রুবলে বাণিজ্যিক লেনদেন আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে বৈচিত্র্য আনবে – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in কালেরকন্ঠ on 25 September 2023

রাশিয়ার সঙ্গে রুবলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ভবিষ্যতে নতুন দ্বার খুলতে পারে। পাশাপাশি ডলারের ওপরও নির্ভরশীলতা কমাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই সম্ভাবনার দ্বার খুলতে শুরুতে প্রয়োজন রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো। ভবিষ্যতে যদি রুবলে বাণিজ্য লেনদেনভুক্ত দেশের সংখ্যা আরো বাড়ে তাহলে এই সম্ভাবনা আরো বাড়াবে।

মূলত গত শনিবার রাশিয়ার মুদ্রাবাজারে রুবলে যেসব ‘বন্ধু ও নিরপেক্ষ’ দেশের ব্যাংক ও ব্রোকার হাউস লেনদেন করতে পারবে তার তালিকা প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সেই তালিকায় বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত আছে। বাংলাদেশসহ ৩০টির বেশি দেশকে রুশ মুদ্রা রুবলে বাণিজ্যের অনুমতি দিয়েছে রাশিয়া সরকার। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন থেকে রুবলে লেনদেন করতে পারবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া ও বাংলাদেশের রুবলে লেনদেনের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়া বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছিল গত অর্থবছরে তা রুবলে পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দিয়েছিল রাশিয়া। তবে চুক্তিতে এমন শর্ত না থাকায় বাংলাদেশ তা রুবলে পরিশোধ করেনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিডিপি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে রুবলে লেনদেন হলে বৈচিত্র্য আসবে।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘রুবলে বাণিজ্যিক লেনদেন আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে বৈচিত্র্য আনবে। সঙ্গে কিছু বিকল্প বাণিজ্য সুবিধাও তৈরি করবে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি খুব বেশি না। আমদানি-রপ্তানি যদি বেশি হতো তাহলে রুবলে লেনদেন আমাদের জন্য সুবিধা হতো।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের রুবলে লেনদেন বাড়াতে হলে শুরুতে বাণিজ্যিক সমঝোতা বাড়াতে হবে।

এই সমঝোতা রাশিয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে রুবলে যে ২৯ দেশ বাণিজ্য করবে তাদের সঙ্গেও বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘রুবলে লেনদেন শুধু বাণিজ্য নয়, বিনিয়োগ এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রকেও বিস্তৃত করবে।’

তবে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, রুবলে লেনদেনে বাংলাদেশের লাভ বা ক্ষতি কী হবে তা বলার সময় এখনো হয়নি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সর্বোচ্চ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতিও কম। ফলে রুবলে লেনদেনে খুব বেশি লাভ হবে বলে আমি মনে করি না।’ তিনি বলেন, রুবল ডলারের ওপর চাপ কমাতে পারত যদি এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা হতো।’

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রাশিয়া ৩০টি দেশকে রুবলে বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এর জন্য যদি তারা একটি জোট গঠন করত তাহলে আলাদা বিষয় ছিল। কিন্তু রুবলে লেনদেনের বিষয়টি অর্থনৈতিক বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক বিষয় বেশি। এর মধ্যে অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি খুব বেশি দেখছি না। তবে এখানে ভূ- রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে।’

এর আগে গত বুধবার রাশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রী আলেক্সি ময়সিভ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, রাশিয়া তার বন্ধুদেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য সামনের দিনগুলোতে রুবলের ব্যবহার আরো বাড়াবে।