মন্দার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির আনাচে কানাচে – খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Originally posted in সময়ের আলো on 7 March 2023

মহামারি করোনা দেশের অর্থনীতিকে বেশ নাড়া দিয়ে গেছে। তবে ২০২২ সালে করোনার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালীভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এবং বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা লক্ষ করছিলাম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। সেই ভালো পরিস্থিতিটি অনেকটা হঠাৎ করেই পাল্টে গেল যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করল। প্রথমে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল যুদ্ধটি শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এ জন্য মনে হয়েছিল ওইসব দেশেই যুদ্ধের প্রভাব পড়বে, বাংলাদেশের ওপর তেমন একটি প্রভাব পড়বে না।

কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশগুলো। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো যখন বিভিন্নভাবে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছিল, একই সঙ্গে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত-এমনকি অর্থের লেনদেনও বাধাগ্রস্ত হতে লাগল। তখন আমরা অনুধাবন করতে লাগলাম যে, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু এই দুটি দেশ বা ওই অঞ্চলের দেশগুলোই নয়, এর বহুমাত্রিক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে যাচ্ছে। ঠিক সেভাবেই গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই প্রভাবটি শুধু বাংলাদেশকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা নয়। যুদ্ধের এই প্রভাব উন্নয়নশীল অনেক দেশের ওপরই কম-বেশি পড়েছে। মূলত যুদ্ধের প্রভাব সেই দেশগুলোতেই বেশি পড়েছে, যারা জ্বালানি আমদানিকারক দেশ এবং খাদ্যপণ্য আমদানিকারক দেশ। বাংলাদেশ এই উভয় ক্যাটাগরিরই আমদানিকারক দেশ। এ কারণে যুদ্ধের প্রভাব বংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসেবে আমরা দেখেছি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির প্রাপ্যতা সংকট, একই সঙ্গে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এই সংকটগুলোর তাৎক্ষণিক প্রভাব আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স যেটি রয়েছে-যা দিয়ে আমরা পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যয় মিটিয়ে থাকি। সেই জায়গায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

রফতানির ক্ষেত্রে হয়তো আমরা এখনও ইতিবাচক ধারায় রয়েছি এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রফতানির যে তথ্য এসেছে তাতে রফতানি আয় এখনও বেশ ভালোই বলা যায়। এই সংকটময় সময়ে এটি খুবই আশাব্যাঞ্জক। ঠিক একইভাবে রেমিট্যান্সেও ওঠানামা রয়েছে। কখনো ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কখনো একটু খারাপ হচ্ছে। তারপরও রেমিট্যান্সে ফরমাল চ্যানেলে দেশে অর্থ কম ঢুকলেও রেমিট্যান্স নির্ভরশীল পরিবারগুলো ঠিকই টাকা হাতে পাচ্ছে। সেটা ফরমাল চ্যানেল হোক বা ইনফরমাল চ্যানেল হোক-অর্থ তো আসছে। তবে এই সংকটময় পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির একেবারে ছোট বা ক্ষুদ্র থেকে বড় কর্মকাণ্ডে প্রভাবে পড়েছে। এটা যেমন টুথপেস্ট, বিস্কিট বা ওষুধ থেকে শুরু করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে।

সুতরাং বলা যেতে পারে অর্থনীতির আনাচে-কানাচে বা সর্বক্ষেত্রে এই নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেটি বলার বিষয়-সেটি হচ্ছে এই যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বাংলাদেশ এই যুদ্ধের অন্যতম বড় ভিকটিম। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে-যে বাংলাদেশকে সবাই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখত এবং বিভিন্ন সময় বলা হয়ে থাকে দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সেই পরিচয়টি যুদ্ধের কারণে কমতে শুরু করেছে। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য হলো-এর দায় বাংলাদেশের নয়।

যুদ্ধের কারণে এই নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে যদি আমরা ভাগ করি তা হলে ব্যক্তি পর্যায়ে বা ভোক্তা পর্যায়ে সবচেয়ে বড় যে প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটি হলো মূল্যস্ফীতি। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি ৮ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মানুষের জন্য এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সহ্য করা কঠিন। এখন মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। তা ছাড়া এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র মানুষের একদিকে পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা এখন রিপোর্ট দেখছি=ব্রয়লার মুরগিও এখন ভাগায় বিক্রি হচ্ছে। তার মানে গরিব মানুষের পক্ষে এখন একটি আস্ত ব্রয়লার মুরগি কেনার মতোও অর্থ নেই। গরিবের পুষ্টির আধার এই ব্রয়লার মুরগিরও এখন উচ্চমূল্য।

এর পাশাপাশি বিগত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এটিও যুদ্ধের ও মন্দার প্রভাবের ফল। যদিও বিদ্যুৎ খাতের মূল্যবৃদ্ধির আরও অভ্যন্তরীণ অনেক বড় কারণ রয়েছে, তবুও মন্দার প্রভাব বেশি। বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্যের যে বাড়তি ব্যয় সেটিও কিন্তু এখন দেশের মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। সেটি গ্যাসের ক্ষেত্রে এবং বিদ্যুতের ক্ষেত্রে। এভাবে দফায় দফায় খাদ্যমূল্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার আরও বেড়ে যাবে। শুধু তা-ই নয়, আগামীদিনে হয়তো দেশে কর্মহীনতার হারও বেড়ে যেতে পারে।

মন্দার প্রভাব হাউসহোল্ডের পাশাপাশি শিল্পের উৎপাদন ও শিল্প খাতে কেমন পড়েছে সেদিকে যদি আমরা নজর দিই তা হলে দেখতে পাব-শিল্প খাতও এই যুদ্ধ ও মন্দার একটি বড় ভিকটিম। এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলো খুবই সীমিত আকারে এলসি খুলছে। এতে কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা-যারা আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল তারা কিন্তু তাদের শিল্পের কাঁচামাল পর্যাপ্ত পাচ্ছেন না। পেলেও তাকে অনেক উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। ফলে অনেককেই হয় উপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে, নতুবা অনেককে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে। সুতরাং দেশের শিল্প খাতও এ মন্দার একটি বড় ভিকটিম হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন যেসব উদ্যোগ রয়েছে সেগুলো হয়তো রফতানিমুখী খাতের জন্য কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

আমরা যদি কৃষি খাতের দিকে তাকাই তা হলে দেখতে পাব, গবেষণা পরিচালক-সিপিডিকৃষি খাতে সাম্প্রতিক সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সারের অপ্রাপ্যতা বা সারের সীমিত প্রাপ্যতা। অনেক কৃষক কিন্তু চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ যে সার কারখানাগুলো রয়েছে, বিশেষ করে কর্ণফুলী ও শাহজালাল সার কারখানা। এসব কারখানায় এখন প্রকট গ্যাস সংকট রয়েছে। সম্ভবত এখন কর্ণফুলী সার কারখানা গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। যেহেতু গ্যাসের সংকট এতদিন মেটানো হয়েছে আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে কিন্তু এলএনজি আমদানি করার মতো এখন অর্থ যেহেতু সরকারের হাতে নেই সেহেতু সরকারকে বাধ্য হয়ে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে এই সার কারখানাগুলো বন্ধ করতে হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে সরকার এখন যেটি করছে-সেটি হলো, সরকার সার আমদানি করছে। আমদানিকৃত সার দিয়েই চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে।

এভাবে আমদানি করে কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে দিতে গিয়ে সরকারকে প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরাও মনে করি, খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কৃষককে সব ধরনের সাপোর্ট এখন দিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে যা যা করার দরকার সেটি সরকারকে করতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত সার যদি আমদানি করতে হয় তা হলে সেটি অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোভাবে কৃষিতে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না, বিঘ্ন ঘটলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। আমরা যদি কৃষি খাতের দিকে তাকাই তা হলে দেখতে পাব-কৃষি খাতে সাম্প্রতিক সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সারের অপ্রাপ্যতা বা সারের সীমিত প্রাপ্যতা। অনেক কৃষক কিন্তু চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ যে সার কারখানাগুলো রয়েছে, বিশেষ করে কর্ণফুলী ও শাহজালাল সার কারখানা। এসব কারখানায় এখন প্রকট গ্যাস সংকট রয়েছে। সম্ভবত এখন কর্ণফুলী সার কারখানা গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে।

যেহেতু গ্যাসের সংকট এতদিন মেটানো হয়েছে আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে কিন্তু এলএনজি আমদানি করার মতো এখন অর্থ যেহেতু সরকারের হাতে নেই সেহেতু সরকারকে বাধ্য হয়ে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে এই সার কারখানাগুলো বন্ধ করতে হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে সরকার এখন যেটি করছে-সেটি হলো, সরকার সার আমদানি করছে। আমদানিকৃত সার দিয়েই চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে। এভাবে আমদানি করে কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে দিতে গিয়ে সরকারকে প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরাও মনে করি, খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কৃষককে সব ধরনের সাপোর্ট এখন দিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে যা যা করার দরকার সেটি সরকারকে করতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত সার যদি আমদানি করতে হয় তা হলে সেটি অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোভাবে কৃষিতে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না, বিঘ্ন ঘটলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

