অভিবাসন খাতের উন্নয়নে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিরসন ও সমন্বিত কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন

Presentation | Photo Album | Video ( 1 , 2)

বাংলাদেশের উন্নয়নে দৃশ্যমান ও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে অভিবাসন খাত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশের প্রবাসী কর্মজীবীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে গতিশীল হচ্ছে অর্থনীতি। সেই সাথে, অবৈধ পন্থায় বিদেশগমন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, অদক্ষ জনশক্তি, অসচেতনতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জড়িয়ে আছে সম্ভাবনাময় এই খাত। বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত বিশ্বরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির সাথে দেশের অভিবাসন খাতের মানিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত কূটনৈতিক পদক্ষেপ। কারিগরি ও ভাষাগত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরী।

গত ররিবার ৬ মে ২০১৮ সিলেটে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে এসব পরামর্শ ও বক্তব্য উঠে আসে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ ও ব্র্যাক-এর যৌথ আয়োজনে “বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডার আলোকে অভিবাসন চ্যালেঞ্জঃ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ” শীর্ষক এই সংলাপ আয়োজিত হয়। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে তিনি বাংলাদেশের অভিবাসনখাতের বর্তমান অবস্থা, প্রয়োজনীয় নীতিকাঠামো এবং বিদ্যমান সমস্যাসমূহ ও সমাধানে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশগুলোর মাঝে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। বর্তমানে, দেশের শ্রমবাজারে যে পরিমাণ জনসংখ্যা প্রবেশ করছে, তার চার ভাগের এক ভাগই কর্মের উদ্দেশ্যে প্রবাসে গমন করছে। বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মজীবীরা সবচেয়ে বেশী যাচ্ছেন সৌদি আরবে এবং অন্যান্য মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে। এর পাশাপাশি পূর্ব-এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও বাংলাদেশী কর্মজীবীগন যাচ্ছেন।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করেন। এগুলো হলো, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও  উচ্চ খরচ, কারিগরি ও ভাষাগত অদক্ষতা, রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে উচ্চহারে ফী, দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে টেকসই বিনিয়োগ না করা, প্রবাসী কর্মজীবীদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা এবং নির্যাতন বা অন্যান্য কারণে দেশে ফিরে আসার পর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্তি।

তিনি আরো বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করতে হলে এসকল সমস্যার সমাধান জরুরী।  অভিবাসন খাতের সাথে অভীষ্ট ৮ (শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) এবং অভীষ্ট ১০ (অসমতা হ্রাস) সরাসরি জড়িত। এছাড়াও অভিবাসনখাতের সাথে অভীষ্ট ১, অভীষ্ট ৩, অভীষ্ট ৪, অভীষ্ট ৫, অভীষ্ট ১৩, অভীষ্ট ১৬ এবং অভীষ্ট ১৭-এর প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত। এসকল সমস্যা সমাধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় বিদেশগামীদের কারিগরি ও ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

সংলাপে দুবাই থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা একজন নারীকর্মী তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বিভিন্ন প্রলোভন ও প্রতারনা থেকে রক্ষা পেতে তিনি বিদেশগামী কর্মজীবীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ প্রদান করেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান, এমপি, সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, দেশের অভিবাসন খাতের সমস্যাসমূহের সমাধানে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেই সাথে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে প্রবাসী কর্মজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকার মনোনিবেশ করেছে বলে তিনি জানান।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের মানুষ এখন রেমিট্যান্সের টাকায় শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ নয় বরং টেকসই বিনিয়োগের দিকে আগ্রহী হচ্ছে। আগে শুধু কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশে গমন করলেও এখন বিভিন্ন দেশে ব্যবসা প্রসারেও সিলেট অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখছে। এসকল কাজের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সিলেটের অবদান অব্যাহত থাকবে।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব কে এম আব্দুস সালাম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অভিবাসন খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায় এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারপারসন ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী। সংলাপে প্রবাসী কর্মজীবীদের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সমাজকর্মী এবং সাংবাদিকসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।