জনশুমারিতে স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করা উচিত – তৌফিকুল ইসলাম খান

Originally posted in কালের কন্ঠ on 14 June 2022

সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণের জন্য আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সাত দিনের ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’। করোনার কারণে পর পর দুই দফা পিছিয়েছে জনশুমারির এই কাজ। এবারের শুমারি হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, যেখানে ডিজিটাল ডিভাইস (ট্যাব) ব্যবহার করে নেওয়া হবে ৪৫ ধরনের তথ্য। দেশজুড়ে জনশুমারির এ কাজ করবেন চার লাখ ৩৪ হাজার কর্মী।

আর শুমারির প্রাথমিক তথ্য তিন মাসের মধ্যে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন। জনশুমারির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন। ’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে সঠিক জনসংখ্যার হিসাব নেই, নেই সঠিক চাহিদার তথ্য। জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাতেও রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। আর করোনাকালের ক্ষতি নিরূপণে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। এই সংকট মোকাবেলায় জনশুমারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, একটি দেশের সার্বিক চাহিদা মেটাতে জনশুমারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘জনশুমারির গুরুত্ব অনেক। যদি আমি প্রথমে বলি খাদ্যের কথা, দেশে কত মানুষ আছে, তার বিপরীতে কী পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন, কী পরিমাণ জোগান আছে—এই তথ্যগুলো উঠে আসবে জনশুমারিতে। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির সঠিক দিকনির্দেশনাও দেওয়া যাবে শুমারির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। ’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এবারের জনশুমারিতে স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করা উচিত। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ তারা স্থানীয় অঞ্চলগুলো ভালোভাবে চেনে। ’

এবারের জনশুমারিতে খানা মডিউল এবং ব্যক্তি মডিউলের তথ্য নেওয়া হবে। খানার (পরিবার) ক্রমিক নম্বর, খানার ঠিকানা। বসবাসের ধরনের মধ্যে থাকবে আপনার অন্য কোথাও বসতঘর আছে কি না? খানার প্রকার, খানার প্রধান বসতঘরের মেঝের উপকরণ, খানার প্রধান বসতঘরের দেয়ালের উপকরণ এবং গত দুই বছরে খানায় কোনো বৈদেশিক রেমিট্যান্স (অর্থ বা পণ্য) গ্রহণ করা হয়েছে কি না—এসব তথ্যও নেওয়া হবে। এ ছাড়া ব্যক্তি মডিউলে থাকবে সদস্যদের ক্রমিক নম্বর, খানার সদস্যদের নাম, বয়স, লিঙ্গ, খানা প্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধী হলে তার ধরন, পড়তে-লিখতে পারেন কি, বর্তমানে শিক্ষার্থী কি না, পাশের ক্ষেত্র, কাজের মর্যাদা, কর্মরত হলে কাজের ধরন ও কাজের ক্ষেত্র। নিজস্ব ব্যবহারের মোবাইল ফোন আছে কি না, মাসে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন কি না—এসব তথ্যও নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এক ব্যক্তির ৪৫ ধরনের তথ্য নেওয়া হবে।

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেকোনো দেশের সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ নির্ভর করে একটি সঠিক জনশুমারির ওপর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সে লক্ষ্যে কাজ করছে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা জনশুমারির সাত দিন কাজ করব এবং যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণাঙ্গ ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করব। ’

তিনি বলেন, ‘এবারের জনশুমারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। ফলে আশা করছি, প্রাথমিক ফলাফল তিন মাসের মধ্যে দিতে পারব। এবারের জনশুমারিতে এসডিজি বাস্তবায়নের যে সূচক আছে তার ৯টির তথ্য থাকবে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আশা করি আমরা ভালোভাবেই জনশুমারি শেষ করতে পারব। ’

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর পর পর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়।