তৈরি পোশাকের বাইরে অনেকগুলো খাত আছে যেগুলো খুবই সম্ভাবনাময় – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in বণিক বার্তা on 22 January 2024

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। গবেষণাকর্মের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির মর্যাদাপূর্ণ ইব্রাহিম স্মৃতি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য। নতুন বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

আমাদের অর্থনীতির একটা বড় অসুবিধা হচ্ছে তৈরি পোশাক বা আরএমজি-নির্ভরতা। আমাদের রফতানির সিংহভাগই আরএমজি। কোন কোন খাত সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন?

রফতানি বৈচিত্র্যকরণের দিকটাকে আমি দুভাবে দেখি। একটা হলো, আমাদের জন্য এটা খুবই ইতিবাচক যে আমরা এক পণ্যে সক্ষমতা অর্জন করেছি যার বিশাল বাজার রয়েছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের তৈরি পোশাক এবং টেক্সটাইল মিলিয়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কেট। আরো ৫০টি পণ্যে প্রতিযোগিতায় সক্ষম হলে সেগুলোর বিশ্ববাজার হয়তো ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার হবে। কিন্তু এমন একটা প্রতিযোগিতায় আমরা সক্ষমতা প্রমাণ করেছি যে যেটার প্রায় ১ হাজার বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজার আছে। আমরা তৈরি পোশাকে বিশ্বে দ্বিতীয়। আমরা ৬ শতাংশে, যেখানে চীন ৩০ শতাংশের মতো। এখন প্রায় সবাই চায়না প্লাস ওয়ান বলেছে। আর আমি মনে করি, তৈরি পোশাক খাতের বৈচিত্র্যকরণও একটা বড় সুযোগ। আমাদের তৈরি পোশাক খাত কটনের ওপর ৭০ ভাগ নির্ভরশীল। রফতানি হলো কটনভিত্তিক তৈরি পোশাক খাত। বিশ্ববাজারে কিন্তু সিংহভাগ নন-কটন যা সিনথেটিক, ম্যানমেড ফাইবার ও পলিয়েস্টার ইত্যাদি। আমাদের তৈরি পোশাক খাতের ভেতরেও বড় ধরনের বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ আছে। একই সঙ্গে আমাদের মোট রফতানির ৮৮ শতাংশের মতো যায় উত্তর আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোয়। দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও আসিয়ান মিলে মাত্র ১২ শতাংশ রফতানি হয়। বাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তৈরি পোশাক খাতের বড় বাজারটা আমরা নিতে পারি। আরএমজির বাইরে আমাদের আরো অনেক খাত আছে যেগুলো খুবই সম্ভাবনাময়। এর একটা হলো ফার্মাসিউটিক্যালস। তৈরি পোশাক খাতের চেয়েও এর অনেক বড় বাজার।

এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ায় ২০০১ সাল থেকে আমরা পেটেন্ট লাইসেন্স ছাড়াই অনেক ওষুধ উৎপাদনের সুযোগ পেয়েছি। অভ্যন্তরীণ সুযোগটা আমরা কাজে লাগিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে তৈরি পোশাক খাতের মতো দ্বিতীয় পণ্যের উৎস হিসেবে আমরা আবির্ভূত হতে পারিনি। কিন্তু আমাদের একটা সুযোগ ছিল। এটা এখনো মাত্র ১৬০ মিলিয়ন ডলারের রফতানি।

অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কটা যদি দ্রুত করতে পারি এবং সেটা কাজে লাগাতে পারি যেটা আমাদের ১ বিলিয়ন ডলারের মতো উপাদান ভারত, চীন ও কোরিয়া থেকে আমদানি করতে হয়, সেটাও একটা বড় সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানে একটা সমৃদ্ধ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করতেই আমাদের বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। এটা এখন দরকার হবে যখন আমরা ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাব, আমাদের এ ওয়েবারটা থাকবে না। আমাদের পেটেন্টকৃত যেসব ওষুধ আছে সেগুলো উৎপাদন করতে হবে। অবস্থাটা পাল্টে যাবে। সেজন্য ওষুধ শিল্প পার্কটা খুবই জরুরি।

চামড়া শিল্প কতটুকু সম্ভাবনাময়?