এখন নজর দেওয়া যাক-এসব সংকট মোকাবিলায় সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে সেগুলো কি যথার্থ। এ ক্ষেত্রে বলতে হয় এই সংকটকালের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে অব্যাহত রাখার জন্য যে টাকা দরকার বা যে ধরনের আয়-ব্যয় বা আমদানি-রফতানি, বিনিয়োগ, পণ্য সরবরাহ থাকা দরকার সেটি নেই-এটা একটা চরম বাস্তবতা। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্বল্পতা রয়েছে। এ জন্য সীমিত আকারেই সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হচ্ছে। সুতরাং ভিন্ন একটি অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে মাথায় নিয়েই এই মুহূর্তে সরকাকে চলতে হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক যে পরিণতি সেটি হলো-পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি কিছুটা কম থাকবে, পণ্যমূল্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি থাকবে এবং মানুষকে স্বাভাবিক সময়ে তার যে পণ্য চাহিদা থাকে সেটি কমিয়ে আনতে হবে অথবা বিকল্প কোনো উৎস থেকে সে তার খাদ্যের চাহিদা মেটাবে। সুতরাং এই সংকটময় অবস্থায় মানুষকেও কিছুটা ছাড় দিয়ে চলতে হচ্ছে-এটাই চরম বাস্তবতা। এই জায়গায় সরকারের যে উদ্যোগগুলো রয়েছে তার মধ্যে আমরা দুই রকমের উদ্যোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটি হচ্ছে-বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে দেওয়া, বাজারের ডলারের সরবরাহ বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে সেগুলো ডিরেকশন হিসেবে ঠিক আছে তবে, যদি বলা হয় উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত কি না, তা হলে বলব না, পর্যাপ্ত না। যেমন অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ করে বিলাসী পণ্য বা এ ধরনের পণ্য সরকার কম আমদানির কথা বলছে কিন্তু আসলে কি কম আমদানি হচ্ছে। অথচ যে ধরনের পণ্য আমদানি সরকার নিরুৎসাহিত করছে সেগুলো আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে কি না। এ বিষয়গুলো ঠিকমতো মনিটরিং হচ্ছে না।

সরকার মাঝে বলেছিল জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হবে, এখনও বলা হচ্ছে এ ধরনের কথা। কিন্তু এ উদ্যোগ কি আদৌ বাস্তবায়ন করা গেছে, যায়নি। এ ধরনের অনেক ভালো ভালো ঘোষণা কিন্তু এসেছিল, তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। তা ছাড়া বিষয়গুলো সরকারের তরফ থেকে সেভাবে মনিটরিংও করা হয়নি। সুতরাং জ্বালানি সাশ্রয় করা যায়নি বরং উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ব্যবহার আরও বেড়েছে। সুতরাং সরকারি উদ্যোগের এই অংশের ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে-নির্দেশনার দিক থেকে হয়তো ঠিক আছে কিন্তু উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন ঠিকমতো করা যায়নি। এই জায়গাগুলোতে এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে।

সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের জায়গা হচ্ছে-এই সংকটকালে দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি-সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে, খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি, বিজিডি, ওএমএস, ফ্যামিলি কার্ড প্রোগ্রাম-এগুলো বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে। তবে এই কার্যক্রমগুলো আরও বর্ধিত আকারে করা দরকার এবং প্রকৃত অসহায়-দুস্থরা যেন এ সুবিধা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি-এমন অনেকেই এসব সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন, যারা এই সুবিধা ভোগ করার যোগ্য না। অর্থাৎ অনেক সচ্ছল পরিবারও গরিবের এই খাদ্যে ভাগ বসাচ্ছে-এটা কাম্য নয়। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আবার কখনো সরকারের সঙ্গে সংশ্লেষের বিবেচনায় কার্ড দেওয়া হচ্ছে বা ওএমএসের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এই জায়গায় সরকারের নজরদারি বাড়ানো দরকার, যাতে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা সরকারের এসব উদ্যোগের সুফল পায়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আরও বলা প্রয়োজন, সেটি হলো-সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ কিন্তু এখনও প্রায় পুরোটাই শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু মনে রাখা দরকার মূল্যস্ফীতির অভিঘাতের বড় একটি অংশ কিন্ত্র গ্রামীণ মানুষের জীবনেও পড়েছে। এমনকি খাদ্য মূল্যস্ফীতি যেটা দেখা যাচ্ছে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। অর্থাৎ গ্রামীণ মানুষ বা কৃষক পণ্য উৎপাদন করছেন ঠিকই কিন্তু সে পণ্য তিনি ঘরে রাখতে পারছেন না। ফলে কৃষককে পরে আবার সেই পণ্য কিনে খেতে হচ্ছে বেশি দামে। সুতরাং সরকারের খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে আওতা শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বাড়ানোর দরকার আছে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি