স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান ও বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন – এম. সাইদুজ্জামান

Published in বণিকবার্তা on Sunday 7 October 2018

Mr M Syeduzzaman, Member, CPD Board of Trustees

আজকে আমি যে বিষয়টি সম্পর্কে বলব, যার শিরোনাম আপনারা দেখছেন ‘স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান ও বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন’, এ সম্পর্কে বলা এত সহজ নয়; তবু আমি চেষ্টা করব, কারণ এ সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাকে কাজ করতে হয়েছে এবং দেশের একজন সাবেক সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমি আজো এ বিষয়ে চিন্তা করি।

প্রথমেই বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন ছিল রাষ্ট্রের উন্নয়নে সমাজতান্ত্রিক ও সমতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা; যা সংবিধান অনুসারে বাধ্যতামূলক। এ দর্শনের পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা। গ্রামগঞ্জে ঘুরে কৃষক-শ্রমিকের দারিদ্র্য, জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া, হেঁটে-রিকশায়, রেলের তৃতীয় শ্রেণীতে ভ্রমণ করে অর্থনীতির বিভিন্ন অংশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া, কীভাবে তদানীন্তন পূর্ব বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করা যায় এমন একটি পরিস্থিতিতে, যখন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সব কর্মকাণ্ড ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে ও প্রশাসন পদ্ধতিতে পূর্ব বাংলার বলতে গেলে কোনো উপস্থিতি ছিল না। স্বায়ত্তশাসনের তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সশস্ত্র বাহিনী গঠনে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো উপস্থিতি ছিল না বললে ভুল বলা হবে না, হয়তো দু-চারজন ছিলেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পূর্ব বাংলার অসহায়তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবি প্রকাশের মাধ্যমে সমস্যাগুলো ও পূর্ব বাংলার বঞ্চনাকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেন। এরপর ১৯৬৯ সালের আন্দোলন এবং পরবর্তীতে গোলটেবিল বৈঠকের কোনো সুফল না পাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর মনে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি গভীরভাবে উপস্থিত হয়েছিল। অর্থনৈতিক দর্শনের রাজনৈতিক পটভূমি সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

এরপর আমি আসি সত্তরের নির্বাচন ও পূর্ব পাকিস্তানের বিপুল জয়লাভ এবং অসহযোগ আন্দোলনের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা ও অর্থনৈতিক মুক্তির ঘোষণায়। সেই ১৮-১৯ মিনিটের বক্তৃতা, যেটা অলিখিত ছিল, ইউনেস্কোর উদ্যোগে আজ বিশ্বজুড়ে ওয়ার্ল্ড ইউনেস্কো হেরিটেজের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। এটি সত্যিকার অর্থে বাঙালির গৌরব ও স্বাধীনতার ডাকের অতুলনীয় ঐতিহ্য।

এবার আমি বলতে চাই অর্থনৈতিক দর্শনের কথা, যা একটি স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান ও সংবিধানের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে আসে। স্বাধীনতার পরে বহু রাজনৈতিক নেতা দলীয়ভাবে, ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও উন্নয়নের নীতি কী হবে, সে বিষয়ে ঘোষণা ও দাবি প্রকাশে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সময় থেকে অর্থনৈতিক দর্শনের ওপর মূল আলোচনা শুরু হয়। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে কিছু তথ্য। প্রথমত. আওয়ামী লীগ সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে ছিল না, দ্বিতীয়ত. আওয়ামী লীগের ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক সংস্কারের কথা উল্লেখ ছিল।

অর্থনীতিবিদরা সার্বিকভাবেই এসবের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের সঙ্গে দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসের উপায় হিসেবে।

স্বাধীনতার পর কিছু উগ্রবাদী ও বিপ্লববাদী শ্রেণী দলের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে এবং ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’, ‘মুজিববাদ মুজিববাদ’ ইত্যাদি স্লোগান উত্থাপন শুরু করে। সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা সংবিধান অনুমোদিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু ব্যাংক, বীমা ও সব বৃহৎ শিল্প-কারখানাকে রাষ্ট্রীয়করণের ঘোষণা দেন এবং আরো জানান, শিল্প-কারখানার ম্যানেজমেন্ট বোর্ডে ৪০ শতাংশ শ্রমিক থাকবেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিলগ্নীকরণ করা হবে, যার অনেকগুলো পরিত্যক্ত হয়েছে। ভূমি মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার ঘোষণাও দেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান (যেটি সংসদের প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর অনুমোদন করেন) যথার্থ রূপে ও স্পষ্টভাবে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন নির্দেশিত ও প্রতিফলিত করেছিল। সংবিধান প্রণয়নের পর ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরের জন্য তাজউদ্দীন আহমদের বাজেট বক্তৃতায় বিস্তারিত জানানো হয়।