তারপর আমাদের লেদার পণ্যেরও বিশাল আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। আমাদের কাঁচামালের মান খুবই ভালো। এ পণ্যে আমরা অভ্যন্তরীণ বাজারে ভালো করছি, কিন্তু বিশ্ববাজারে আমরা সেভাবে প্রবেশ করতে পারিনি। আমরা যদি লক্ষ করি যে গত অর্থবছরের পাঁচ মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরে তৈরি পোশাকের রফতানি আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু নন-রেডিমেড গার্মেন্টের ২২-২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই নজরে রাখতে হবে যে বিশ্ববাজারে যে সংকোচন হয়েছে সেটার প্রভাব কিন্তু নন-রেডিমেড গার্মেন্ট বাজারে পড়েনি। তাই ফার্মাসিটিউক্যালস ও লেদার ফুটওয়্যার বলি এগুলোর কিন্তু একটা ভালো সম্ভাবনা আছে।

আমাদের সেবা খাত। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় যা ভারতের পরই আমাদের অবস্থান। এসব জায়গায় আমরা ব্যাকএন্ড থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারি, যেমন সফটওয়্যার ইত্যাদি। তাই সেবা খাতের বাজারটাই কিন্তু দ্রুত বাড়ছে।

ই-কমার্স ও এফ-কমার্স এসব ক্ষেত্রে যদি আমরা ইন্টারনেট, ইন্টারনেটের গতি ও ব্যয় বাড়াতে পারি তাহলে সেবা খাতেরও অনেক বড় সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি। এর বাইরেও আমাদের অনেক কিছু আছে, যেমন সিরামিক, প্লাস্টিক ও ফার্নিশিংসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হচ্ছে যা অল্প পরিমাণে। কিন্তু তৈরি পোশাকই প্রায় ৮৪ ভাগ। কিন্তু এসব পণ্যেরও বড় ধরনের বাজার আছে এবং আমরা সেগুলো রফতানিও করছি। এখানে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ও সরবরাহ সক্ষমতাও আছে, কিন্তু এটাকে এখন ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগ আনতে পারলে রফতানি বহুমুখীকরণ বাজারে একটা বড় ধাক্কা দিতে পারব। বিশেষত বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা বাজার সম্পর্কে জানে, তাদের কী ধরনের চাহিদা রয়েছে সে বিষয়ে তারা জানে। সুতরাং একত্রীকরণের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে শ্রমঘন অনেক শিল্প আছে যেগুলো গড়ে ওঠতে পারে।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছে?

অনেকেই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কে আগ্রহ দেখাচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অনেক সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয় কিন্তু এসবের গড় মৃত্যুহার অনেক বেশি। তাদের আগ্রহ ও উৎসাহকে কীভাবে আমরা বাস্তবে বিনিয়োগে রূপান্তর করতে পারি সেটার জন্য বিশেষ করে আমাদের অর্থনৈতিক জোন ও অন্যান্য উদ্যোগ নিচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা বড় ধরনের অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করেছি, বিশেষ করে ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি, ট্রেড কানেক্টিভিটি ও ইনভেস্টমেন্ট কানেক্টিভিটির ত্রিমাত্রিক সংশ্লেষ করার একটা সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে।

আমাদের এখন আঞ্চলিক বাজারের প্রসার ঘটাতে হবে। ভারত আমদানি করে ৭৫০ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু আমি সেই বাজারে রফতানি করি মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো। অন্যদিকে চীন আমদানি করে ২ হাজার ৮০০ বিলিয়ন ডলারের, কিন্তু আমরা সেই বাজারে রফতানি করি ১ বিলিয়ন ডলারও না। অথচ আমি এসব দেশ থেকে আমদানি করছি। কিছু কিছু পণ্য আমরা বাইরের দেশে রফতানি করি কিন্তু এসব দেশে রফতানি করি না।

এগুলোকে শনাক্ত করে বাজার বৈচিত্র্যকরণ, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করার খরচ (কস্ট অব ডুয়িং) এবং ব্যবসা সহজীকরণ (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) ভালো করতে হবে। তাহলে আমি মনে করি, এসব ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সম্ভাবনাই আছে। ফলে আমাদের বড় ধরনের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। ভালো আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু এর জন্য আবার আমাদের দক্ষতা, মানসম্মত শিক্ষার প্রতিও নজর দিতে হবে। মেডিকেল সার্ভিস ও নার্সিং এটারও বিশাল বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় এজিং সোসাইটি গড়ে উঠছে। এসব জায়গায় কিন্তু বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আরো ১৫ বছরের মতো আছে। এটাকে যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব।

তৈরি পোশাক শিল্পে লেবার রাইটস ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কিনা? শ্রমিকরাও তাদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সন্তুষ্ট নন—বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এটা নিয়ে কোনো ঝুঁকি বা শঙ্কা আছে কিনা?

