রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে ফেরানোটাও জরুরি – ড. মোয়াজ্জেম

Originally posted in Prothom Alo on 5 February 2024

রপ্তানি: ভালো প্রবৃদ্ধিতে বছরের শুরু

জানুয়ারিতে ৫৭২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের এই মাসে ছিল ৫১৪ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৪৫ শতাংশ।

নতুন বছরের শুরুতেই দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বছরের প্রথম মাসে পণ্য রপ্তানিতে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এমন একসময়ে রপ্তানিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হলো, যখন দেশে ডলার–সংকটের কারণে ব্যবসা–বাণিজ্য নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গতকাল রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির সুখবরটি পাওয়া গেছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বাংলাদেশ মোট ৫৭২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৫১৪ কোটি ডলারের চেয়ে ৫৮ কোটি ডলার বা ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি। সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারিতে দেশের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ৪ কোটি ডলারের কম রপ্তানি হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের যে তথ্য, তাতে রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে রপ্তানিতে বেশ ওঠানামা দেখেছি। এ ওঠানামা সামনের মাসগুলোতেও থাকবে বলে ধারণা করা যায়। যদি জানুয়ারি মাসের প্রবৃদ্ধির ধারা আগামী মাসগুলোতেও ধরে রাখা যায়, তাহলে দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, মার্চ–এপ্রিলেও রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় থাকবে। আমরাও সেই প্রত্যাশায় থাকলাম।’

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই–জানুয়ারিতে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৩২৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অবশ্য প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশের কম।

রপ্তানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোশাক খাতে গত সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৭৪২ কোটি ডলার। তবে পোশাকের মধ্যে ভালো অবস্থায় রয়েছে নিটপোশাক রপ্তানি। গত জুলাই–জানুয়ারি সময়ে এ খাতের রপ্তানি দাঁড়ায় ১ হাজার ৬১৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ওভেন পোশাক রপ্তানি এখনো নেতিবাচক ধারায় রয়েছে, তবে গত জুলাই–ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে এসে এ খাতের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। তাতে কমে এসেছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির হার। গত জুলাই–জানুয়ারিতে ১ হাজার ২১৮ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ১ হাজার ২৪৬ কোটি ডলারের তুলনায় ২ দশমিক ২০ শতাংশ কম।

পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর ছিল আমাদের নির্বাচনের বছর। অতীতেও আমরা দেখেছি নির্বাচনের বছরে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়। এটি এবারও ঘটেছে। তা না হলে পোশাক খাতের রপ্তানি আরও বাড়ত। আমরা আশা করছি, নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দূর হয়ে যাওয়ায় আগামী মাসগুলোতে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে।’

পোশাকের পাশাপাশি আরও কয়েকটি খাতে রপ্তানি পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। কোনো কোনো খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির উন্নতি হয়েছে। গত জুলাই–ডিসেম্বরে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানিতে প্রায় সোয়া ১০ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল। জানুয়ারি শেষে তা কমে ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশে নেমেছে। গত জুলাই–জানুয়ারিতে ৫১ কোটি ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৫ কোটি ডলার।

ফুটওয়্যারের রপ্তানি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ফুটওয়্যার খাতের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ২৯ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

কৃষিপণ্য রপ্তানিতেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। গত জুলাই–জানুয়ারি সময়কালে কৃষিপণ্যের রপ্তানি ছিল ৫৭ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৫ কোটি ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হার কমলেও এখনো রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারেনি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত জুলাই–জানুয়ারিতে ৬৩ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৩ কোটি ডলার।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে রপ্তানির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। তবে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, প্রচলিত বাজারের চেয়ে অপ্রচলিত বাজারে বেশ ভালো করছে। যার ফলে সার্বিকভাবে রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে ফেরানোটাও জরুরি। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো জরুরি। সময়মতো রপ্তানি আয় দেশে আনা গেলে তা চলমান ডলার–সংকট কাটাতে সহায়তা করবে।’