ব্রিকসে যুক্ত হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হবে – খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Originally posted in কালেরকন্ঠ on 16 June 2023

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তাতে বিভিন্ন দেশ বিকল্প মুদ্রায় বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের ধারণার মধ্যেও এই বিকল্প মুদ্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিকল্প কোনো মুদ্রা চালু হবে কি না তা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কারণ তারা এখনো নিজেদের মধ্যে বড় আকারে আন্ত মুদ্রা বিনিয়ম শুরু করেনি।

এই জোটের দেশগুলো এখনো ডলারের ওপরই নির্ভরশীল। বিকল্প মুদ্রা চালু হলে নিকট ভবিষ্যতে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমতে পারে। বাংলাদেশসহ আরো কিছু দেশ ব্রিকস জোটে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জোটে যাওয়ার ঘোষণাও দিল।

আগামী দিন এর সঙ্গে আরো উদীয়মান কিছু দেশ যুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেদিক থেকে এ রকম একটি অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ। ফলে পুরো বিষয়টি ইতিবাচক বলা যায়। ব্রিকস জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতার চমৎকার একটি উদাহরণ হতে পারে।

চীন ও ভারতের পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে নানাভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা নিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই যুক্তিতে এ রকম একটি পদক্ষেপে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো আগামী দিনে নতুন ভিত্তি পাবে, যাকে আমরা বলি সহযোগিতার বহুমুখীকরণ।

আবার রাজনৈতিক জোটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যে ধরনের নির্ভরতা রয়েছে, উন্নত দেশনির্ভর জোটগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারলে আগামী দিনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে নিজেকে বিস্তৃত করার সুযোগ পাবে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা জানি না কোন মর্যাদায়, কিভাবে, বাংলাদেশ এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বিষয়গুলো হয়তো সামনে পরিষ্কার হবে।

বাংলাদেশ কি পূর্ণ সদস্য হবে, না সহযোগী সদস্য হবে, তাও দ্রুত জানা যাবে। সে হিসেবে তার কার্যক্রম নির্ধারিত হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসা বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আগামী আগস্টে বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশকে ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দিতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ব্রিকস বাংলাদেশকে সদস্য করবে। প্রধানমন্ত্রী আগামী আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যাবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ব্রিকস আগামী দিনে আরো আটটি দেশকে সদস্য করবে। তার মধ্যে বাংলাদেশ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়াকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটি অর্থায়নের আরেকটি ক্ষেত্র হবে।

ধারণা করা যায়, এ ধরনের জোট ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনৈতিক, ব্যাবসায়িক ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো বিস্তৃত করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। ব্রিকস জোটের সদস্য হলে বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য করার সুযোগ আরো বাড়বে। দেশভিত্তিক যে বাণিজ্য আমরা করতাম, জোটভুক্ত হলে যৌক্তিক কাঠামোর আলোকে আমাদের বাণিজ্য-বিনিয়োগ কর্মকাণ্ডকে বিকেন্দ্রিকরণ করার সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশ ব্রিকস জোটে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এখন এ বিষয়ে জোটের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর আনুষ্ঠানিকভাবে একমত হওয়ার বিষয়ও রয়েছে। এ বিষয়গুলো খোলাসা হবে আগামী আগস্ট মাসের দিকে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট, বিশেষ করে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ব্রিকস জোট গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়াটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিস্তৃত করবে।

লেখক : খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)