চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in ভোরের কাগজ on 9 May 2023

প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে ছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে তা এখন বাধাগ্রস্ত। সুতরাং আইএমএফ যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখছে, তা বাস্তবসম্মত। আমাদের অর্থনীতি একটা চাপের মধ্যে আছে- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, প্রয়োজনে কিছুটা নিম্ন প্রবৃদ্ধিকেও মেনে নেয়া, সবদিকে সাশ্রয়ী হওয়া এবং অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় সুশাসনে বেশি মনোযোগ দেয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ভোরের কাগজকে গতকাল সোমবার তিনি বলেন, আইএমএফের চিহ্নিত করা চ্যালেঞ্জগুলো যথার্থ। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এতো সহজ নয়। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অর্থনীতির উপর অন্য অভিঘাত পড়বে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে গেলে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় ১২ শতাংশ হয়েছে। অথচ মুদ্রানীতিতে লক্ষমাত্রা ছিল ১৪ শতাংশ। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মানুষের কষ্ট বাড়ছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই। যদিও বৈশ্বিক বাজারে কিছু জিনিসের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির গতি যে শ্লথ হচ্ছে তা মার্চের রপ্তানিতেই দৃশ্যমান এবং এ ধারা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। সামনে নির্বাচন আরো একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছি। কারণ, নির্বাচনের অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। যন্ত্রপাতি আমদানির হিসেবেই তা সুস্পষ্ট। তিনি আরো বলেন, প্রতিনিয়ত কমতির দিকে রিজার্ভ। ডলার সঙ্কটে এলসি খুলতে পারছে না অনেক ব্যাংক। আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ সবকিছুই দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে। যে কারণে পরবর্তীতে প্রবৃদ্ধির উপরও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, আমাদের চেষ্টা করতে হবে, প্রবৃদ্ধি কম হলেও অর্থনীতিকে কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, সেদিকে নজর দেয়া। কমতে থাকা রিজার্ভকে কীভাবে সুরক্ষা দেয়া যায়- সে বিষয়ে ভাবতে হবে। আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে করতে হবে। টাকার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ঋণের সুদহার কিছুটা হলেও সমন্বয় করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বাড়ানোর বিষয়ে জোর তদারকি করতে হবে।