এলডিসি উত্তরণের পর নিজ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে সরকারকে বেশি নজর দিতে হবেঃ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Published in আমাদের সময় on Sunday, 18 March 2018

নতুন চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

গোলাম রাব্বানী

দেশবাসীর জন্য সুসংবাদ। ‘স্বল্পোন্নত’ দেশের তকমা ছাড়িয়ে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আলোর উল্টোপাশেই যেমন অন্ধকারের বাস, তেমনই এই সুসংবাদের উল্টোপিঠে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে ৫৬ হাজার বর্গমাইল অধ্যুষিত এই দেশকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন এ স্বীকৃতির কারণে রপ্তানি খাতে আঘাত আসতে পারে, কমে যেতে পারে রেমিট্যান্স, কমবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বৈদেশিক অনুদান, অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণপ্রাপ্তির দুয়ার সংকুচিত হয়ে আসবে। এগুলো মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে দেশের মর্যাদা বাড়ায় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রয়োজন বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা, যা এখনো তৈরি হয়নি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু তা এখনো প্রণয়ন করেনি সরকার। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হলে এর যে সুফলগুলো পাওয়ার কথা, সেগুলোর অর্জন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। নতুন স্বীকৃতিপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা পাবে না। তাই রপ্তানিপণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে; আরও বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে দেশ। বিদেশি ক্রেতারা অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয়ে নিরুৎসাহিত হবেন। এমতাবস্থায় ক্রেতাদের ধরে রাখতে পণ্যের মান বাড়াতে হবে।

এ ছাড়া বিদেশি অনুদান কমে যাবে। এখন দেশের মোট বাজেটের ২ শতাংশ আসে অনুদান থেকে। এর বাইরে, বিশেষ করে এ দেশে কাজ করছে যেসব এনজিও, সেগুলোর অর্থের বড় অংশেরই জোগান আসে বৈদেশিক অনুদান থেকে। এটি কমে গেলে অর্থ সংকট দেখা দিতে পারে এ দেশে কাজ করা এনজিওগুলোর। সঙ্গত কারণেই এ খাতের জন্য সরকারের আগাম পরিকল্পনা করা জরুরি।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া নতুন স্বীকৃতিপ্রাপ্তির বদৌলতে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যাবে। সেগুলো পূরণ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

সরকার এখন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে থাকে। সামনে তা পাবে না। সরকারকে এখন ঋণের বিপরীতে চড়া সুদ দিতে হবে। তাই বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়ে যাবে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে এখন দেশের ভেতরে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বৈদেশিক বিনিয়োগের দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ না হলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোতে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে না। তখন শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। এতে এ দেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পে আঘাত আসবে।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া সুশাসন, জনস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পে আরও বেশি তদারকি প্রয়োজন হবে। সরকারকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। যেটি সরকার এখনো করেনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এর আগে যেসব দেশ এ তালিকা থেকে বের হয়েছে, তাদের রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক সাহায্য কমে গেছে। নিজ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিক থেকে বেশি নজর দিতে হবে সরকারকে।

সিপিডির এই বিশেষ ফেলো আরও বলেন, রপ্তানি খাতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। সরকার আগে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ থেকে কম সুদে যে ঋণ পেত, সেগুলো কমে যাবে। বৈদেশিক ঋণ নিলে চড়া সুদে নিতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নাম ওঠে আসায় এখন সব কিছুর সঠিক সংস্কার প্রয়োজন। বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। উচ্চমূল্য সংযোজন হয় এমন শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।