টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা টেকসই কোনো ব্যবস্থা নয় -ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Originally posted in ইনকিলাব on 30 January 2024

ডলার সংকটে বেহাল অর্থনীতি

দেশের বাজারে কোনোভাবেই ডলারের সঙ্কট কাটছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে ডলারের দাম। আর সর্বত্রই পড়ছে এর প্রভাব। এ সংকট উত্তরণের অন্যতম উপায় হলো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ানো। কিন্তু সেখানে ভালো খবর নেই। অন্যদিকে আমদানির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের মতো কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক, যার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের মতো।

২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ঘুরেফিরে কমতির দিকেই আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) দেয়া হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যার পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফ’র গণনায় তা হ্রাস পেয়ে স্থির হয়েছে ২০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে। অথচ ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট রিজার্ভ প্রথম সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়নে দাঁড়ায়। কিন্তু এরপর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তহবিলের যে ধারাবাহিক পতন শুরু হয়, তা আর কোনোভাবেই ঠেকানো যায়নি। অবশ্য আইএমএফ’র শর্ত মেনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব পদ্ধতিÑ উভয় হিসাবে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও নেট রিজার্ভের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক জানাচ্ছে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। এদিকে গত প্রায় দুই বছরে ডলার সঙ্কটে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা দেশের রাজস্ব আয়েও প্রভাব ফেলছে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অবশ্য আইএমএফ’র চাপে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়, মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন করা, সুদ ও আমানতের হারে শিথিল করার মতো বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না।

অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, যেভাবে প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমছে, তাতে বড় ধরনের সংকটের দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি এবং সেটি থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসীর পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থে সচল থাকে দেশের অর্থনীতি। এমনকি ২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। সে তুলনায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়েনি। কারণ, ডলারের দাম বেশি পাওয়া এবং পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় হুন্ডিতে আয় পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। একই সঙ্গে রিজার্ভ কমে যাওয়ার মূল কারণ নীতিগত সমন্বয়হীনতা ও নেতৃত্বের অভাব। এমনকি বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারকেও দায়ী করেছেন। গোষ্ঠী ও সংকীর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাঁদের কথায়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যতটা কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল, তা এখনো নেয়া হয়নি। এছাড়া এখন ডলারের বিনিময় হার বেসরকারি খাতে দেয়া হলেও সেটাও মূলত নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা আর যোগান সামলাতে হলে মুদ্রাবাজারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করে দিতে হবে। তখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা বাড়বে। পাশাপাশি আমদানি বা রফতানি নামে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও গত ১৭ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে। ‘ক্রলিং পেগ’ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, পুরো পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক, কারণ যেটা আমরা দেখছি, সেটাও আর্টিফিশিয়াল হিসাব। তিনি বলেন, রিজার্ভ কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণে কমছে। এখনো অনেক রেফার্ড পেমেন্ট (যেসব পেমেন্ট পিছিয়ে দেয়া হয়েছে) আছে। এই অবস্থা আরও খারাপ হতে যাচ্ছে। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির অবস্থা ঠিক করতে হলে খুব শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উদ্বেগটা অনেক বেশি এই কারণে যে, আমদানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রেখে কমিয়ে আনার পরও রিজার্ভ কমার প্রবণতা ঠেকানো যায়নি। ডলারের খরচ কমানোর পরও সেটা স্থিতিশীল হচ্ছে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, পরিস্থিতি যতটা খারাপ হয়েছে, তা অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, এক ধরনের সংকীর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থও কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, নিয়ম হলো, রিজার্ভের ক্ষেত্রে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। সেটা আমাদের আছে। রফতানি আয় এবং প্রবাসী আয়ও নিয়মিত আসছে। কিন্তু এটা ঠিক, রিজার্ভকে পজিটিভ দিকে টার্ন নেয়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য যতটুকু করার ছিল, সেটা আমরা মোটামুটি করেছি। এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে হবে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার, ইউরোপের সুদহার, তাদের মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। কারণ তাদের নীতি আমাদের এখানে বিনিয়োগ আসা না আসার ওপর অনেকাংশে প্রভাব ফেলে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

