Dr Fahmida Khatun on making five-taka notes the smallest denomination

Dr Fahmida Khatun on making five-taka notes the smallest denomination, published in Jaijaidin on Monday, 19 January 2015.

এক টাকা-দুই টাকা থাকছে না সরকারি নোট হবে ৫ টাকা
ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ : মন্তব্য অর্থনীতিবিদদের

রহমান আজিজ

দেশে এক ও দুই টাকার মুদ্রা আর থাকছে না। সর্বনিম্ন মুদ্রা হিসেবে চালু হচ্ছে পাঁচ টাকার মুদ্রা। খুব শিগগিরই এটা চালু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এদিকে অর্থমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এতে সাধারণ মানুষ নানান অসুবিধায় পড়বেন। সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

রোববার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫ টাকাকে সরকারি নোট করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এক এবং দুই টাকার মুদ্রার ব্যবহার কমে গেছে। তাছাড়া এর তেমন কোনো মূল্য না থাকায় এক টাকা ও দুই টাকার কাগজের নোট ও কয়েন উভয় প্রকার মুদ্রা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ধীরে ধীরে বাজার থেকে ৫ টাকার নিচের সব মুদ্রা তুলে নেয়া হবে।

দেশের গ্রাহকদের বহনের সুবিধা এবং বাজারে অলস টাকা পড়ে থাকার বিষয়কে বিবেচনা করে দেশে সর্বনিম্ন মুদ্রা ৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বাজারে বিদ্যমান এক ও দুই টাকার কাগজের নোট ও ধাতব কয়েনে লেনদেন করা যাবে। নতুন করে এ দুটি মুদ্রা ছাপানো বা তৈরি করা হবে না। এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে এ দুটি মুদ্রা আপনা আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

অর্থমন্ত্রী জানান, পুরনো এক ও দুই টাকার নোটগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করতে ৩০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। এতে সরকারের চেয়ে বেশি লাভ হবে মানুষের। অপ্রয়োজনীয় (ইউজলেস) টাকা নিয়ে মানুষকে ঘুরতে হয়।

এক টাকা দিয়ে যে চকলেট পাওয়া যায়, তাহলে কি সেটি পাওয়া যাবে না; এমন প্রশ্নের উত্তর দেন পাল্টা প্রশ্নে ‘এক টাকা-দুই টাকা দিয়ে চকলেট পাওয়া যায় নাকি?’

এ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন যায়যায়দিনকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। পৃথিবীর সব দেশ তথা উন্নত দেশেও ১ পয়সা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘এ দেশে এখনো ১ ও ২ টাকা অনেক মূল্যবান। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। এতে করে ধনীদের লাভ হবে আর গরিব মানুষের জন্য খুব কষ্টদায়ক হবে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এর ফলে বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ জানান, ‘এতে করে ইউনিট অব কারেন্সির প্রশ্ন আসবে। এক কেজি পণ্যের দাম যদি ১৫ টাকা হয়, তবে আধা কেজি ক্রয় করা হলে টাকা পরিশোধে বিপাকে পড়বে ক্রেতা ও বিক্রেতা। এর সমাধান না করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না।’

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল আমিন এ প্রসঙ্গে জানান, ‘আমাদের দেশে ১ টাকায় অনেক লেনদেন হয়। মনিটারি ইউনিটে এখনো ১ ও ২ টাকার দরকার পড়বে। পণ্যের দাম ৫২ টাকা হলে ক্রেতা বিক্রেতাকে কি ৫৫ টাকা দেবে, না কি ৫০ টাকা দেবে। এমন অনেক অসুবিধা হবে।’

এটা চালু করতে দীর্ঘ সময় লাগবে উল্লেখ করে সাবেক এ সভাপতি বলেন, ৫ ও ১০ টাকার মধ্যে ইউনিট থাকতে পারে। ১ টাকার নিচে কোনো ইউনিট নেই। তবে ১ টাকার আছে। ১ টাকায় অনেক পণ্য পাওয়া যায়। হঠাৎ না করে ৫ থেকে ১০ বছর হাতে সময় নিয়ে এটা বাস্তবায়নের পরামার্শ দেন তিনি। সমস্যা খুব বেশি না থাকলেও অনেক অসুবিধা থাকবে। বিশেষ করে পণ্য ক্রয়ে লেনদেনে অসুবিধা হবে। এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতার হার-জিতের প্রশ্ন আসবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান জানান, আগে অর্থসচিব ১ ও ২ টাকার নোটে সই করতেন। এখন ৫ টাকায় করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ টাকা থেকে নোট বের করবে। বাজারে ১ ও ২ টাকার যে মুদ্রা আছে তা তুলে নিতে বছর দুই সময় লাগতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ জানান, ‘১ টাকার ব্যবহার কমে গেছে ঠিক। তবে সর্বনিম্ন মূল্য ৫ টাকা রাখার যৌক্তিকতা আসে না। ১ ও ২ টাকার কয়েন রাখা উচিত। প্রত্যেক দেশে কয়েনের ব্যবহার রয়েছে। কারণ ছোট-ছোট লেনদেন রয়েছে। তা না হলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে।’