বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত : সমস্যা ও করণীয় – ফাহমিদা খাতুন

Published in আমাদের অর্থনীতি on Wednesday 11 December 2018

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত : সমস্যা ও করণীয় – ফাহমিদা খাতুন

গত কয়েক বছরে দেশে ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। তবে দুর্নীতি, অনিয়ম ও আত্মসাতের মতো ঘটনায় খাতটি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর এ বিষয়গুলো ব্যাংকের সামগ্রিক কাজ ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ খাতের ধারাবাহিক অবনতি এবং এর ফলে যে পরিণতি হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো বারবার উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত ব্যাংক নির্ভর হওয়ায়, ব্যাংকের নাজুক অবস্থা প্রভাব ফেলবে সমগ্র অর্থনীতির গতির ওপর। যে কারণে সমস্যার সমাধান খুবই জরুরি। এনিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, এখন সবচেয়ে জরুরি সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। পরবর্তী সরকারের উচিৎ হবে ব্যাংকিং সেক্টরের ত্রুটি সংশোধনে জোর দেয়া।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে চায় সিপিডি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি দেশের ব্যাংকগুলোকে যে পরিমান মূলধন জমা রাখতে হয়, তা তারা রাখছে না। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো এ নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রায় ধরাশায়ী। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমান মোট ঋণের সমান। গত জুন মাসে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর অনাদায়যোগ্য ঋণের হার ২৮.২%, যা গত দশ বছরে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অনাদায়যোগ্য এই ঋণের ৪৭ শতাংশ দিয়েছিলো পাঁচটি ব্যাংক। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত নয়টি ব্যাংক থেকে বিশেষায়িত ঋণ দেয়া হয়েছে ১০% বেশি। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে আয়ের চেয়ে খরচ ছিলো ০.৫% বেশি। যেটা এসব ব্যাংকে ওই সময়ে ব্যবস্থাপনার দূর্বলতাই প্রকাশ করে। সম্পদ ফিরিয়ে আনার সক্ষমতা- রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) এবং রিটার্ন অন ইকুয়িটি (আরওই) সব ব্যাংকের ক্ষেত্রেই কমেছে। এবছরের জুনে আরওএ এবং আরওই হার ছিলো যথাক্রমে ০.৩% ও ৫.৩%। অগ্রীম আমানত অনুপাতের(এডিআর) ওঠানামা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এখানেও গত কয়েক বছরে কিছু ব্যাংকের তারল্য বিষয়ক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ছিলো। তারল্য নিয়ে ব্যাংকিং খাত দুটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, তা হলো কিছু ক্ষেত্রে তারল্য সংকট অন্যদিকে তারল্যের উদ্বৃত্তি। যেগুলোকে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক বলা হচ্ছে সেই ফারমার্স ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংক ২০১৬-২০১৭ সালে তারল্য সংকটে পড়ে। ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা এতটাই তীব্র হয় যে, সেখানে সরকারের সরাসরি সহযোগিতা করতে হয়। এবছরের মে মাসে চারটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭৬৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনার চুক্তি করে ফারমার্স ব্যাংকের সাথে।

লেখক : ড. ফাহমিদা খাতুন, সেন্টার ফর পলেসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক