RMG Trade Union registration process needs to be easy: Dr Moazzem

Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Saturday, 19 March 2016

৯৭ শতাংশ গার্মেন্টসে ট্রেড ইউনিয়ন নেই

কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের রিপোর্ট

তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ট্রেড ইউনিয়নের ইস্যুটি দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, আড়াই বছরে এক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ৯৭ শতাংশ কারখানায়ই ট্রেড ইউনিয়ন নেই। অর্থাত্ মাত্র তিন শতাংশ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে।

প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র সদস্য বহির্ভূত কারখানাকেও হিসাবে আনা হয়েছে। জরিপ চালানো ২ হাজার ৫৮টি কারখানার মধ্যে ৬৩টি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন পাওয়া গেছে।

শ্রমিক অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, গত তিন বছরে ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে যত কথা বলা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে কাজ হয়েছে খুবই কম। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্স) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর কারখানা সংস্কারের ক্ষেত্রে যত অগ্রগতি হয়েছে, কার্যকর ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এখন রাজনৈতিক বিবেচনা, মালিকপক্ষের পরিচয় কিংবা প্রভাব বিবেচনায় ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন দেয়া হয়। অন্যদিকে যে সব ট্রেড ইউনিয়ন দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই কার্যকর নয়।’

ট্রেড  ইউনিয়নের সংখ্যা কম বলে মনে করেছেন ডিআইএফই’র মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ‘কেউ আগ্রহী না হলে তো আর ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন দেয়া যাবে না। এর নিবন্ধন পেতে হলে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে।’

২ হাজার ৫৮টি কারখানা ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। পরিদর্শনকৃত কারখানার ১ হাজার ২৪৫টি বিজিএমইএ’র সদস্য। এর মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন রয়েছে, এমন কারখানা ১৯। বিকেএমইএ’র ৪১৭টি’র মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন ৩৯টিতে। আর এ দুই সংগঠনের কোনটিরই সদস্য নয় কিন্তু রপ্তানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এমন ৩৯৬টি কারখানার মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন পাওয়া গেছে মাত্র ৫টিতে। সব মিলিয়ে ৩ শতাংশ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন পাওয়া গেছে।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ইত্তেফাককে বলেন, সংখ্যার বিবেচনায় ট্রেড ইউনিয়নের এই হার সন্তোষজনক নয়। তবে অগ্রগতি হচ্ছে। আর শ্রম আইন সংশোধনের পর কারখানায় নির্বাচিত পার্টিসিপেটরি কমিটি গঠনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। গত ছয় মাসে এক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। ডিআইএফই’র উচিত সেটিও দেখানো। তিনি বলেন, তবে মনে রাখতে হবে, ডিআইএফই যে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, সেটি অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের বাইরে কেবল জাতীয় উদ্যোগে পরিচালিত কারখানা পরিদর্শন তথ্যের ফল। প্রকৃত অর্থে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা আরো বেশি।

অবশ্য এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আহমেদ বলেন, এ তালিকায় অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করে এমন কারখানাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কারখানার কমপ্লায়েন্স আলোচনায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করা ও দর কষাকষির ক্ষমতা (সিবিএ) সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু। ২০১৩ সালের সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার (জিএসপি) আওতায় শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা স্থগিত করে। অবশ্য তৈরি পোশাকসহ বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্য দেশটিতে এ সুবিধা আগে থেকেই পেত না। তবে জিএসপি পেতে ১৬টি শর্ত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে অন্যতম ছিল শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ। এছাড়া ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় রপ্তানি গন্তব্যের অন্যান্য দেশ ও বাংলাদেশ সরকারের সমন্বয়ে গঠিত প্লাটফর্ম ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের’ অগ্রাধিকার তালিকায়ও ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টি যুক্ত ছিল।

সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ঢাকায় সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের যৌথ ঘোষণায়ও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজ করা, আইএলও’র মান অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বাড়ানো ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের বিষয়টি ছিল।

দেশে বর্তমানে কী পরিমাণ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে, এর নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিজিএমইএ-বিকেএমইএ ও এর বাইরের কারখানাসহ এ সংখ্যা অন্তত ৫ হাজার। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৬৪টি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন পেয়েছে। অবশ্য ২৫টি বাদে বাকিগুলো ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর থেকে দেয়া।      সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের যে সংখ্যা আছে, এর মধ্যেও অনেকগুলোই কার্যকর নয়। তিনি বলেন, বিদেশি চাপ কিংবা অনুরোধ নয়, ট্রেড ইউনিয়ন আদায় করতে হলে দেশীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিজস্ব শক্তি অর্জন করতে হবে।

অন্যদিকে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি মনে করেন, ট্রেড ইউনিয়ন কারো দয়ার বিষয় নয়। এটি শ্রমিকদের অধিকার। তবে শ্রমিক নামধারী কিছু ব্যক্তির হঠকারি ও অস্বচ্ছ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার কারণে মালিকপক্ষের মধ্যে এ নিয়ে আস্থাহীনতা কাজ করে। এ জন্য দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন প্রয়োজন। সেটি নিশ্চিত করা গেলে, শিল্প-শ্রমিক সম্পর্ক জোরদার হবে; উত্পাদনশীলতা বাড়বে।

গার্মেন্টস খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, গত আড়াই বছরে গার্মেন্টস কারখানা সংস্কারে অগ্রগতি হলেও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। আর ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোক্তা অর্থাত্ শ্রমিকপক্ষকেও আস্থায় নিতে হবে মালিকপক্ষকে।