প্রস্তাবিত ব্যাংকিং কমিশনকে সিপিডি’র শর্তসাপেক্ষ সমর্থন

পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে সরকার একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের ব্যাংকিং খাতের শৃংখলা আনয়নে এই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগকে শর্তসাপেক্ষে নীতিগত সমর্থন প্রদান করছে সিপিডি। টেকসই, বাস্তবসম্মত ও ফলপ্রসূ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এই ব্যাংকিং কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি, কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুশাসন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। এক্ষেত্রে, ব্যাংকিংখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নাগরিক সমাজ, ব্যক্তিখাত, গ্রাহকসহ সকল পর্যায়ের অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সুপারিশমালা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

ব্যাংকিং কমিশন সম্পর্কে সিপিডি’র মতামত পড়ুন এখানে –  বণিক বার্তা | The Daily Star

ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসকল মতামত তুলে ধরে সিপিডি। “প্রস্তাবিত ব্যাংকিং কমিশনঃ সিপিডি’র প্রতিক্রিয়া” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/2568320656789765/

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “দেশের ব্যাংকিংখাতে শৃংখলা আনয়নের জন্য সিপিডি ২০১২ সাল থেকেই একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করে আসছে। সরকারের এই উদ্যোগ যদি সত্যিই বাস্তবায়ন হয় তাহলে সেটি একটি ভালো উদ্যোগ হবে। সিপিডি মনে করে, সিপিডি-সহ অন্যান্য অনেকের নিরন্তর আলোচনা ও দাবী শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে”।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “প্রস্তাবিত এই ব্যাংকিং কমিশনের একটি সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধি থাকা উচিৎ। কমিশনের কর্মপরিধির আওতায় ব্যাংকিংখাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের গ্রাহক এবং অর্থনীতির জন্য ব্যাংকিং খাত কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা পরিমাপ করা উচিৎ। কমিশনের আওতায় ব্যাংকিং খাতের সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার বিষয়টি কমিশনের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিৎ। ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান সমস্যার মূল কারণগুলো কি এবং সামনের দিনের চ্যালেঞ্জগুলোর চিহ্নিত করা এবং ব্যাংকিং খাতের সমস্যার জন্য কারা এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠান দায়ী তা চিহ্নিত করাও কমিশনের কার্যক্রমের অংশ হওয়া প্রয়োজন। এসব বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্বল্প এবং মধ্য-মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকটাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কি ধরনের প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কমিশন সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরী করবে এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে এটাই প্রত্যাশা”।

সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা অসহায় আতঙ্ক নিয়ে একটা ভয়ংকর ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে সমস্ত সুবিবেচিত নীতিমালা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রকাশ্য বরখেলাপ ঘটছে। গুটিকয়েক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের হাতে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর জিম্মি হয়ে গেছে। প্রস্তাবিত এই ব্যাংকিং কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজের ক্ষমতা ও সুযোগ প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রস্তাবিত কমিশন একটি সাময়িক কমিশন হিসেবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আগামী বাজেটকে সামনে রেখে আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এই ব্যাংকিং কমিশনের একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রদান করা উচিৎ। কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজের ক্ষেত্রে ব্যাংকিংখাত সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের মতামত ও কার্যকর সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে”।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি, বলেন, “সরকারের এই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। অন্যান্য দেশের উত্তম চর্চা থেকে এই কমিশন যেন সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সমাধানের দিকেও অগ্রসর হতে পারে আমরা সেটি প্রত্যাশা করছি। অর্থপাচার, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ব্যাংকিংখাতকে সুশৃংখল করতে হলে একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে টেকসই সমাধান নিশ্চিতকরণে সরকারের মনোযোগী হতে হবে”।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।