ বিবেচনা করা যেতে পারে।

বাজেটের আয়-ব্যয় ভারসাম্যের দুর্বলতা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মতো ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও দেখা যাচ্ছে। প্রতিবছর ঘোষিত বাজেট ও অর্থবছর শেষে বাস্তবায়িত বাজেটে পার্থক্যের পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়ছে। বাজেটের আকার ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে আরো দক্ষ হতে হবে। প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। সিপিডির বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন ভারতের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।

 

কালের কণ্ঠ : এবার বাজেটের সার্বিক ইতিবাচক দিকগুলো কী?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : অর্থমন্ত্রী ভবিষ্যতে বাজেট কাঠামোতে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা ইতিবাচক মনে হয়েছে। ভবিষ্যতে বাজেটের আয়-ব্যয় কাঠামোর পরিবর্তন করে বর্তমানের উন্নয়ন বাজেট ও রাজস্ব বাজেট আলাদাভাবে না রেখে শুধু আয় ও ব্যয়—এমন দুই ভাগে ভাগ করার কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। উন্নয়ন-অনুন্নয়ন বাজেটের মধ্যে আন্তসম্পর্ক ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে প্রচলিত বাজেট কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা কমে আসছে।

দ্বিতীয়ত, অর্থমন্ত্রী ভবিষ্যতে ফলাফলভিত্তিক বাজেট কাঠামো বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। সিপিডি থেকে এ ব্যাপারে বাজেট প্রস্তাবনাকালে বলা হয়েছিল। বর্তমান বাজেট কাঠামোয় কেবল অর্থ বরাদ্দ, অর্থ ছাড় ও অর্থ ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ করা হয়। ফলাফলভিত্তিক বাজেট কাঠামোতে প্রকল্পের মূল প্রস্তাবনায় যেসব লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা রয়েছে তা অর্জিত হলো কি না, যে অভ্যন্তরীণ প্রাপ্তির হার ঘোষিত হয়েছিল তা কতটুকু পাওয়া গেল ও প্রকল্প ব্যয়ের ক্ষেত্রে বর্ণিত মাত্রা বজায় রাখা হয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয় প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর যাচাই-বাছাই করা হবে। তৃতীয়ত, এবার বাজেটে সরকার দীর্ঘ মেয়াদে সামাজিক খাতে বড় কিছু উদ্যোগ নেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আকারের বিস্তৃতি দেখতে পাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী বেসরকারি খাতে পেনশন স্কিম চালুর কথা বলেছেন। এটিও বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে। অন্যদিকে আয়বৈষম্য কমাতে উচ্চ আয়ের মানুষের আয়ে করহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

কালের কণ্ঠ : সরকার ঘোষিত বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : বাজেটের আয়-ব্যয় কাঠামোর দুর্বলতা অন্যান্য বছরের মতো আগামী বছরেও রয়ে যাবে। উচ্চ ব্যয় মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষিত হয়েছে, অর্থমন্ত্রী নিজেই তাকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন। ফলে ঘাটতি বাজেটের আকার বড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে বিদেশি অর্থায়নের ওপর জোর দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য সরকারের ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ঘোষণা বাস্তবায়ন অসম্ভব মনে হচ্ছে। ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে কম ব্যয়বহুল উৎস ব্যবহার না করে বেশি ব্যয়বহুল উৎস ব্যবহার করার কারণে উত্তরোত্তর সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশার কথা, আগামী বাজেটে তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ উেসর ঋণ বেশি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। মনে রাখা দরকার, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়বহুল উেসর ঋণ অতি ব্যবহারের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ ও সুদ মেটানোর দায় বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে দেশটি তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়বহুল উেসর ঋণ অতি ব্যবহারের কারণে মধ্য মেয়াদে ঋণের দায় মেটাতে অসমর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

 

কালের কণ্ঠ : তাহলে কি আরো বড় বাজেট আমাদের দরকার?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে বাজেটের আকার বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বাজেট খুব বড় নয়। সে হিসেবে বড় বাজেটের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বড় বাজেট দরকার মানেই বড় বাজেট ঘোষণা নয়। বরং বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আয়ের সক্ষমতা ও গুণসম্পন্ন বাজেট ব্যয়ের কাঠামো দরকার। এ দুই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। প্রতিবছর বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু আয় ও ব্যয়ের চ্যালেঞ্জগুলো থেকে যাচ্ছে। প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় (জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে) কম, এমনকি নেপালের চেয়েও কম। দ্বিতীয়ত, আমাদের বাজেট বাস্তবায়ন এখনো মন্ত্রণালয়নির্ভর। এর অর্থ দাঁড়ায়, বড় বাজেট বাস্তবায়নের জন্য হয় উন্নয়ন প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে নয়তো উন্নয়ন প্রশাসন, বিশেষত মন্ত্রণালয়ের আকার বৃদ্ধি করতে হবে। এটা ঠিক বাজেট বাস্তবায়নে উন্নয়ন প্রশাসনের কিছুটা দক্ষতা বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু এই দক্ষতা বৃদ্ধির একটা সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের কলেবর বৃদ্ধিই সমাধান কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সরকারের স্থানীয় প্রশাসন এখনো বাজেট বাস্তবায়নে তেমনভাবে যুক্ত নয়। জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, থানা, পৌরসভা ইত্যাদি স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের অঞ্চলের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। বাজেট বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় বা মন্ত্রণালয়নির্ভর কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি বিকেন্দ্রায়িত বাজেট বাস্তবায়ন কাঠামোর দিকে যাওয়ার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি। অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়নকেন্দ্র এখন শুধু কতিপয় বড় শহর বা রাজধানী শহরে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়েছে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে। তাই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বাজেট বাস্তবায়ন করতে না পারলে সরকার স্থানীয় পর্যায়ের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি সক্ষম হবে না।

তৃতীয়ত, এসএমই খাতে প্রতিবছর ঋণ বাড়ছে, এটা ভালো দিক। সিপিডি থেকে প্রাক-বাজেট আঞ্চলিক সংলাপ আয়োজনকালে বগুড়ায় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তাঁরা এই সুবিধা পর্যাপ্তভাবে পাচ্ছেন না। বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা ও চাহিদামাফিক ঋণপণ্য না থাকায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ঋণের সুবিধা উপযুক্তভাবে পৌঁছানোর জন্য সরকারের যে ধরনের কাঠামো দরকার, সেটা দক্ষ নয়। তাহলে সন্দেহ তৈরি হয়, যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে সেটা কাদের কাছে যাচ্ছে? যদি এ ঋণ অন্য খাতে ব্যয়িত হয়, তবে প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হবে। উদ্যোক্তাদের চাহিদার নিরিখে বিশেষত ক্ষুদ্র, ক্লাস্টারভিত্তিক, মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে, প্রয়োজনে প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে এনজিওর সহায়তা নিয়ে ‘উপযুক্ত চাহিদামাফিক ঋণপণ্য’ অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

 

কালের কণ্ঠ : স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কি সেই সক্ষমতা গড়ে উঠেছে যে তারা নিজেরা কর আদায় ও ব্যয় যথাযথভাবে করতে পারবে?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : এটা ঠিক, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু সেটাও হয়েছে তাদের দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ না করে দেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের অধিকভাবে জড়িত করা গেলে ও স্থানীয় পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ে তাদের সুযোগ বৃদ্ধি করলে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে এর জন্য সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা দরকার, মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন কাঠামোর মধ্যে বিকেন্দ্রায়িত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের সুযোগ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

 

কালের কণ্ঠ : ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আপনাদের পরামর্শ জানতে চাই।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : সাম্প্রতিককালে আর্থিক খাতের পরিস্থিতি থেকে মনে হয়েছে তারা মূল ট্র্যাক থেকে সরে যাচ্ছে। সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে। অনেক ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধনের ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকের কুঋণ বাড়ছে। বিশেষত সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ সমস্যা বেশি। এসবের সঙ্গে সম্প্রতি আবার সাইবার চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। সুতরাং সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে কয়েক রকমের পরিবর্তন দরকার। সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের একটি সিদ্ধান্তে আসা দরকার। মূলধন পুনর্ভরণ সরকারি ব্যাংকগুলোর সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখছে কি না তা ভেবে দেখা দরকার। আগামী অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মূলধন পুনর্ভরণের জন্য রাখা হয়েছে। গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকে মূলধন হিসেবে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এত টাকা দেওয়ার পরও সরকারি ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি, বরং উল্টো কাজ হয়েছে। সরকারি ব্যাংকসহ ১৪টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর কোনো ইতিবাচক ভূমিকা চোখে পড়ছে না। সুতরাং সার্বিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের একটি সিদ্ধান্তে আসার সময় হয়েছে। এত বেসরকারি ব্যাংক, সরকারি ব্যাংকের এত শাখা ও তাদের সেবাদানের পরিস্থিতি, তাদের লাভ-ক্ষতির বিষয় ভাবার সময় এসেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিপিডি একটি ‘স্বাধীন আর্থিক খাতের পর্যালোচনা কমিশন’ গঠনের কথা বলেছে, যে কমিশন আর্থিক খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে।

 

কালের কণ্ঠ : ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কিছুটা সময় নিল, এটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রাক-প্রস্তুতি নিয়ে আগামী অর্থবছরে কী কী কার্যক্রম নেওয়া হবে সে দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে যে যুক্তিগুলো বিভিন্ন পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। প্রথমত, ভ্যাটের জন্য যে প্রশাসনিক কাঠামো থাকা দরকার তা এখন পর্যন্ত আকারে গড়ে ওঠেনি। দ্বিতীয়ত, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর থাকাটা যৌক্তিক কি না এটাও ভেবে দেখা যেতে পারে। ভ্যাটের হার কিছুটা কমিয়ে যদি আদায় বেশি হয়, তাহলে সেটা ভালো হতে পারে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের মানুষের আয় কাঠামোয় ব্যাপক ফারাক রয়েছে; সেদিক থেকে যেকোনো পণ্য বা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমান ভ্যাট বসানোও ঠিক কি না তা বিচার করা যেতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার আগামী এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।

 

কালের কণ্ঠ : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : কালের কণ্ঠকেও অনেক ধন্যবাদ।