কোভিড পরিস্থিতির কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে: রেহমান সোবহান

Published in প্রথম আলো on Wednesday 20 May 2020

করোনায় দরিদ্র মানুষের জন্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা দরকার: পিপিআরসি–বিআইজিডি

করোনার কারণে আয় কমে গেছে খেটে খাওয়া গরিব মানুষের। সরকারি সহায়তা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।

করোনায় দরিদ্র মানুষের জন্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার সহায়তা দরকার।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ সমীক্ষায় এই ফলাফল উঠে এসেছে।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড–পরবর্তী সময়ে নগরে দরিদ্রদের জন্য নতুন করে বড় কর্মসূচি দরকার। নগর দারিদ্র্য নিয়ে বড় ধরনের নীতি চিন্তা দরকার।’

আজ বুধবার ভার্চ্যুয়াল সেমিনারের মাধ্যমে ওই গবেষণার ফলাফলের ওপর আলোচনা হয়। গত ৪ থেকে ১২ এপ্রিল ফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা হয়। মোট ১২ হাজার পরিবারকে ফোন করা হয়। সাড়া মেলে ৫ হাজার ৪৭১ পরিবারের কাছে থেকে। ১৬ এপ্রিল এ সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরা হয়। আজ পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।

ভার্চ্যুয়াল সভায় গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের জবাবে গবেষণায় আয় কমে যাওয়া, খাদ্য গ্রহণে সীমাবদ্ধতা, কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন—এসব চিত্র ওঠে এসেছে।

তাই তাদের চাহিদার ভিত্তিতে গ্রাম-শহরনির্বিশেষে কত টাকা সহায়তা দরকার, এর একটি হিসাব দেওয়া হয়েছে ওই গবেষণায়। এই নগদ সহায়তা দিতে কত টাকা লাগবে, তাও বলা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্রামের গরিব মানুষকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৪৫০ টাকা নগদ সহায়তা দিলে লাগবে ৬ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। আর শহরের মানুষকে মাসে ১ হাজার ৭৪৫ টাকা দিলে লাগবে ৪ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা লাগবে।

গবেষণা অনুযায়ী, করোনার কারণে দরিদ্র মানুষের মধ্যে যাঁরা গ্রামে আছেন, তাঁদের ৬৭ শতাংশের নগদ ও ৭০ শতাংশের খাদ্য সহায়তা দরকার। আর শহরের বস্তিবাসীর ৭০ শতাংশের নগদ ও ৭৮ শতাংশের খাদ্য সহায়তা দরকার।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে অতি গরিব, গরিব, গরিব হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষ এবং গরিব নয় এমন মানুষের আয় দৈনিক আয় ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ কমেছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণাা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে। মানুষ নতুন করে গরিব হচ্ছে। এটা বেশ উদ্বেগজনক। কোভিড টেকসই জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলছে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দরিদ্র মানুষের সহযোগিতায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু আছে। কিন্তু কোভিড–১৯ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের ওপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, তা প্রথাগত সহায়তা কর্মসূচিতে দূর করা সম্ভব না। এর জন্য সহায়তার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আনতে হবে। ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, এ দেশে শহরের দারিদ্র্য নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। তাই শহুরে দারিদ্র্যের খুব বেশি তথ্য–উপাত্তও নেই। অথচ এই কোভিড পরিস্থিতিতে শহরের গরিব মানুষেরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম করোনার মধ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা তুলে ধরেন।