আগামীতে পোশাক রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে: ড. মোয়াজ্জেম

Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Friday, 9 March 2018

ফেব্রুয়ারিতে সন্তোষজনক রপ্তানি

আট মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৭.৩৮ শতাংশ আর ফেব্রুয়ারিতে সাড়ে ১৩ শতাংশ

গার্মেন্টসের ভর করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি সন্তোষজনক হারে বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে রপ্তানি। বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাস অর্থাত্ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে সবমিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই হারে রপ্তানি বাড়লে চলতি অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। গত অর্থবছর কাঙ্ক্ষিত হারে রপ্তানি বাড়েনি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬৬ কোটি ডলারের। প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক শতাংশের মত। এবার প্রায় আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। গত আট মাসে ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য ও সেবা। অর্থাত্ আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য পিছিয়ে রয়েছে। অবশ্য গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ২৭২ কোটি ডলারের। অর্থাত্ সবমিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

রপ্তানি ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। গত আট মাসে ওভেন ও নিটওয়্যার মিলিয়ে গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে গার্মেন্টস রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৮৬৪ কোটি ডলার।

গার্মেন্টস রপ্তানির এই চিত্রে সন্তোষ প্রকাশ করলেও গার্মেন্টস রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, রপ্তানি আরো বেশি হারে বাড়ার কথা। গত কয়েক বছরে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো নিরাপত্তা সংস্কার কাজে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। অন্যদিকে প্রধান গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ চীন ধীরে ধীরে এ খাত থেকে সরে আসছে। এসব ক্রেতার বড় অংশের গন্তব্যই বাংলাদেশ হওয়ার কথা। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি আরো বেশি হারে হওয়া উচিত বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক প্রচারনা হচ্ছে। এটি গার্মেন্টস রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

অবশ্য এককভাবে কোন কারনকে দায়ী না করে আন্তর্জাতিক বাজারের সার্বিক চিত্র মূল্যায়ন করা উচিত বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম  মোয়াজ্জেম। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, গত মাসগুলোতে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের বড় গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে পোশাকের চাহিদা প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। ভিয়েতনামসহ দুই একটি দেশ বাদে অন্যান্য দেশের পোশাক রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। তবে সার্বিকভাবে আগামীতে পোশাকের রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইপিবি’র পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তৈরি পোশাক ছাড়াও গত আট মাসে রপ্তানি বেড়েছে এমন তালিকায় রয়েছে  হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্য, সিমেন্ট, তুলা ও তুলাজাতীয় পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, সমুদ্রগামী জাহাজ, ফার্নিচার, বিশেষায়িত টেক্সটাইল ইত্যাদি। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে রপ্তানি কমেছে, এমন তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, কাঁচা পাট ইত্যাদি।