নদী ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত- বরিশাল সংলাপে বক্তারা

Download Presentation

বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন নদীর ভাঙন জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করেন বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। এই দাবী উঠে আসে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর পক্ষ থেকে আয়োজিত জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপে।

জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফাণ্ড (ইউএনডিইএফ) এবং সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, খুলনা-এর সহযোগিতায় সিপিডি সংলাপটি ২৪ মার্চ ২০২২ বরিশালে আয়োজন করে।

নির্বাচনের প্রাক্বালে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের অঙ্গীকার করে। ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকারসমূহ যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটিকে দল ও ভোটারদের মাঝে একটি লিখিত চুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ প্রকাশ করে। সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

জনাব জাহিদ ফারুক, এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে বাবস্থাপনা একটি কঠিন বিষয়। করোনার আঘাতে এই সরকার অনেকদিন কাজ করতে পারেনি। তাই অনেক অঙ্গীকার বাসবায়ন করা যায়নি। নদী ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্ষার সময় আশেপাশের দেশ থেকে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মেট্রিকটন পলি নেমে আসে যা একটি বিশাল সমস্যা। জনসংখ্যার চাপে আমাদের কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে আন্তরিক। ৪০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে ভ্যাক্সিন কেনার জন্য। এখন বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে প্রায় ৮২ টি প্রকল্প চালু রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দক্ষিন অঞ্চলের মানুষদের উন্নতির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আন্তরিক। প্রতিমন্ত্রী আলোচনায় উঠে আসা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং সমস্যা সমাধানে তার প্রচেষ্টা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন দুর্নীতি বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই এবং যারা আছেন তাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণকে তিনি সরকারের পাশে চান।

সংলাপের সম্মানিত অতিথি জনাব টিপু সুলতান, সাবেক সাংসদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি বলেন, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে তাহলেই রাজনীতি এবং দেশ সঠিক পথে পরিচালিত হবে। আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরত যেতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বরিশাল নদী ভাঙন এলাকা হলেও এখানে তেমন কোন পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

সংলাপের সভাপতি ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য দেওয়া ছিল। সেই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের ওপরে তিনি জোর দেন।

. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডি হাঙ্গার প্রোজেক্ট বাংলাদেশ সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। নির্বাচনী ইশতেহার একধরনের চুক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

সিপিডি’র সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জনাব অভ্র ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনায় তিনি বিভিন্ন সুচকে বরিশাল অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার এবং অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০ টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় বরিশাল অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত এবং পরামর্শও তুলে ধরা হয়।

প্রফেসর গাজী জাহিদ হোসেন, সভাপতি, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, বরিশাল সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন আজকের আলোচনা অত্যন্ত প্রানবন্ত হয়েছে। বরিশাল বিষয়ক নানা ভাবনা নিয়ে এই আলোচনা সমৃদ্ধ হয়েছে।

মিজ সুস্মিতা রায়, সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল, বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে এ খাতে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।

প্রফেসর শাহ সাজেদা, সভাপতি, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বলেন বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে কিন্তু রাজনীতিতে এক তৃতীয়াংশ নারীদের অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত হয়নি। “আমার ভোট আমি দেব” এই কথাটি নারীর জন্য এখনো সত্য নয়।

মিজ রাবেয়া খাতুন, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বরিশাল বলেন, বরিশাল অঞ্চলে নারীদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম এবং শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি জোর দেন। নারীদের নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে নারী উন্নয়নের বিষয়টি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তিনি নারীদের “আত্মরক্ষা কৌশল” প্রশিক্ষণের কথা বলেন।

বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার ভক্ত বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের কথা বলেন এবং সংসদে দলিতদের প্রতিনিধি না থাকার কথা উল্লেখ করেন। নারী উদ্যোক্তা হাছিনা বেগম নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা মার্কেটের দাবী করেন। অ্যাাডভোকেট মোস্তফা কাদের জেলা ভিত্তিক বাজেটের প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি নজরুল হক নীলু নদী ভাঙনের ভয়াবহতা তুলে ধরে ইশতেহারে এ বিষয়টিকে নজর দিতে বলেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবী তুলে ধরেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুকাইয়া বিনতে নাসির পোশাক দিয়ে নারীদের মূল্যায়নের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন সর্বক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংলাপে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।