আমাদের সুস্পষ্টভাবে মনে রাখা উচিত স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ পেয়েছিল একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি। অবকাঠামো ছিল দুর্বল, বেশির ভাগ সড়ক, বন্দর, সেতু ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সঙ্গে ছিল বহু বিধ্বস্ত শিল্প-কারখানা ও স্থবির হয়ে থাকা কৃষি খাত। স্বাধীনতার পর ধারাবাহিকভাবে দুবার বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হয়। স্বাধীনতার অব্যাহতি পরেই ১৯৭২-৭৩ সালে বহির্বিশ্বের পরিস্থিতিও ছিল চরম প্রতিকূল। যেমন— বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন গ্রহণ করে ‘স্মিথসোনিয়ান এগ্রিমেন্ট’। এর মানে হলো, গোল্ড থেকে ডলারকে পরিবর্তন করার যে একটা পরিমিত সমীকরণ (ইকুয়েশন) ছিল, সেটাকে বাদ দিয়ে দেয়া। ফলে যেটা হলো, ৩ ডলারের তেলের ব্যারেল হয়ে গেল ১১ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৮০ ডলার করে আমরা যে গম কিনতাম, সেটা হয়ে গেল ২৪০ ডলার (প্রতি টন)। আমরা সার কিনতাম প্রতি টন ৮০ ডলার করে, সেটা হয়ে গেল ২০০ ডলার। পুরো বিশ্বে এবং উন্নত অর্থনীতিগুলোর অনেকগুলোয় আন্তর্জাতিকভাবে নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি দেখা দিল। বঙ্গবন্ধু সরকার ও পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দিলেন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রিলিফের জন্য খাদ্য সরবরাহে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য এবং পুনর্গঠন ও উন্নয়নে মধ্যম মেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে।

পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন ড. নুরুল ইসলাম। অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসাইন ও অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান সদস্য ছিলেন। এদের ওপর দায়িত্ব ছিল পরিকল্পনা কমিশন সংগঠিত করা এবং নিজেদের সর্বোচ্চ বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা তৈরি করা। ১৯৭৩ সালের ২ মার্চ পাকিস্তান থেকে পালিয়ে প্রত্যাবর্তনের পর আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনের সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ইএডির (ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন) সচিব পদে কিন্তু বাস্তবে পরিকল্পনা কমিশনের সব বিভাগের সঙ্গেই আমাকে কাজ করতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের কিছু মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল— প্রথমত. স্ব-নির্ভরতা, যতটা সম্ভব দেশের সম্পদ ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত. বিদেশ ও দাতাদের কাছ থেকে শর্তহীন অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে স্বাগত জানানো এবং ক্রমান্বয়ে এ ধরনের নির্ভরতা হ্রাস করা। তৃতীয়ত. ১৯৭৪ সালের শুরুতেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়। কাজেই বেসরকারি খাতকে বঙ্গবন্ধু উপেক্ষা করেছেন, এটা কখনো বলা যাবে না।

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল বিষয়গুলো আমি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর তারিখের সংবিধান থেকে উদ্ধৃত করব। বাংলাদেশের সংবিধান, যেটা পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়েছিল। এসব নীতি ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরের জন্য তাজউদ্দীন আহমদের বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করা হয়, যা আমি আগেই বলেছি। পরে আমি সংবিধানের কিছু আর্টিকেল নিয়ে আলোচনা করব। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, জনগণকে প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো জনগণের প্রতি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি বিষয়টি স্বচ্ছ করতে চেয়েছিলেন এবং জনগণকে জানাতে চেয়েছিলেন দেশে কী ধরনের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটছে। তিনি পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেটের সঙ্গে অর্থনৈতিক পর্যালোচনা নথি (ইকোনমিক রিভিউ ডকুমেন্ট) প্রকাশ করতে।

বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে যদি বলতে চাই, তাহলে বলতে হবে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি সম্পর্কে। এখনো বিনিয়োগে (সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ) অনেক দুর্বলতা রয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রচেষ্টা চলছে। অনেকভাবেই সফল হয়েছে, যদিও প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিভেদ প্রতিদিনই খবরের কাগজে ও বিভিন্ন মিডিয়ায় উঠে আসছে। দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের সামাজিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রোগ্রাম দিয়ে সেগুলো বর্তমান সরকার মোকাবেলা করতে সচেষ্ট রয়েছে। নির্ভরযোগ্য আইনি পদ্ধতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এখনো সম্পূর্ণভাবে আমরা দেখতে অপেক্ষা করছি।

বঙ্গবন্ধুর সময়ে ব্যাংকসহ তত্কালীন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-কারখানা রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়, যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়, চারটি ছিল বিশেষায়িত ব্যাংক— বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্পোন্নয়ন সংস্থা ও হাউজ বিল্ডিং করপোরেশন। দাতারা শুধু রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা দিয়েছিল। এখানে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা আমাদের মনে এসে যায়।

বাংলাদেশ কোনো উন্নয়ন ঋণের দাবি গ্রহণ করেনি, যা পাকিস্তান দাবি করেছিল। ‘এইড টু পাকিস্তান কনসোর্টিয়াম’-এর সদস্যদের দাবির বিপরীতে বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে বলেছিল, ‘না।’ বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করেছিল যে আমাদের কোনো দেনা নেই। কারণ আমরা কোনো উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র নই এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার কোনো দাতার কাছ থেকে সরাসরি ঋণ গ্রহণ করেনি। কিছু নির্দিষ্ট শর্তে পাকিস্তান সরকার দাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল এবং ভিন্ন শর্তে ও অনেক বেশি কঠিন শর্তে এ ঋণের কিছুটা বাংলাদেশকে (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) দিয়েছিল। বিভিন্নভাবে এগুলো আমাকে যুক্তিসঙ্গত করতে হয়েছে সরকারের পূর্ণ সম্মতি নিয়ে।

সাবেক ‘পাকিস্তান কনসোর্টিয়াম অব ডোনারস’-এর সদস্যরা ১৯৭৩ সালের মার্চে ঢাকায় বৈঠক করেন। আইনি ও তথ্যমূলক যুক্তিগুলো একই ছিল, আমরা আইনত উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র ছিলাম না এবং তাই আমরা কোনো ঋণের জন্য দায়ী নই। ওই সময় পিটার কারগিল ছিলেন বিশ্বব্যাংক এশিয়ার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট।

বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চান এবং আমরা সে ব্যবস্থা করে দেই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন ড. নুরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন ও ইএডির সচিব হিসেবে আমি। যখন ওখানে আমরা ছিলাম, আলোচনা করছিলাম, পিটার কারগিল বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দাতাদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানালে আপনার জনগণ কী খাবে।’ বঙ্গবন্ধু পাইপ হাতে নিয়ে উঠে তাকে বললেন, ‘আমার সঙ্গে আসুন’, বলে জানালার কাছে নিয়ে গেলেন, দেখালেন এবং বললেন, ‘আপনি নিচে কী দেখতে পাচ্ছেন? আপনি বাইরে কী দেখতে পাচ্ছেন?’ কারগিল বললেন, ‘সবুজ ঘাসের একটি সুন্দর উঠোন।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘যদি আপনারা কোনো ধরনের সহায়তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তবে আমার জনগণ এগুলো খাবে।’

