দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার – ড. মোয়াজ্জেম

Originally posted in প্রতিদিনের সংবাদ on 28 February 2024

দুষ্টচক্রে চড়া বাজার

মজুদদারসহ বিভিন্ন দুষ্টচক্রে বাঁধা পড়ে নিত্যপণ্যের বাজার চড়ছেই। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চক্রের হোতাদের নামের তালিকা থাকলেও কঠোর উদ্যোগের অভাবে তারা অধরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হুঁশিয়ারি করছেন। কিন্তু রমজান মাস শুরুর আগেই বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে; বাড়ছে ক্রেতাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও সাহসী উদ্যোগের ঘাটতির কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ থেকে ১৬২ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। পাম তেল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।

এ বাজারের ক্রেতা সাইদুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন, রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না। দাম বাড়লেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। কোনো কারণ ছাড়াই চাল, তেল, ডাল ও চিনির দাম বাড়ছে। আবার রমজানকে ঘিরে খেজুর, ছোলার দামও বেড়েছে। সারা দিন রোজা রাখার পর মানুষ একটু আহার করবে, তাতেও বাধা দিচ্ছে সিন্ডিকেট।

এদিকে কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। সরু চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি এবং আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়া রমজানের অন্যতম প্রধান পণ্য খেজুর মানভেদে সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাস খানেক আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৯০ টাকা, সরু চাল ৬৫ থেকে ৭৬ এবং খেজুর ২২০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পণ্যের এমন দর বৃদ্ধি রোধে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট মাস বা উপলক্ষ ঘিরে দাম নিয়ন্ত্রণের রাখার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না। এজন্য বাজারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।

সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগের  গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, আমাদের বাজার কাঠামোয় যে ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে, তা মোকাবিলায় স্বল্প সময়ে এর সমাধান হবে না। বাজার তদারকি করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমদানি ও মনিটরিংয়ের জন্য যথেষ্ট মেকানিজম নেই।

এজন্য দীর্ঘ মেয়াদে সরবরাহ ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা, তথ্য-উপাত্তভিত্তিক ডেটাবেজ তৈরি করা, এগুলো অনলাইনভিত্তিক করা, যারা নিবন্ধিত না তাদের কারসাজির সুযোগ না দেওয়া- এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। তবে সরকার কিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে চালের বস্তার গায়ে পণ্যমূল্য ও বিক্রেতার নাম লিখে দেওয়া।

এ ধরনের উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে পুনর্গঠন করতে সময় দরকার। এর আগে পর্যন্ত রমজান হোক বা পূজা-পার্বণ হোক সমস্যা থাকবেই। কখনো কখনো এটা ভোক্তার ঘাড়ে যাবে, কখনো কখনো উৎপাদকের ঘাড়ে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ করা কষ্টকর হবে। এজন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষণার পাশাপাশি সহজ কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত হবে না। কারণ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করতে না পারলে অসন্তোষ তৈরি হবে।

কারণ ছাড়াই পণ্যের হঠাৎ দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সাধারণভাবে কারা পণ্য আমদানি করছেন, কী পরিমাণ করছেন তার তথ্য সরকারের কাছে আছে। তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ তথ্য যথেষ্ট না। কারণ সরবরাহ বা আমদানিকারককে ধরে এসব তথ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে এবং চিহ্নিতকরণেও ঘাটতি রয়েছে। এজন্য সরকারের দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম বাড়বে না- মন্ত্রীদের এমন ঘোষণার পরও কেন বাড়ছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি মনে করি, সরকার চাইলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মন্ত্রীদের কথায় আস্থা রাখতে চাই।