করোনার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন থাকবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Published in যুগান্তর  on 1 January 2021

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যুগান্তরকে বলেন, করোনার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন থাকবে। এটি বিবেচনায় রেখেই পরিকল্পনা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে স্বাস্থ্যসেবা এবং করোনার ভ্যাকসিনে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, নতুন বছরে অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ মূলত ৪টি। প্রথম চ্যালেঞ্জ সম্পদ সমাবেশ। এর মধ্যে অন্যতম হল কর আহরণ। বর্তমানে কর জিডিপি রেশিও স্থবির হয়ে আছে। সরাসরি কর আদায়ের অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক না। এক্ষেত্রে করোনার সময়ে অর্থাৎ গত বছরের শেষ ৬ মাসে যা ছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তারচেয়েও খারাপ।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হল, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ সচল করা। তার মতে, করোনার আগে থেকেই ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির অবস্থায় ছিল। আর করোনার সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সঙ্গে অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যুব কর্মসংস্থানের বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। সিপিডির এ বিশেষ ফেলো বলেন, ব্যাংকিং খাত দুর্বল। তবে বর্তমানে সেখানে তারল্য আছে। কিন্তু বেসরকারি খাত এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। ড. দেবপ্রিয় বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে এফডিআই নিয়ে যে পরিমাণ প্রচার হয়, সে হারে বিনিয়োগ হয় না। তৃতীয়ত, চ্যালেঞ্জ বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা। সাম্প্রতিক সময়ে রফতানি কিছুটা বাড়ছে। কিন্তু পুরোটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে রফতানি বাড়ানো এবং রেমিটেন্স অব্যাহত রাখা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক রেমিটেন্স ব্যাপকভাবে বাড়ছে। কিন্তু এটি কতটা টেকসই, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ মানুষ নতুন করে বিদেশে যাচ্ছে না। ফলে টাকা কেন এবং কীভাবে আসছে, তা প্রশ্ন রয়েছে। দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা আবার দেশে আসছে কিনা এ প্রশ্ন রয়েছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য এবং টাকার মান ঠিক রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ। চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হল, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম বৃদ্ধির মূল্যস্ফীতির ওপর সৃষ্টি করে কিনা সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ একদিকে অর্থনীতি তেজি নয়, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়লে দু’দিক থেকে সমস্যা তৈরি করবে। পাশাপাশি শিক্ষায় জোর দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ খাত অনেক পিছিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে শিখেছি, শুধু প্রথাগত দুস্থ মানুষ নয়, নিম্ন মধ্যবিত্তরাও বিপন্ন বোধ করেন। সেক্ষেত্রে সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি ভাবতে হবে। সর্বশেষ বিষয় হল, করোনার টিকায় জোর দিতে হবে। ২০২০ যদি করোনার বছর হয়, তবে ২০২১ সাল হওয়া উচিত টিকার বছর। এক্ষেত্রে টিকা সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণ সঠিকভাবে করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, অসুবিধাগ্রস্ত প্রবীণ মানুষদের টিকা বিনামূল্যে দেয়া উচিত।