কারগিল চলে গেলেন, আমরা তখন সিঁড়ি দিয়ে নামছি। আমরা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছি, তখন হঠাৎ বঙ্গবন্ধু পেছন দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই সইদুজ্জামান (আমাকে সবসময় তিনি এ নামেই ডাকতেন, ‘সাইদুজ্জামান’ বলতে কখনো শুনিনি) এই যে কথাগুলো ওরা বলল, তা কতটুকু সত্য? যে প্রকল্পগুলোর কথা বলল, এগুলো থেকে আমরা কি কোনো উপকার পাচ্ছি? যেসব প্রকল্প ওদের টাকায় হয়েছিল, সেগুলোর কি অস্তিত্ব আছে? এবং থাকলে কী অবস্থায় আছে।” আমি বললাম, স্যার, কিছু প্রকল্প আছে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে টিকে আছে, যেগুলো থেকে মানুষ এখনো উপকার পাচ্ছে। কিছু প্রকল্প আছে যেগুলো যুদ্ধের সময় ভেঙে গিয়েছিল, ধ্বংস হয়েছিল সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে, সেগুলো পুনর্নির্মাণ করার টাকা যদি ওরা দেয়, তাহলে ভালো হবে। আর কতগুলো নতুন প্রকল্পও আমাদের দরকার অবকাঠামো, পরিবহন, বন্দর খাতে। এগুলোর জন্য আমাদের অর্থ প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘শোনো, এক কাজ করো, ওই সমস্ত প্রকল্প, যেগুলো থেকে আমাদের লোক উপকার পাচ্ছে, সেগুলোর দায়িত্ব আমরা নেব; যে সমস্ত তুমি বললে যে পুনর্নির্মাণ করার দরকার আছে, সেগুলোকে আবার পুনর্নির্মাণ করতে হবে, ওই সমস্ত প্রকল্পের ও যেগুলো নতুন করে করতে হবে সেগুলোর একটা তালিকা করে পরিকল্পনা কমিশন থেকে তোমরা আমাকে দাও। এবং দেখো, তুমি হিসাব করো, কত টাকা আমাদের দিতে হতে পারে এবং আরো কত টাকা আমাদের দরকার।’

বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের অংশ ছিল, তাদের হিসাবে পাকিস্তান দাতাদের কাছ থেকে নিয়ে যে অর্থ সাহায্য বাংলাদেশে ব্যয় করেছিল, তার জন্য ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ডলার তারা দাবি করল। এ বিষয়টি মধ্যস্থতা বা দরাদরি করার জন্য আমাকে বঙ্গবন্ধু নিয়োগ করলেন ‘চিফ নেগোশিয়েটর’ হিসেবে। বিষয়টি মধ্যস্থতা করার জন্য ঢাকা ছাড়াও আমাকে ওয়াশিংটন, লন্ডন, প্যারিস এমনকি চেকোস্লোভাকিয়ায়ও যেতে হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি মধ্যস্থতা সম্পূর্ণ হয় এবং সরকারের পরামর্শ ও সময় সময় অনুমোদন নিয়ে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ডলারের দাবি মাত্র ৪০০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনতে আমি সফল হই (কীভাবে এটা করতে পেরেছিলাম এর বিস্তৃত বিবরণ অন্য জায়গায় আছে)। আইডিএ শর্তানুসারে (যা ওই সময় সম্ভাব্য শিথিলতম শর্ত ছিল) আমরা এই পরিমাণ সাহায্যের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। আমরা রাজি হলাম একটি নতুন সংস্থা গঠন করতে— বাংলাদেশ এইড গ্রুপ।

১৯৭৪ সালের অক্টোবরে এর একটি সভা হয় প্যারিসে, ১৯৭৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয়বার। কোনো এক আর্থিক বছরে এ ধরনের একাধিক মিটিং সেটাই প্রথম। প্রথমবার দাতাদের কাছ থেকে আমরা পেলাম ৮০০ মিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয়বার পেলাম ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ডলার। এক বছরে দুবার বাংলাদেশ এইড গ্রুপের বৈঠক হওয়া ছিল এক অনন্য বিষয়, অন্য কোনো দেশের জন্য এমনটা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

সমঝোতায় পৌঁছানোর পর দেশে ও দেশের বাইরের সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে হিসাব করে ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের প্রয়োজনীয় অংক উপস্থাপন করেছিলাম। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল:

আপনার সরকার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে, এখন আপনার এক নম্বর অগ্রাধিকার কী হবে? বঙ্গবন্ধু জবাব দিয়েছিলেন, “আমার কাছে এক নম্বর কোনো অগ্রাধিকার নেই; আমার কাছে ‘যৌথ এক নম্বর’ অগ্রাধিকার রয়েছে, সেটা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।”

এরপর আলোচনার মাধ্যমে যে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটা ছিল বাংলাদেশের নিজ মুদ্রার অবমূল্যায়নে সম্মত হওয়া। কারণ স্বাধীনতার পরপর ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান ছিল ৭ দশমিক ৫০ এবং ভারতের রুপির মানও একই ছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালের ওই চুক্তির পরে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতির বিবেচনা করে তখন আমরা রাজি হলাম মুদ্রার অবমূল্যায়নে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান ১২ দশমিক ৫৮ করতে। এটি মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে অনুমোদিত হয়।

এখন সংবিধানে যে কথাগুলো বলা আছে, সেগুলো সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই, যেটি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, ‘তোমরা সংবিধান গঠন করার জন্য অপেক্ষা করো, দেখবে কী হবে আমার অর্থনৈতিক দর্শন।’ সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে দুটি প্যারা উপস্থাপন করছি:

We the people of Bangladesh, having proclaimed our Independence on the 26th day of March 1971 and a historic war for national independence, established the independent, sovereign People’s Republic of Bangladesh.

