Professor Mustafizur Rahman on ADP realisation

Published in Alokito Bangladesh on Wednesday, 19 February 2014.

এডিপিতে বরাদ্দ কমছে ১২ হাজার কোটি টাকা
৭১৬ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝুঁকি

জাহিদুল ইসলাম

বেশি প্রকল্পের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন বেহাল দশায় পড়েছে। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ১৭৬টি। বরাদ্দ ও অনুমোদন ছাড়া প্রকল্প নিয়ে এ সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৭। বাড়তি প্রকল্পে পর্যাপ্ত অর্থ দিতে পারছে না সরকার। ফলে কোনো প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। ঝুলে থাকা এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে বাড়ছে বাস্তবায়ন ব্যয়। এ অবস্থায় সংশোধন হতে যাওয়া এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি এডিপিতে আরও ৭১৬টি নতুন প্রকল্প যোগ করা হচ্ছে। সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) নতুন প্রকল্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণে আয়োজিত সিরিজ বৈঠকে এ সব প্রকল্প যোগ করার সুপারিশ করা হয়। সভায় ৮৮৭টি নতুন প্রকল্প উত্থাপন করা হয়েছিল। নতুন ১৬৪টি প্রকল্প এসেছে ভৌত অবকাঠামো খাতে। এছাড়া কৃষিতে ১১০টি ও সড়ক খাতে ১০০টি নতুন প্রকল্প আসছে। প্রকল্প বাড়লেও সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা। শুরুতে ৬৫ হাজার    ৮৭০ কোটি টাকার এডিপি ঘোষণা করা হয়েছিল। কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বহন করা হবে। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে নেয়া হবে ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আহরিত না হওয়ার পাশাপাশি কাক্সিক্ষত এডিপি বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও কাটছাঁট করা হচ্ছে। প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাত্র ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। যা ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামর্থ্যরে বেশি প্রকল্পের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি আসছে না। এ অবস্থায় নতুন করে প্রকল্প অনুমোদন না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ পরামর্শ না মেনে বাড়তি প্রকল্প পাঠানো হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনে। রাজনৈতিক চাপ ও নানা রকম তদবিরের মাধ্যমে এসব প্রকল্প পাস করিয়ে নেয়া হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় অনেক প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে পারেনি সরকার। নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে শতাধিক প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা করে। আর ৫৫টি প্রকল্পে বরাদ্দ মাত্র ১ কোটি টাকা করে। সীমিত অর্থে এসব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে কাটছাঁট করায় এসব প্রকল্পে বরাদ্দ আরও কমবে। এ অবস্থায় এ সব প্রকল্পের ভাগ্য অনিশ্চিত।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, উন্নয়ন কাজ করতে হলে নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দিতেই হবে। তবে বাস্তবায়ন সক্ষমতার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। চলমান কাজের বাস্তবায়ন হুমকিতে পড়ে, এমন প্রকল্প নেয়া উচিত হবে না। অতিরিক্ত প্রকল্প নেয়া হলে বাস্তবায়নে ঝুঁকিও বাড়বে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে এমনিতেই বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। নতুন প্রকল্প নিয়ে আসার আগে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন আরও বাড়াতে হবে। অন্যথায় নতুন প্রকল্প দেয়া হলে এডিপির চলমান কাজ আরও পিছিয়ে পড়বে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, একসঙ্গে অনেক প্রকল্প নেয়া হলেও অর্থ সঙ্কটের কারণে এগুলোতে চাহিদামতো বরাদ্দ দিতে পারে না সরকার।

এ কারণে যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তার মতে, চলতি অর্থবছর অনেক প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে। বিরোধী দলের ঘন ঘন হরতালের কারণে প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার কারণে আটকে যায় প্রকল্পের কাজ। এ সব কারণে বারবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়।