দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতে চলেছে: অধ্যাপক রেহমান সোবহান

Published in দৈনিক সমকাল on Friday, 13 January 2017

বাঙলার পাঠশালার আলোচনা সভায় বিশিষ্টজন

দেশের অর্থনীতি এখন অনেক সমৃদ্ধ

সমকাল প্রতিবেদক

‘বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক সমৃদ্ধ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দিকে তাকালেই বোঝা যায় দেশের অর্থনীতি স্থির ভিত্তি অর্জন করেছে। সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে আমাদের শিক্ষা, আইন, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।’ গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর সি মজুমদার মিলনায়তনে বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন,

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক আহমাদ মাযহার প্রমুখ। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান ছয়টি অধিবেশনে বিভক্ত ছিল। অধিবেশনগুলোতে জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও গবেষক ড. নজরুল ইসলামের বিভিন্ন বই ও গবেষণা থেকে আলোচনা করা হয়।

‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশ’ নামে প্রথম অধিবেশনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাজ্জাদ জহির লেনিনের সভাপতিত্বে অংশ নেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম আতিকুর রহমান, নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইনামুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের শরিফ জামিল, নগর গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

‘আগামী দিনের বাংলাদেশ’ শীর্ষক দ্বিতীয় ও উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই।’ তিনি বলেন, ‘মাপকাঠিতে পরিমাপ না করতে পারলেও বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই সেটা নিশ্চিত। আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার একটিই লক্ষ্য ছিল, সেটা হলো জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে প্রতিহত করে দেশকে বাহাত্তরের সংবিধানের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা। কিন্তু আমরা সেই লক্ষ্যে পেঁৗছাতে পারিনি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছি। উন্নয়ন ও বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার একত্রে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।’ এ সময় তিনি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র আরও বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি গতানুগতিক ধারায় চলে। তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।’

অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি উৎপাদন ব্যবস্থা, পরিবেশসহ সামগ্রিক দিক নিয়ে জড়িত। আর এদিকগুলো এখন উন্নত হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিও আরও সমৃদ্ধ হতে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতে চলেছে_ তার প্রমাণ পদ্মা সেতু। এটি আজ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে।’

অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাঙালির অনেক অর্জন রয়েছে, বিজয় রয়েছে। আর এই বিজয় অর্জন করেছি আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে, তাকে সহযোগিতা করে। এরই ধারাবাহিকতায় তার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাও বর্তমানে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাঙালি জাতি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে রাজনীতি নেই। যেটা আছে, তা হলো ‘রাজচালাকি’।

জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এসডিজি পর্বে প্রবেশ করেছে। তার অর্থ দেশ অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নতির একটি দিক হলো পরিবেশ। পরিবেশ উন্নত হলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিবেশ জড়িত। উন্নত বিশ্ব এই পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে উন্নত হয়েছে এবং হচ্ছে।’

এর আগে প্রথম অধিবেশনে ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নদীকে তার মতো করে প্রবাহিত হতে দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থা সে রকম নয়।’ আর এর পেছনে ‘দর্শনগত ও বস্তুগত স্বার্থের বাধা’ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এ দুটি কারণে আজ নদীর পানি শুকিয়ে চর সৃষ্টি হচ্ছে। দেশ ধীরে ধীরে বিপদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘দেশকে তার আত্মনির্ভরশীলতা বজায় রাখতে হবে। বিদেশি সাহায্য নিলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের হাতে রাখতে হবে। কিন্তু সেই জায়গায়ও আমরা দেখছি বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করছে।’ তিনি বলেন, ‘সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে আমাদের শিক্ষা, আইন, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।’

অনুষ্ঠানের তৃতীয় অধিবেশনে ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ইতিহাস এবং গ্রামের ভবিষ্যৎ-রূপান্তর’, চতুর্থ অধিবেশনে ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সুশাসন’, পঞ্চম অধিবেশনে ‘সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ এবং ষষ্ঠ ও সমাপনী অধিবেশনে ‘অন্যরকম বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক আলোচনা হয়।