ভর্তুকি এখন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার হাতিয়ার – দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Originally posted in প্রথম আলো on 30 January 2023

বিদ্যমান ব্যবস্থায় ভালো ও খারাপ—দুই ধরনের ভর্তুকি আছে। কিন্তু এখন ভর্তুকি নিয়ে বাছবিচার হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে ভর্তুকির অর্থনৈতিক দিক নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে, তার চেয়ে রাজনৈতিক ইস্যুই আলোচনায় বেশি এসেছে।

কিন্তু সামগ্রিকভাবে ভর্তুকির পরিমাণের চেয়ে এর কাঠামো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দেশের অর্থনীতিতে নানা সমস্যা আছে। এই মুহূর্তে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করায় শ্লথগতি আছে। মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি, যা গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের গতিও অনেক কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকির খাত নির্বাচন, বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী চিহ্নিত করাসহ সার্বিকভাবে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা করা উচিত। কিন্তু সরকার এখন যেসব খাতকে ভর্তুকির জন্য বেছে নিচ্ছে, যা নির্দেশ দিয়েই বাস্তবায়ন করা যায়—এমন খাত নির্বাচন করা হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমছে।

কর্মসংস্থানের গতিও অনেক কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকির খাত নির্বাচন, বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী চিহ্নিত করাসহ সার্বিকভাবে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা করা উচিত।

তাই আমি মনে করি, সার্বিকভাবে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা প্রয়োজন। কারণ, শেষ বিচারে ভর্তুকি এখন উন্নয়নের হাতিয়ারের চেয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার হাতিয়ার হয়ে গেছে। আমরা পরিষ্কার দেখেছি, বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বের হয়ে আসতে পারলাম না। আমরা দেখেছি, কীভাবে এলএনজি লবির কাছে হেরে গেলাম।

এসব কারণে এখন যেখানে ভর্তুকি প্রয়োজন, সেখানে বরাদ্দ দিতে পারছি না। সামাজিক সুরক্ষায় পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করতে পারছি না। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সুরক্ষা দিতে অর্থের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এখন নতুন করে আরও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও তাতে বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। এর পরিণামে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে।

এবার আসি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ভর্তুকির মনোভাব নিয়ে আলোচনায়। আইএমএফ ভালো ভর্তুকির বিষয়টি বিবেচনায় আনে না। তাদের কাছে ভর্তুকি মানেই অপচয় ও অকার্যকর ব্যয়। তাদের কাছে ভর্তুকি এভাবেই বিবেচিত হয়। কিন্তু আমরা মনে করি ভর্তুকি রাখতে হবে। কিন্তু কাকে দিচ্ছেন, কীভাবে দিচ্ছেন, সেটাও দেখতে হবে।

এখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভর্তুকির আলোচনা নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক জায়গায় আলোচনা হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ে আরেক জায়গায় আলোচনা হচ্ছে। সার্বিকভাবে ভর্তুকির কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)