এটা খুবই চিন্তার বিষয়। এটা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বেগের জায়গার কথাও জানিয়েছে। কত শতাংশ স্বাক্ষর হলে তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবে সেটাও বলছে। ট্রেড সম্পর্কিত ডিসপুট বা ট্রাইব্যুনাল দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছে। শ্রমিকরা আন্দোলন করলে তাদের হয়রানি না করতে বলেছে। কারণ যতক্ষণ শান্তিপূর্ণ হয় ততক্ষণ তাদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। সেসব বিষয়ে তারা এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিভিন্ন সভায় অংশ নিই। তারা নানা ধরনের কথা বলে। আমরাও উত্তর দিই। এভাবেই চলছে। যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উত্তরণ হচ্ছি, তারা কিন্তু এখন নমনীয় দৃষ্টিতে তাকাবে না। আমরা এরই মধ্যে এসবের ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমার মতে, এগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা। আর শ্রমিকরাও আমাদের দেশেরই জনগণ। আমাদের দেশে বড় ধরনের আয়বৈষম্য, ধনবৈষম্যসহ বিভিন্ন বৈষম্য তো বাড়ছেই। এটাও তো ঠিক। সেদিকটায় তারা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকারটা রক্ষা করতে পারেন, শোভন কর্মসংস্থান, শোভন মজুরি যাতে পান সেটা আমাদের করতে হবে। কিন্তু এটা করতে গেলে এটার আবার ব্যয়ও আছে। উৎপাদনশীলতা না বাড়িয়ে উদ্যোক্তা তার বেতন বাড়াতে পারবেন না।

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গেলে এখন যে পরিমাণ শ্রমিক নিয়োজিত আছেন তা দিয়ে হবে না। লেবার ডিসপ্লেসিং অনেক প্রযুক্তি আছে, যার ফলে শ্রমিকদের কাজ অনেকটা মেশিন নিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। যারা কাজ করবেন তাদের শোভন মজুরি দিতে পারবেন, কিন্তু বেশি লোকের মজুরি দিতে পারবে না। তাহলে তৈরি পোশাকের বাইরেও শিল্পের বিকাশ করতে হবে। সেটা না করলে তারা বেকার থেকে যাবেন। আরেকটা বিষয় লক্ষ করছি, যত শিক্ষিত তত বেকারের হারও বেশি। শিক্ষিতদের যে বেকারত্ব সেটাও যদি আমাদের মোকাবেলা করতে হয় তাহলে মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে দক্ষতা দিয়ে কেবল দেশীয় শ্রমবাজার নয়, বৈদেশিক শ্রমবাজারেও আমরা খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারব। তাই এ বিষয়গুলো আমাদের নজরে রাখতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার, শোভন কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা এবং হয়রানি যাতে না করা হয় সেগুলোর বিষয়েও নজরে রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনেকগুলো কনভেনশন স্বাক্ষর করেছি সেগুলো আমাদের কার্যকর করতে হবে। কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো শুধু শ্রমিক অধিকার নয়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সুশাসন, লিঙ্গ অধিকার ও পরিবেশবান্ধব কিনা, কার্বন ডাই-অক্সাইড কতটুকু নিঃসরণ হচ্ছে এসবও চলে এসেছে। সুতরাং কর্ম পরিবেশটা শ্রমিকদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাজারে প্রবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক সংকট অর্থনীতিতে কী ঝুঁকি তৈরি করেছে?

আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন হয়। এটাকে দুভাবে দেখা যেতে পারে। আন্দোলনটা যারা করছেন তাদের কোনো যৌক্তিক দাবি আছে কিনা সেটাও আমাদের দেখতে হবে। আবার এ আন্দোলনের ফলে আমাদের যেন অর্থনৈতিক ক্ষতি না হয় সেদিকেও নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং এখানে যদি সমঝোতামূলক একটি পরিবেশ না রাখতে পারি তাহলে নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্তিমূলক যে সমাজ চাই সেটা আমরা পাব না। আরেকটা হলো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত যে বাংলাদেশ চাই, যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন, সেই পরিবেশও কিন্তু থাকবে না।

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার এসেছে। নতুন সরকারের সামনে কি চ্যালেঞ্জ আছে?

আমার মতে, উত্তরাধিকার সূত্রেই আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। রিজার্ভ সংকট, বৈদেশিক মুদ্রামানের ক্রমাগত অবনমন, সেটাকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, কিন্তু এগুলোর অভিঘাত থেকে যাবে। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে এসে টাকার মানটাকে একটি স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। সুদের হার যেটা অনেক দিন ধরে ‘ছয়-নয়’-এর মধ্যে বাঁধা ছিল। এটা এরই মধ্যে বাজারমুখী করা হচ্ছে, সেটাকে একটা যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যেতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সেবা, বিনিয়োগ, ব্যাংকিং, অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় আহরণের সঙ্গে জড়িত যেসব প্রতিষ্ঠান আছে—সেটা এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক হোক সেগুলোর দক্ষতা ও সামর্থ্যের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

নতুন সরকার এ পরিস্থিতি কতটুকু সামাল দিতে পারবেন সেটা একটা বিষয়। তবে এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে আমরা যে অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটা আরো প্রকট হবে। এমনকি এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সুতরাং সংস্কার কর্মসূচি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সেবাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি ও করখেলাপির বিরুদ্ধে যদি শক্ত পদক্ষেপ নেয়া যায় তাহলে পরিস্থিতিটাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। হয়তো একটা ভারসাম্যে যেতে পারব।