Further pledging, that it shall be a fundamental aim of the state to realize through the democratic process, a socialist society, free from exploitation- a society in which the rule of law, fundamental human rights and freedom, equality and justice, political, economic and social, will be secured for all citizens;

এটা হচ্ছে প্রস্তাবনা থেকে। এরপর কতগুলো আর্টিকেল আছে যেগুলোয় তিনি অর্থনৈতিক দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে বলে গেছেন। সেগুলো আর্টিকেল ৮ থেকে শুরু করে আর্টিকেল ২০ পর্যন্ত দেয়া আছে। ৮ নম্বরে বলা আছে, The principles of Nationalism, Socialism, Democracy and Secularism, together with the principles derived from them as set out in this part, shall constitute the fundamental principles of state policy.

আর্টিকেল ১০ – The social economic system will be established with the view to ensuring the attainment of a just and egalitarian society free from exploitation of men by men. (This is what actually was meant by Socialism and Freedom from exploitation)

আর্টিকেল ১৩— The people shall own or control the instruments and means of production and distribution, and with this end in view, ownership shall assume the following forms ~ (a) State ownership, that is ownership by the state on behalf of the people through the creation of an efficient and dynamic National Public Sector, embracing the key sectors of the economy; (b) Cooperative ownership, that is, ownership by cooperatives on behalf of their members within such limits, as may be prescribed by law; and (c) Private ownership, that is ownership by individuals within such limits as may be prescribed by law.

বেসরকারি খাতকে অবহেলা করা বঙ্গবন্ধুর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তাই যেটা আমি আগেও বলেছি, ১৯৭২ সালে বেসরকারি বিনিয়োগকারীর মালিকানায় সীমা, যা ছিল ২৫ লাখ টাকা, সেটা ১৯৭৪ সালে ৩ কোটিতে উন্নীত করা হয়, যাতে বেসরকারি খাত অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যোগদান করতে পারে।

আর্টিকেল ১৪— It shall be a fundamental responsibility of the state to emancipate the toiling masses, the peasants, and workers, and backward sections of the people, from all forms of exploitation.

আর্টিকেল ১৫— It shall be a fundamental responsibility of the state to attain, through planned economic growth, a constant increase of productive forces and a steady improvement in the material and cultural standard of living of the people, with a view to securing to its citizens- (a) the provision of the basic necessities of life, including food, clothing, shelter, education and medical care; (b) the right to work, that is the right to guaranteed employment, at a reasonable wage having regard to the quantity and quality of work.

বর্তমান সরকার এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ও দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা এখনো তা সম্পূর্ণভাবে করে উঠতে পারিনি। দারিদ্র্যের হার ১৯৭২ সালের ৭২ শতাংশ থেকে কমে এখন ২৪ শতাংশ/২২ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে হতদরিদ্র আছে প্রায় ৯ শতাংশ, যাদের জন্য এখন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণ সুফল বয়ে আনতে পারেনি। কারণ এর মধ্যে অনেক ফাঁকিঝুঁকি ধরা পড়ছে। যাদের পাওয়ার কথা, তারা পাচ্ছে না কিন্তু যাদের পাওয়ার কথা না, তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আর্টিকেল ১৫-তে আরো বলা আছে, ‘The right to social security, that is to say, to public assistance in cases of want arising from unemployment, illness, or disablement, or suffering widows, and elderly, in old age, or other such cases.’