গত ১৭ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন ডলার সংকট প্রসঙ্গে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি ঋণের প্রকল্পের অর্থছাড় ও বাণিজ্য অর্থায়নের ঋণ বাড়বে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপও কমে আসবে। তাতে সামনে ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে। তবে ডলার সংকট কবে নাগাদ কাটবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি গভর্নর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যার পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গণনায় তা হ্রাস পেয়ে স্থির হয়েছে ২০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থার নিট রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে। এটি শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। মূলত, প্রতি মাসে পণ্য কেনা বাবদ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার করে দায় পরিশোধ করা হয়। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে শেষ প্রান্তে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এখনও ডলার সংকট বিদ্যমান। ফলে মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল শোধ করা হচ্ছে। ছোট আমদানি ব্যয় মেটানো হচ্ছে। সে তুলনায় রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম রয়েছে। ফলে রিজার্ভ কমছে। এদিকে সদ্য বিদায়ী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী ন্যূনতম রিজার্ভ ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণের বাকি অর্থ পেতে বাংলাদেশকে আগামী মাসগুলোয় এই গতি ধরে রাখতে হবে। অথচ বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রতিনিয়তই কমছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি যখন বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে, তখন তারা সেই বছরের ডিসেম্বরের জন্য ন্যূনতম রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছিল। পরে রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রাটি সংশোধন করা হয়। আইএমএফ’র নথি থেকে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে রিজার্ভ ধরা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। আগামী মার্চে এই লক্ষ্যমাত্রা ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার ও জুনে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইএমএফকে দেয়া প্রকৃত হিসাব মতে, রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

ঋণ কর্মসূচির অধীনে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে সরকারকে যে ছয়টি লক্ষ্য অর্জন করতে বলা হয়েছিল এর মধ্যে দু’টি লক্ষ্য রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এরপরও আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির ছাড় দেয়। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকেও ডলার ক্রয় করে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ট্রেড ক্রেডিট বা বিদেশে যে মূল্যের পণ্য বা সেবা রফতানি করা হয়, তার চেয়ে কিছু কম আসছে। এভাবে গত এক বছরে ৬০০ কোটি ডলার কম এসেছে। ফলে সার্বিক ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বেড়েছে। ব্যাংকের বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় স্বল্প মেয়াদি ঋণ নিয়ে থাকেন, যা শোধ করতে হয়েছে। সাধারণত এখানে আবার নতুন ঋণ এসে থাকে, কিন্তু বর্তমানে তেমনটা আসছে না। কারণ ব্যাংকিং সিস্টেমের ওপর আস্থা কমে যাওয়ায় সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় বৈদেশিক সংস্থাগুলোর আস্থা কমে গেছে। ফলে তারা নতুন করে ঋণ দিতে চাইছে না।

এছাড়া মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে যেসব ঋণ নেয়া হয়ে থাকে, সেখানে নতুন করে ঋণ আসা কমে গেছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনেক ব্যাংক বিদেশের শাখা থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ কমে গেছে। রফতানির জন্য রেট বেঁধে দেয়ায় অনেক ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে পারছে না। অর্থাৎ ডলারের যোগান বা সরবরাহ বাড়ছে না, কিন্তু খরচ অব্যাহত রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভে থাকা ডলার সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। ফলে তাদের হাতে থাকা রিজার্ভ প্রতি মাসেই কমছে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, রিজার্ভ কমার বড় কারণ হলো, এই সমস্যা বাণিজ্য ও মুদ্রানীতি দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। টাকার মূল্যমান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হচ্ছে। যারা তা করছেন তারা মনে করছেন, টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হলে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ কিছুটা টেনে ধরা যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা টেকসই নয়। অর্থশাস্ত্র বলে, মুদ্রানীতির সঙ্গে আর্থিক নীতির সমন্বয় করতে হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সুদের হার বাড়াতে হয়, কিন্তু সরকার তা পারেনি। অবশ্য সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, করোনার পরপর আমরা বলেছিলাম ২০২৩-২৪ সালে দায়-দেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। সেই ধাক্কা শুরু হয়েছে। বড় বড় প্রকল্পের জন্য যে বিভিন্ন সুদে অর্থ নেওয়া হয়েছে, তা পরিশোধের সময় এসেছে। কিন্তু এসব প্রকল্প থেকে রাতারাতি আয় আসছে না। এলেও তা বিদেশি মুদ্রায় নয়। বিশেষত বিদেশি দায়-দেনা শোধ করার কারণে মজুতের ওপর চাপ আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের অপরিশোধিত দেনা শোধ করতে হবে। আবার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার বিক্রি করতে হবে। ফলে মজুতের ওপর চাপ আরও বাড়বে।