Dr Khondaker Golam Moazzem on strengthening local RMG

Published in Banik Barta on Saturday, 1 February 2014.

কারখানায় সেবানিরাপত্তা: বাজার তৈরির চেষ্টা করছে বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান

বদরুল আলম

দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় অবকাঠামো দুর্বলতা ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি এখন বিশ্বব্যাপী প্রচারিত। বিশেষ করে তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর এ প্রচারণা আরো জোরদার হয়। সে সুযোগে এ দেশে কারখানার নিরাপত্তাসেবা ও পণ্যের  বাজার তৈরির চেষ্টা করছে একাধিক বিদেশী প্রতিষ্ঠান।

তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান লি অ্যান্ড ফাং এত দিন বাংলাদেশ থেকে শুধু পোশাক ক্রয় করত। সম্প্রতি হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছে ‘ফ্যাক্টরি সাপোর্ট সার্ভিস’ নামে নতুন ব্যবসায়িক শাখা। এর কারণ হিসেবে তারা পোশাক কারখানার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে।

নতুন এ ব্যবসায়িক শাখা থেকে তারা পোশাক সরবরাহকারী কারখানাগুলোকে নিরাপত্তা পরামর্শ থেকে শুরু করে যন্ত্রাংশ স্থাপনে সহায়তা দেবে। শাখাটির নেতৃত্বে সরাসরি নিয়োজিত থাকবেন লি অ্যান্ড ফাং চেয়ারম্যান ড. উইলিয়াম কে ফাং। চলতি মাসের শুরুতেই ড. উইলিয়াম কে ফাংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৫ হাজার পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের নতুন সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ সেবার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরিচালনসহ প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা মানদণ্ডে সামর্থ্য অর্জন করতে পারবে। বিশ্বের বৃহত্ সোর্সিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে বলে আমরা মনে করি।’

লি অ্যান্ড ফাং ছাড়াও কারখানা মালিকদের কাছে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা যন্ত্রাংশ বিক্রি করবে ভারত, জার্মানি ও  ফ্রান্সের একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব যন্ত্রাংশ প্রদর্শনে মেলার আয়োজনও করেছে উত্তর আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ও ইউরোপভিত্তিক অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন।

২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপো ফর বিল্ডিং অ্যান্ড ফায়ার সেফটি’ নামে এ আয়োজনের মূল পৃষ্ঠপোষক অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড। সহযোগী পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), বিজিএমইএ ও বিদেশী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলিভেট।

ভারত, জার্মানি, ফ্রান্সসহ মোট ১০ দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহণ করবে। তারা সেখানে ফায়ার ডোর, হোস, এক্সটিঙ্গুইশার, স্প্রিঙ্কলারসহ ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা যন্ত্রাংশ প্রদর্শন করবে। মেলায় কারখানা পরিদর্শনে অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের মানদণ্ড নিয়ে একাধিক সংলাপের আয়োজনও থাকবে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতা আছে, তা স্বীকারও করেছি। তবে এ সুযোগে বহু বিদেশী প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের বাজার তৈরি করে নিচ্ছে। এতে দেশের স্থানীয় শিল্প সক্ষমতা যেমন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি কারখানা কমপ্লায়েন্ট করতে ব্যবসায়ীদের খরচও অনেক বেড়ে যাবে।’

ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন চাপের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখন ‘ফায়ার সেফটি ডোর’ প্রস্তুত হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক সনদের অভাবে সেগুলো ব্যবহারের অনুমোদন দেবেন না ক্রেতারা। অন্যদিকে ক্রেতাদের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তা কিনতে গেলে খরচও অনেক বেশি পড়বে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগিতা নিতে আমরা প্রস্তুত। তবে তাদের নেয়া উদ্যোগের বাণিজ্যিকীকরণ কাম্য নয়।’

তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ক্রেতা জোটগুলো তাদের তালিকাভুক্ত কারখানা পরিদর্শন করবে। এরপর কারখানাগুলোর নিরাপত্তা উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করবে। কারখানার মূল ক্রেতা যদি অ্যালায়েন্স বা অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরকারী হয়, তাহলে তাদের চাপ দেবে কারখানা উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য।

ক্রেতা জোটের তালিকাভুক্ত একাধিক কারখানার উদ্যোক্তারা বলেছেন, ‘কোনো ক্রেতা যদি আর্থিক সহযোগিতা করতে সম্মত হন, সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের মনোনীত প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রাংশ কেনার চাপও দেবেন। ক্রেতা ধরে রাখতে আমরাও তাদের মনোনীত প্রতিষ্ঠান ব্যবহারে এক প্রকার বাধ্য।’

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কপ্লায়েন্সের নামে ক্রেতারা নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করছে। এটা দুঃখজনক।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কারখানা মালিকদের দুর্বলতা আছে। আর তা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করছে ক্রেতাসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের সহযোগিতা নেয়ার পাশাপাশি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের উচিত নিজ অবস্থান শক্তিশালী করার কৌশল অবলম্বন করা।

প্রসঙ্গত, পোশাক খাতের উন্নয়নে উত্তর আমেরিকার ২৬টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— গ্যাপ, দ্য হাডসন বে কোম্পানি, ইনোভেটিভ ফ্যাশন গ্রুপ, জেসি পেনি, দ্য জোনস গ্রুপ, কোহ্লস, সিয়ার্স হোল্ডিং, টার্গেট, ভিএফ ও ওয়ালমার্ট। অন্যদিকে ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা জোটে ১৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— এইচঅ্যান্ডএম, পিভিএইচ, টেসকো, কিক টেক্সটাইল, অ্যাডিডাস, কে-মার্ট।