বর্তমান সরকারও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবস্থা করেছে, যেটা বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছিলেন। অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে এবং হচ্ছে।

আর্টিকেল ১৬— The state shall adopt effective measures to bring about a radical transformation in the rural areas through the promotion of an agriculture revolution, the provision of rural electrification, the development of cottage and other industries, and the improvement of education, communications and public health, in those areas, so as progressively to remove the disparity in the standards of living between the urban and the rural areas. বর্তমানেও এসব সমস্যা বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য এসব সমস্যার সমাধান, যা আমি আগে উল্লেখ করেছি।

গ্রামীণ ঋণের জন্য বঙ্গবন্ধু সমন্বিত গ্রামীণ উন্নয়ন প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছিলেন, যে ধারণাটি মূলত প্রয়াত আখতার হামিদ খান কুমিল্লায় প্রথম প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

খাদ্যনিরাপত্তা, মানব উন্নয়ন, কাজের স্বাধীনতা— এই যে কথাগুলো বঙ্গবন্ধু সংবিধানে বলেছেন, বহু বছর পর অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও ড. মাহাবুবুল হক ইউএনডিপির মাধ্যমে এ বিষয়গুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। এগুলো সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কত আগে চিন্তা করেছেন আপনারা ভেবে দেখুন। আর্টিকেল ১৭— The state shall adopt effective measures for the purpose of – (a) establishing a uniform, mass oriented and universal system of education and extending free and compulsory education to all children to such stage as may be determined by law.

আমরা আগেই বলেছি বঙ্গবন্ধুর সময় ৩০ শতাংশ প্রাথমিক স্কুল সরকারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কিন্তু এখনো মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে বর্তমান সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে আমরা সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতা দূর করতে পারি।

আর্টিকেল ১৮— The state shall regard the raising of the level of nutrition and the improvement of public health as among its primary duties.

আজ আমরা শুনতে পাই এমডিজি, এসডিজি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদির কথা। এই যে কথাগুলো আছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য ১৭টি গোল, ১৭৯টি টার্গেট, আরো বেশকিছু বাস্তব অর্জন, যেগুলো সম্পর্কে আজ সারা বিশ্বের চিন্তা হচ্ছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য নির্মূল এবং কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না; এ কথাটা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই বুঝতে পেরেছিলেন। লক্ষ করুন, পুষ্টির কথা, যেটা এসডিজির অগ্রাধিকার অনুসারে দুই নম্বরে রয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেটি ১৯৭২ সালেই বলে গিয়েছিলেন।

আর্টিকেল ১৯— The state shall endeavor to ensure equality of opportunity to all citizens.

অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ সালে এ বিষয়গুলো উন্নয়নের মূলধারা হিসেবে প্রকাশ করেন এবং ঢাকা এসে সে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

সর্বশেষে আমি বলব আর্টিকেল ২০-এর কথা— ‘Work is a right, a duty and matter of honor for every citizen, who is capable of working and everyone, should be paid for his work on the basis of the principle, from each according to his ability to each according to his work.’

এখানেও প্রতিবন্ধীদের জন্য বলা আছে বলে আমি মনে করি। আমরা এখনো সম্পূর্ণরূপে তা করতে পারিনি। উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত: সুশাসন ও দুর্নীতি হ্রাস, উন্নয়নের জন্য সম্পদ সংগ্রহ। এটাই বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথা।

১৯৭৫ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বাড়তে শুরু করল, কারণ আমরা যে সাহায্য পেয়েছিলাম তার সদ্ব্যবহার করতে পেরেছিলাম। জনগণ সক্রিয় ছিল, একটি স্বাধীন দেশ ও এর উন্নতির দিকে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। কৃষি উৎপাদন ও রফতানি বাড়ছিল, বৈদেশিক সাহায্যের সঠিক ব্যবহার বাড়ছিল, মূল্যস্ফীতি কমে আসছিল। ১৯৭২ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ২০ শতাংশ, যা ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সালে বেড়ে হয়েছিল ৬০ শতাংশ, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে কমে হয়েছিল ৩৫ শতাংশ। এবং ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সেটা আরো কমে এসেছিল। সত্যি কথা বলতে, আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল।

১৯৭৫ সালে মে মাসের শেষ দিকে জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর সরকারপ্রধানদের বৈঠকে বঙ্গবন্ধু এসব তথ্য তুলে ধরেছিলেন। আমি সেই মিটিংয়ে ছিলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, বঙ্গবন্ধু যেখানে এ কথাগুলো বলেছিলেন এবং সবাইকে প্রশংসা করে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাদের সহায়তা করেছিলে বলে আমরা আজকে এগিয়ে যাচ্ছি, এভাবে এগোচ্ছি।’ কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কা ও দুর্ভাগ্য যে সবকিছুর দুঃখজনক পরিণতি ঘটল ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট, যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।